ময়দায় ভেসে উঠছে প্রখ্যাতদের ছবি
আহসান হাবীব নীলু, কুড়িগ্রাম
প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ১০:০৩ এএম
কালো কাপড়ে হাতে করা পেন্সিলের স্কেচে ময়দা ছুড়ে ফুটিয়ে তুলছেন বিখ্যাত ব্যক্তিদের অবয়ব। দেশের প্রধানমন্ত্রী, প্রিয় খেলোয়াড়সহ স্বনামধন্য বিভিন্ন ব্যক্তির ছবি ময়দা আর হাতের কারিশমায় ফুটিয়ে তুলছেন কুড়িগ্রামের জসিম উদ্দিন। তার এমন অবাক করা হাতের কাজ দেখতে প্রতিদিন স্থানীয় মানুষজন চোখ রাখছেন জসিমের কালো কাপড়ের ক্যানভাসে।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই বিখ্যাতদের ছবি এঁকে সারা ফেলেছেন কুড়িগ্রামের রৌমারীর ব্রহ্মপুত্রের প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের স-মিল মিস্ত্রি জসিম উদ্দিন। অভিনব কায়দায় ময়দা ছুড়ে তার ছবি আঁকার প্রতিভা দেখে অভিভূত শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা। তারা বলছেন, উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা জসিম উদ্দিন হয়ে উঠতে পারেন একজন বড় মাপের চিত্রশিল্পী।
সরেজমিন দেখা গেছে, জসিম একের পর এক ময়দা ছুড়ছেন কালো কাপড়ের ক্যানভাসে। আর তার হাতের কারিশমায় তাতে স্পষ্ট হয়ে উঠছে বিখ্যাতদের অবয়ব। চরাঞ্চলের একটি কলেজ ভবনের সামনে এভাবে ছবি আঁকতে দেখতে ভিড় করছেন শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় বিভিন্ন বয়সের মানুষজন।
রৌমারীর চরশৌলমারীর কলেজ পাড়ার গোলাম হোসেন ও মহিলা বেগম দম্পতির বড় ছেলে জসিম উদ্দিন পেশায় একজন স’মিল শ্রমিক। স’মিলে অন্য শ্রমিকদের সঙ্গে গাছ কাটার ফাঁকে ফাঁকে তিনি ছবি আঁকেন। প্রথমে তিনি কাঠের ফ্রেমে লাগানো কালো কাপড়ে বিখ্যাতদের স্কেস তৈরি করেন। এরপরে সেই স্কেসের ওপর গাম লাগিয়ে পানিতে ধুয়ে কিছুটা শুকিয়ে নেন। তারপর কালো কাপড়ের সেই স্কেসে ময়দা ছুড়ে দিয়েই ফুটিয়ে তোলেন স্পষ্ট ছবি। এভাবেই স্থানীয় কলেজ ও বিদ্যালয়ের দেওয়ালে এঁকেছেন কবি নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, মেসি, সাকিব আল হাসানসহ দেশ ও সারাবিশ্বের নাম করা ব্যক্তিদের ছবি।
জসিম জানান, পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় আর্টের নেশায় তাকে পেয়ে বসে। তিনি আঁকতে শুরু করেন। তখন থেকে বন্ধুবান্ধব স্বজন শিক্ষক সবাই তার আঁকা ছবির প্রশংসা করতেন। অভাবের কারণে এসএসসি পাশের পর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেলেও ছবি আঁকার কাজ বন্ধ করেননি। সারাদিন কাজ শেষে বিকেলের অবসর সময়ে তিনি ছবি আঁকেন। ছবি আঁকার ওপর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পেলে তিনি ভালো কিছু করতে পারবেন-এমনটা আশা তার পরিবারের।
জসিমের বাবা গোলাম হোসেন বলেন, সংসারে অভাবের কারণে এসএসসির পর আর লেখা পড়া করাতে পারিনি। যদি কেউ সহযোগিতা করত, তাহলে আমার ছেলের স্বপ্নটা পূরণ হতো। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া জাফরিন বলেন, জসিম ভাইয়া অনেক সুন্দর ছবি আঁকেন। আমাদের বিদ্যালয়ের দেওয়ালের চার পাশে তার আঁকা ছবি দেখে সবাই বিমোহিত।
চরশৌলমারী বহুমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান শিকদার বলেন, জসিম উদ্দিন আমার প্রতিবেশী। ছোটবেলা থেকে সে ভালো ভালো ছবি আঁকতে পারে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পেলে জসিম চিত্রশিল্পে বেশ ভালো করত। দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনত।