দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট
ফিটনেস বিহীন লঞ্চে দ্বিগুণ যাত্রী পারাপার, বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ
গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৪, ০৯:২৩ পিএম
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অসংখ্য মানুষ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের লঞ্চযোগে পদ্মা-যমুনা নদী পারাপার হচ্ছেন। তবে এ রুটে চলাচলকারী প্রতিটি লঞ্চে ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে। অথচ কোনো লঞ্চেই নেই যাত্রীদের নিরাপত্তায় জীবন রক্ষাকারী পর্যাপ্ত সরঞ্জাম। এতে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
এছাড়া এ রুটে যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায়েরও অভিযোগ উঠেছে। একই রুট অথচ ৩৬, ৪০ ও ৪৫ টাকা হারে তিন ধরনের টিকিটে ভাড়া আদায় করতে দেখা গেছে।
শনিবার দুপুরে দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটে ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান করে এমন চিত্র লক্ষ্য করা গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, যাত্রীরা টিকিট কেটে লঞ্চে উঠলেও তাদের সঙ্গে কোনো হালকা বস্তা বা সামান্য মালামাল থাকলে তার জন্যও আদায় করা হয় অতিরিক্ত টাকা। অথচ এসব বিষয়ে নির্দেশনা সম্বলিত পন্টুন দুটিতে নেই কোনো চার্ট।
ঘাট সূত্রে জানা যায়, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌ রুটের বহরে এবারের ঈদে ছোটবড় ২০টি লঞ্চ চলাচল করছে। আরিচা লঞ্চ মালিক সমিতি নৌ-পথের এ সবগুলো লঞ্চ পরিচালনা করছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি লঞ্চ অনেক পুরনো। ওপরে চকচকে বাহারি রঙের প্রলেপ দেওয়া। তবে এর মধ্যে অনেকগুলোতে সেই রঙও দেওয়া হয়নি। ভেতরের গুরুত্বপূর্ণ ইঞ্জিনসহ অনেক কিছুই জোড়াতালি দেওয়া। যাত্রী নিরাপত্তায় অধিকাংশ লঞ্চে নেই যথেষ্ট পরিমাণে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, ফায়ার বাকেট, বালুভর্তি বাক্স, পাম্প মেশিন, পর্যাপ্ত সংখ্যক লাইফ জ্যাকেট, লাইফ বয়াসহ জীবন রক্ষাকারী বিভিন্ন সরঞ্জাম।
এসব অভিযোগের খবর পেয়ে দুপুরে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটে আসেন। এসময় তিনি অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন, বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ, কয়েকটি লঞ্চ ও চালকদের কাগজপত্র খতিয়ে দেখেন। সেইসঙ্গে তিনি সংশ্লিষ্টদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে সতর্ক করে দেন।
আলাপকালে লঞ্চ এমভি মিজানুর-এর চালক বলেন, তার লঞ্চে ধারণ ক্ষমতা ৮০ জন। কিন্তু ঈদের বাড়তি চাপে ১০০-১২০ জন করে যাত্রী পারাপার করছেন। যদিও তার লঞ্চে অন্তত দেড় শতাধিক যাত্রী আনতে দেখা যায়। এই লঞ্চে রয়েছে মাত্র ১৬টি বয়া এবং ৭টি লাইফ জ্যাকেট।
এমভি টুম্পা লঞ্চকে দেখা যায়, ২৩০ জন যাত্রী নিয়ে ঘাটে এসেছে। এর ধারণ ক্ষমতা ১৫৭ জন। চালক জানান, নদী শান্ত আছে তাই পাটুরিয়া ঘাটের চাপ সামলাতে বাড়তি যাত্রী তোলা হয়েছে।
দৌলতদিয়া ঘাটে নিয়োজিত আরিচা লঞ্চ মালিক সমিতির প্রতিনিধি মোফাজ্জল হোসেন বলেন, পাটুরিয়া ঘাট হতে প্রশাসনের উপস্হিতিতেই পরিস্হিতি বিবেচনায় লঞ্চে কিছু বেশি যাত্রী ওঠানো হচ্ছে। ভাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ৫ টাকা টোল এবং ৪০ টাকা লঞ্চ ভাড়াসহ মোট ৪৫ টাকা আদায় করা হচ্ছে।
তবে ৪০ এবং ৪৫ টাকা- এই দুই ধরনের টিকিটের বিষয়ে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। ৩৬ টাকা সরকার নির্ধারিত ভাড়ার বিষয়টিও তিনি এড়িয়ে যান।
এ বিষয়ে দৌলতদিয়া লঞ্চ ঘাটে নিযুক্ত বিআইডাব্লিউটিএ'র ট্রাফিক সুপারভাইজার এস এম শিমুল জানান, প্রতিটি লঞ্চেই নৌ অধিদপ্তরের কাগজপত্র রয়েছে। তবে ঈদের আগে মানুষের চাপে লঞ্চগুলোতে কিছু বেশি যাত্রী আসছে। পাটুরিয়া ঘাট থেকে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের টিকিটে ভাড়া আদায়ের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে মন্তব্য করেন।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র বলেন, পাটুরিয়া ঘাট থেকে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করে আসা এবং বিভিন্ন ধরনের টিকিটে ভাড়া আদায়ের বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা আমাকে সদুত্তর দিতে পারেনি। আমি তাদের সতর্ক করে দিয়েছি। এরপরও কোনো অসঙ্গতি দেখলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।