ফাঁসির আসামি পালানোয় তোলপাড়, নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন
বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৪, ০১:৫৩ এএম
বগুড়া জেলা কারাগারের কনডেম সেলের ছাদ ফুটো করে চার ফাঁসির আসামির পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। এ ঘটনায় কারাগারের দুর্বল অবকাঠামো ও কর্মকর্তাদের অবহেলার বিষয়টি বেশি আলোচিত হচ্ছে।
ছাদ ফুটো করে চার ফাঁসির আসামির পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় আটজনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ডেপুটি জেলারসহ পাঁচজনকে সাময়িক বরখাস্ত এবং তিনজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। এছাড়া জেলে থাকা সাজাপ্রাপ্ত দুর্ধর্ষ আসামিদের রাজশাহীসহ দেশের অন্য জেলে স্থানান্তর চলছে।
জেলা প্রশাসক ও কারা অধিদপ্তরের গঠিত পৃথক কমিটি শুক্রবার দ্বিতীয় দিন তদন্ত করেছে। কারাগারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে, জেল পালানোর ঘটনায় করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর ফাঁড়ির পরিদর্শক সুজন মিয়া জানান, তিনি কারাগারের ভেতরে ও বাইরে তদন্ত করছেন। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় ছবি সংগ্রহ করেছেন।
সাময়িক বরখাস্তরা হলেন- ডেপুটি জেলার মো. হোসেনুজ্জামান, সর্বপ্রধান কারারক্ষী ফরিদ উদ্দিন, দুই প্রধান কারারক্ষী দুলাল মিয়া ও আবদুল মতিন এবং কারারক্ষী আরিফুল ইসলাম। এছাড়া বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে প্রধান কারারক্ষী আমিনুল ইসলাম, সহকারী প্রধান কারারক্ষী সাইদুর রহমান এবং কারারক্ষী রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে।
১৮৮৩ সালে বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলা এলাকায় চুন ও সুরকির গাঁথুনি দিয়ে জেলা কারাগার নির্মাণ করা হয়। জেলখানার আশপাশে অনেক সুউচ্চ ভবন নির্মাণ করা হলেও কেউ বাধা দেয়নি। গত বছরের ১৯ অক্টোবর বগুড়া কারাগার চত্বরে একরামুল হক নামে এক রক্ষীর লাশ উদ্ধার, জেলে উচ্চবিত্ত হাজতি বা কয়েদিদের অসুস্থতার অজুহাতে জেল হাসপাতালে রাখা, বাইরের খাবার ও মাদক সরবরাহসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ আছে।
২০১৭ সালে বগুড়া কারাগারে থাকা ছাত্রী ধর্ষণ, মাসহ ছাত্রীকে ন্যাড়া করে দেওয়া মামলার প্রধান আসামি শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকারকে দর্শনার্থী কক্ষে স্যালাইনের পাইপ দিয়ে ফেনসিডিল সেবন করানোর অভিযোগ উঠে। তার লোকজন দক্ষিণ পাশ দিয়ে ফেনসিডিলের বোতল জেলের ভেতরে নিক্ষেপ করে। কারারক্ষীরা ওইসব বোতল কুড়িয়ে তুফানের কাছে পৌঁছে দেন।
পত্রিকায় খবর প্রকাশ হলে তুফানকে বগুড়া থেকে কাশিমপুর কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। এছাড়া ধর্ষণের শিকার ওই তরুণীর সঙ্গে কারাগারে তুফান সরকারের সাক্ষাৎ করানোর সুযোগ দেওয়ার অভিযোগ উঠে সাবেক জেল সুপারের বিরুদ্ধে। এছাড়া অনেক প্রভাবশালী হাজতির কাছে মদের বোতল, ভাতের মধ্যে নেশাদ্রব্য পাঠানোর অভিযোগও রয়েছে।
সবশেষ ২৫ জুন রাত ৩টা ৫৫ মিনিটে ছিদ্র করে ফাঁসির চার আসামির পলায়নের বিষয়টি নতুন করে ব্যাপক আলোচনায়। তারা সেলের বাথরুমের বালতির লোহার হাতল দিয়ে এক মাসের চেষ্টায় ছাদ ছিদ্র করতে সক্ষম হয়। কিন্তু জেল কর্তৃপক্ষের কেউ টের না পাওয়ায় নানা রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। যদিও রাত ৪টা ৫ মিনিটে শহরের চেলোপাড়ার চাষিবাজার এলাকার জনগণ তাদের আটক করে পুলিশে দেন।
এরা হলো- কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার দিয়াডাঙ্গা গ্রামের নজরুল ইসলাম মঞ্জুর (৬০), নরসিংদীর মাধবদী উপজেলার ফজরকান্দি গ্রামের আমির হোসেন (৩৮), বগুড়া সদরের কুটুরবাড়ি পশ্চিমপাড়ার ফরিদ শেখ (২৮) এবং বগুড়ার কাহালু উপজেলার উলট পূর্বপাড়ার বাসিন্দা মো. জাকারিয়া (৩১)। এদের বিরুদ্ধে জেলার ফরিদুর রহমান রুবেল সদর থানায় মামলা করেছেন।
এদিকে, ফাঁসির আসামি পালিয়ে যাওয়ায় কারাগারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। তাই এ জেলে থাকা মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত দুর্ধর্ষ আসামি এবং জেএমবির জঙ্গিদের অন্য কারাগারে সরিয়ে নেওয়া শুরু হয়েছে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নাঈম মণ্ডল, শিবলু ফকির ও আবদুর রাজ্জাক এবং যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত রবিউল ইসলাম ও আবদুর রহিমকে রাজশাহী বিভাগীয় কারাগারে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
বগুড়া জেলা কারাগারের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেছেন, দুটি কনডেম সেলের মধ্যে জাফলংয়ে চারটি ও আত্রাইয়ে পাঁচটি কক্ষ রয়েছে। বর্তমানে এ নয়টি কক্ষে ১০ জন ফাঁসির আসামি রয়েছে। জাফলং সেল থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর গ্রেফতার চারজনকে ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে অন্য সেলে রাখা হয়েছে। তারাসহ অন্যদের ব্যাপক নজরদারি চলছে। জেলের ভেতরে ও বাইরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।