সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে ফি বাড়ল তিনগুণের বেশি
চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৪, ০৬:০৫ এএম
চুনারুঘাটের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের প্রবেশ ফি তিনগুণের বেশি বাড়ানো হয়েছে। বিষয়টিকে পরিবেশকর্মীরা বন ও জীববৈচিত্র্যের জন্য মঙ্গলজনক বললেও দর্শনার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, প্রবেশ ফি বাড়ানোর কারণে এখন থেকে কেউ অযথা প্রবেশ করে চাইবে না এবং বন্যপ্রাণীদের বিরক্ত করবে না। তবে এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দর্শনার্থীরা।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সূত্র জানায়, সাতছড়িতে প্রবেশ ফি তিনগুণের চেয়ে বেশি বেড়েছে। ৯টি আইটেমে নতুন করে নির্ধারিত টাকা প্রবেশ ফি নেওয়ার নির্দেশনা দেয় বন বিভাগ।
আগে সাতছড়ি প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য প্রবেশ ফি ছিল ৩৩ দশমিক ৫০ টাকা। এখন সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৫ টাকা। অপ্রাপ্তবয়স্কদের প্রবেশ ফি ১৭ দশমিক ৫০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫৭ টাকা ৫০ পয়সা। জাতীয় উদ্যানটিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে আগে বিদেশি পর্যটকদের গুনতে হতো ৫০০ টাকা। এখন সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৫০ টাকায়। এছাড়া শুটিংয়ের জন্য প্রবেশ ৬ হাজার ৯০০ টাকা থেকে বেড়ে ১৩ হাজার ৮০০ টাকা করা হয়। পিকনিক পার্টির জন্য জনপ্রতি ১১ টাকা নেওয়া হলেও নতুন সূচিতে এখন তা হয়েছে ২৩ টাকা। পার্কিংয়ের জন্য ছোট গাড়ির ফি ছিল ২৭ টাকা। এখন সেটা বেড়ে ১১৫ টাকা এবং বড় গাড়ি ফি ১০৫ থেকে বেড়ে ২৩০ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
ঈদের ছুটিতে সাতছড়ি ঘুরতে যাওয়া আব্দুল হান্নান নামে এক দর্শনার্থী বলেন, পরিবারের ৭ সদস্য নিয়ে বুধবার সকালে সাতছড়ি গেট থেকে ফিরে এলাম। সাতছড়ি প্রবেশ করতে প্রায় ৮০০ টাকার টিকিট কাটতে হচ্ছে। পরে আর ভেতরে প্রবেশ করিনি।
সাতছড়ি উদ্যানের টুরিস্ট গাইড রাসেল দেববর্মা বলেন, টিকিটের দাম বাড়ার কারণে অনেকেই গেট থেকে ছবি তুলে চলে যাচ্ছেন। গেটের সামনে তাই ভিড় বেশি থাকে।
বিষয়টি নিয়ে পরিবেশকর্মী ও সাংবাদিক নুরুল আমিন বলেন, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে প্রবেশ ফি বাড়ানোর বিষয়টি আমরা ইতিবাচকভাবে দেখছি। এখানে প্রবেশ ফি বাড়ানোর কারণে পর্যটক কম ঢুকবেন। আমরা প্রায়ই দেখি, পর্যটকরা সাতছড়ি ঢুকে প্রাণীদের উত্ত্যক্ত করেন, যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলেন। হইহুল্লোড় করেন। এতে প্রাণীরা সমস্যায় পড়ে।
কাউন্টার সুপার ভাইজার তুহিন মিয়া বলেন, প্রতি বছর যেখানে ঈদের দিন লাখ টাকা রাজস্ব আসে, সেখানে এবার মাত্র ১২ হাজার ৭০০ টাকা রাজ্স্ব এসেছে। এছাড়া ইদের পরদিন এক হাজার টাকাও রাজস্ব আসেনি। যদিও সেদিন বৃষ্টি ছিল।
বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সাতছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল আমিন বলেন, গত ২২ মে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের একটি প্রজ্ঞাপন আমাদের হস্তগত হয়েছে। সেখানে দেখা যায় গত ২১ মার্চ থেকে বন অধিদপ্তরের আওতাধীন জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান, পার্ক/ইকোপার্কের ফি বাড়ানো হয়। সে লক্ষ্যে লাউয়াছড়া, সাতছড়ি, শেরপুরের মধুটিলা ইকোপার্কসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় থাকা বনগুলোতে প্রবেশ ফি বাড়িয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়।সাতছড়িতে প্রবেশ ফি বাড়ানোর ফলে এখন থেকে পর্যটক কিছুটা কম প্রবেশ করবে।
এটি সার্বিক বিবেচনায় বন্যপ্রাণীদের জন্য মঙ্গলজনক বলে জানান এ বন কর্মকর্তা।