Logo
Logo
×

সারাদেশ

পানিতে ভাসছে সিলেট

Icon

সিলেট ব্যুরো

প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২৪, ০৯:১২ পিএম

পানিতে ভাসছে সিলেট

সিলেটে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি কিছুটা কমলেও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত রয়েছে। এতে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। বাড়িঘরে টিকতে না পেরে আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটছেন মানুষ। জেলা প্রশাসনের হিসাবে বুধবার দুপুর পর্যন্ত পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় সাত লাখ মানুষ।

টানা বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে সিলেটের সীমান্তবর্তী পাঁচ উপজেলা গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ ও জকিগঞ্জের পাশাপাশি বন্যা ছড়িয়ে পড়েছে সদর, দক্ষিণ সুরমা, বিশ্বনাথ, ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলায়। এসব উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। 
সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত নগরীর ২১টি ওয়ার্ড ও জেলার এক হাজার ৩২৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এতে ৬ লাখ ৭৫ হাজার ৯৩৭ জন মানুষ বন্যা আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে নগরীর অর্ধলাখ লোক পানিবন্দি। জেলা ও নগর মিলিয়ে ৬২৭টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে নগরে ৮০টি। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে ১৭ হাজার ২৮৫ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। 

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট কার্যালয় সূত্র বুধবার বেলা ১২টায় জানায়, সুরমা নদী কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে বইছে বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে।

কুশিয়ারা নদী আমলশীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই নদী ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৯৭ ও শেরপুর পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে।এছাড়া সারি-গোয়াইন নদী সারিঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার দশমিক ০৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

২০ দিনের ব্যবধানে সিলেটে এ নিয়ে দ্বিতীয় দফা বন্যা দেখা দিয়েছে। এর আগে ২৭ মে সিলেট বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এতে জেলার সব উপজেলার সাড়ে ৭ লাখ মানুষ আক্রান্ত হন। সেই বন্যার পানি পুরোপুরি নামার আগেই ১৫ জুন থেকে আবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে সিলেট।

এর মধ্যে ঈদের দিন (১৭ জুন) ভোর থেকে সিলেটে শুরু হয় ভারি বর্ষণ। সঙ্গে নামে পাহাড়ি ঢল। সকাল হতে না হতেই তলিয়ে যায় নগরীর অনেক এলাকা। জেলার বিভিন্ন স্থানেও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। মাটি হয়ে যায় সিলেটের ঈদ আনন্দ।

সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ইতোমধ্যে নগরীর শাহজালাল উপশহর, যতরপুর, মেন্দিবাগ, শিবগঞ্জ, রায়নগর, সোবহানীঘাট, কালিঘাট, কামালগড়, মাছিমপুর, তালতলা, জামতলা, কাজিরবাজার, মাদিনা মার্কেট, আখালিয়া, মেজরটিলা ও দক্ষিণ সুরমার লাউয়াই, বরইকান্দি, আলমপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অনেকের বাসাবাড়িতে গলা পর্যন্ত পানি উঠেছে। নিচু এলাকাগুলোর কলোনি বা বাসা-বাড়ি প্রায় পুরোটাই তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন এসব এলাকার মানুষ। অনেকে গেছেন আশ্রয় কেন্দ্রে। আবার অনেকে নিজের বাসা-বাড়ি ছেড়ে যেতে চাচ্ছেন না।

জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান জানান, সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় পানিবন্দি লোকদের উদ্ধারের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় তৎপরতা চালানো হচ্ছে। বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়গুলোতে কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় ডেডিকেটেড অফিসার নিয়োগের পাশাপাশি প্রতিটি ইউনিয়নে ট্যাগ অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে।

এদিকে দুপুরে বন্যকবলিত এলাকা পরিদর্শনে দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মুহিববুর রহমান বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শনে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে যান। এ সময় তিনি বানভাসি মানুষদের সঙ্গে কথা বলেন। তেলিখাল এলাকায় একটি আশ্রয় কেন্দ্রে ত্রাণ বিতরণ করেন। এ সময় তার সঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইমরান আহমদ, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসকসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 

দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মুহিববুর রহমান বানভাসিদের উদ্দেশে বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে যাতে ভোগান্তি না হয় এজন্য যা যা করা দরকার সবই করবে সরকার। ধৈর্য ধরে দুর্যোগ মোকাবিলার আহবান জানান তিনি। 

তিনি বলেন, ত্রাণের অভাব নেই- প্রাথমিকভাবে তিনি নগদ ২০ লাখ টাকা, শিশুখাদ্য ও গো-খাদ্যের জন্য ১০ লাখ টাকা করে বরাদ্দ ঘোষণা করেন। সেই সঙ্গে ৫ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবারও বরাদ্দ দেন। এটা প্রাথমিক বরাদ্দ। পরবর্তীতে যা যা করণীয় তাই করবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার।  

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম