Logo
Logo
×

সারাদেশ

নদকে খাল দেখিয়ে সোয়া কোটি টাকা ইউপি চেয়ারম্যানের পকেটে! 

Icon

টেকেরহাট (মাদারীপুর) প্রতিনিধি 

প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৪, ০৮:৩৩ পিএম

নদকে খাল দেখিয়ে সোয়া কোটি টাকা ইউপি চেয়ারম্যানের পকেটে! 

নদকে খাল দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। ছবি : যুগান্তর

একদিকে ফসলি জমি, অন্যদিকে আড়িয়াল খাঁ নদ। অথচ নদকে খাল দেখিয়ে সোয়া কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যান ও কমিটির লোকজনের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি এমন ঘটনা ঘটেছে মাদারীপুরের টেকেরহাট এলাকায়। 

জানা যায়, উপজেলার বাহাদুর খাল, টেংরামারি খাল, ক্রোকচর খালসহ ৬টি খালের নামে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় দুই কোটি ৩০ লাখ টাকা। এরই মধ্যে সোয়া কোটি টাকা বিল তুলে নিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান ও কমিটির লোকজন। 

সরেজমিনে এলাকা ঘুরে দেখা যায়, চারদিকে থৈ থৈ করছে পানি। এটি আড়িয়াল খাঁ নদের একটি অংশ। মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার ভান্ডারীকান্দি ইউনিয়নের ভান্ডারীকান্দি গ্রাম হয়ে পাশের ক্রোকচরে গিয়ে শেষ হয়। নদটির অপরপাশে কৃষি জমি। অথচ এসব খাল দেখিয়ে খনন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ইউপি চেয়ারম্যান। 

একইভাবে ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে সাড়ে ১১ কিলোমিটার খনন করার কথা। জাপান সরকারের অর্থায়নে স্থানীয় ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। 

অভিযোগ আছে, নদকে খাল দেখিয়ে প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান। নামমাত্র খনন করা হয়েছে, আর কৃষকের ফসলি জমির উপর দিয়ে চালানো হয়েছে মাটিকাটা ভেকু মেশিনও এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রান্তিক চাষিরা। এ বিষয়ে বিচার চেয়ে দুদক ও জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয়রা। 

দক্ষিণ ক্রোকচরের বাসিন্দা ইব্রাহিম মুন্সির স্ত্রী মাকসুদা বেগম বলেন, ‘আমাদের এখানে কখনই কোনো খাল ছিল না। এটা আমরা নদ হিসেবেই জানি। এখানে খাল খননও করা হয়নি। আর নদের একটি অংশে আমাদের ফসলি জমি।’ 
একই এলাকার সিরাজ মাতুব্বরের স্ত্রী সেলিনা বেগম বলেন, আমাদের এলাকায় খাল নেই। এখানে ব্লকের মাধ্যমে ইরি ধান চাষাবাদ হয়। এখানে কেউ খাল খনন করেনি। এখানে খাল খননের এমন কোনো খবর আমরা জানিও না।’ 

ভান্ডারীকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফজলুর রহমান শিকদার বলেন, ‘এখানে যে প্রজেক্ট দেওয়া হয়েছে, সম্পূর্ণ রেকর্ডীয় মালিকানাধীন জমি। এই প্রকল্পে অধিকাংশ জায়গা খনন করা হয়নি। এই প্রকল্পের মাধ্যমে চেয়ারম্যানের পকেট ভারি হয়েছে, জনগণের কোনো উপকারই হয়নি।’ 

ভান্ডারীকান্দি গ্রামের বাসিন্দা মোসলেম বেপারী বলেন, ‘যতটুকু খাল খনন করা হয়েছে, সেটাতে আমাদের আরও ক্ষতি হয়েছে। এটা খাল খনন হয়নি, এটা রেকর্ডীয় সম্পত্তি খনন করেছে। মানুষের চাষি জমির উপর দিয়ে ভেকু মেশিন চালিয়ে ক্ষতি করেছে। এর বিচার চাই।’ 

ভান্ডারীকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জোনায়েত হোসেন বলেন, ‘খাল খননের প্রজেক্ট আসছে শুনেছি। খননের নামে শুধু রাস্তার পাশ দিয়ে নামমাত্রই ভ্যেকু মেশিন চালিয়েছে। কীভাবে এই প্রকল্পে টাকা উত্তোলন করছে সেটাও আমরা বুঝি না। আমাদের দাবি, জনগণের স্বার্থে খাল খনন যেন সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন হয়।’ 

এ ব্যাপারে জানতে ভান্ডারীকান্দি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা সমিতির মাধ্যমে সঠিকভাবেই খাল খনন করেছি। এলাকার দুই একজন লোক বাজে মন্তব্য করছে। খাল খননের নামে কোনো ফসলি জমির ক্ষতি করিনি। জাইকার প্রকল্প সঠিকভাবেই বাস্তবায়ন করা হয়েছে। 

মাদারীপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী বাদল চন্দ্র কীর্তনীয়া বলেন, খাল খনন প্রকল্প করার সময় নকশায় ভুল ছিল। এটি সংশোধন করা না হলে আর কোনো বিল দেওয়া হবে না। বর্ষা মৌসুম না গেলে আর খনন সুযোগ নেই। পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হলে, আর কোনো বিল দেওয়া হবে না। 

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান বলেন, খাল খনন না করে বিল তুলে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নদের জায়গায় প্রকল্প দিয়ে সরকারি টাকা আত্মসাৎ গুরুতর অপরাধ। এ ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম