Logo
Logo
×

সারাদেশ

দুর্নীতির আখড়া সিরাজদিখান প্রাণিসম্পদ দপ্তর

Icon

সিরাজদিখান (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৪, ১১:৩৭ পিএম

দুর্নীতির আখড়া সিরাজদিখান প্রাণিসম্পদ দপ্তর

মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে। বুধবার উপজেলার মধ্যপাড়া ইউনিয়নের মালপদিয়া গ্রামে এক খামারির ছাগলের মৃত্যু ও আরও ১৭-১৮টি ছাগল অসুস্থ হলে ওই খামারির ছাগলের জন্য সময়োপযোগী চিকিৎসাসেবা না দেওয়াসহ আরও অভিযোগ রয়েছে। 

খামারিরা জানান, বিনামূল্যের পশু চিকিৎসায় টাকা নেওয়া, সরবরাহ থাকার পরও কোম্পানির ঔষধ কিনতে বাধ্য করা, মাঠ পর্যায়ে প্রজননকর্মী ও ভিএফএ (ভেটেরিনারি ফিল্ড এসিষ্ট্যান্ট) দের চাঁদাবাজি, সরকারি ঔষধে ঝুকিপূর্ণ নিরাপত্তা স্টিকার লাগানো সহ দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে মুন্সীগঞ্জ সিরাজদিখান উপজেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল।

এর পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটিতে জনবল সংকটও রয়েছে। এ ব্যাপারে  সিরাজদিখান উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শবনম সুলতানা বলেন,  আমাদের লোকবল কম রয়েছে। যে কারণে কাঙ্ক্ষিত সেবা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পরে। তবে খামারিরা ফোন করলে মাঠ পর্যায়ে তারা চলে যায়। আবার যে পশুটি হাসপাতালে আনা সম্ভব হয় না সেখানেও তারা চলে যায়। 

তবে হাসপাতালে পশু চিকিৎসা নিতে এসে পশু মালিকদেরকে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা দিতে হয়। আর সরকারি ৫০ টাকার ভ্যাকসিন ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়ও বিক্রি করা হয় মাঠ পর্যায়ে। এ নিয়ে মধ্যপাড়া ইউনিয়নের করারবাগ গ্রামের বাসিন্দা ভুক্তভোগী আরিফুল ইসলাম বলেন, ভিএফএ যারা আছে তাদের ফোন অনেক সময় ধরে না। আমরা তিন-চারবার অনুরোধ করার পর তারা আসলে তাদেরকে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকার নিচে দিলে রাগ হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে আর আসে না। শুধু তাই নয় সরকারি বিড়ালের র‌্যাবিস ভ্যাকসিনও হাসপাতালেই বিক্রি করে ৩২০ টাকায়।

ভুক্তভোগীরা আরো জানান, আমার প্রতিবেশীর জন্য ছাগলের পিপিআর ভ্যাকসিন ও হাসের ডাকপ্লেগ ভ্যাকসিন আনতে গিয়ে বেশি টাকা দিতে বাধ্য হয়েছি। এদের লজ্বা-ভয় কোনটিই নেই।

খামারিরা জানায়, প্রতিটি খামার করতে তাদের ঘাম ঝরানো পরিশ্রম ও প্রচুর অর্থ খরচ করতে হয়। খামারে কোনো রোগের উপদ্রব হলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে টিকা ছাড়া আর কোনো ওষুধ কিংবা চিকিৎসাসেবা সময়মতো পান না তারা। স্বেচ্ছায় কোনো কর্মকর্তা খামার পরিদর্শন করেন না। প্রয়োজনে একাধিকবার ফোন করলেও একবার আসেন। সেক্ষেত্রে প্রতিবার ভিজিট দিতে হয় ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত। 

মধ্যপাড়া ইউনিয়নের উন্নত প্রজাতির ছাগল পালনকারী মোঃ জহির নামের এক খামারি অভিযোগ করে বলেন, ইতোমধ্যে আমার খামারের বেশ কয়েকটি ছাগল মারা গেছে। কিছুদিন আগে আমার একটি উন্নত জাতের ছাগল অসুস্থ হয়। বিকাল ৫টার দিকে এক প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, পিপিআই ভ্যাকসিন চার-পাঁচ দিন পরে আসবে আর তিনি পরের দিন সকালে আসবেন বলে আশ্বাস দেন। কিন্তু রাতে ছাগলটি মারা যায়। যার বাজারমূল্য ছিল ৩০ হাজার টাকা।

মালপদিয়া গ্রামের বাসিন্দা হাবিব বলেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে মৌখিকভাবে একাধিকবার জানালেও কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী এখন পর্যন্ত খামারটি পরিদর্শন করেননি। বিভিন্ন সময় সমস্যার কথা তাদের বললে মৌখিকভাবে সমাধান দিয়েছেন। কিন্তু ঘটনাস্থলে গিয়ে পশু মৃত্যুর কারণ উদঘাটন করেন না তারা। এ ছাড়া গৃহপালিত বা খামারের গাভী অসুস্থ হলে নির্ধারিত অংকের ভিজিট দিয়ে বাড়ি নিতে হয় উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের। সরকারি বরাদ্দকৃত ওষুধ প্রয়োগ করেও তারা টাকা আদায় করেন।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ শবনম সুলতানা বলেন, প্রাণিসম্পদের ক্ষেত্রে এ উপজেলায় ভিএস বা জরুরি সেবা না থাকায় এবং জনবল সংকটের কারণে আমরা খামারিদের আশানুরূপ সেবা দিতে পারছি না। এরপরও এখন থেকে খামারিদের সার্বিক সহযোগিতা দেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম