মাধবপুরের সেই মোটরবাইক চালক মানিক কোটিপতি
নেপথ্যে চেরাই পণ্য বিক্রি, মাদক ব্যবসা
মাধবপুর (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২৪, ১০:৫৯ পিএম
প্রতীকী ছবি
কথা বললে মনে হবে গ্রামের সহজ-সরল মানুষ। ব্যবসা করেন চোরাই পণ্য কেনা-বেচার। সেই সঙ্গে মাদক হলো অন্যতম প্রধান ব্যবসা। আর এর আড়ালে রয়েছে চোরচক্রের সঙ্গে বিশেষ সখ্য। চেরাই পণ্য কেনা-বেচা তার অন্যতম পেশা। একাধিকবার মাদকসহ বিভিন্ন থানায় আটক হয়েছে। রয়েছে ৭টি মাদক মামলা।
একাধিকবার চোরাই মালামাল তার ঘর থেকে উদ্ধার হলেও সে থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। ইতোমধ্যে মধ্যে এক লাফে ধনী হয়ে উঠেন মানিক মিয়া।
মানিক মিয়ার বাবার নাম তাহের মিয়া। পৈতৃক ভিটা হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার চৌমুহনী ইউনিয়নের বেলাপুর গ্রামে। বর্তমানে তিনি স্থায়ী ভাবে দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে একই ইউনিয়নের আরিছপুর (বারইপাড়া) গ্রামে বসবাস করেন। প্রথম স্ত্রী বেলাপুর গ্রামের মানিকের পৈতৃক ভিটাতে ছেলে-মেয়ে নিয়ে বসবাস করেন। মানিকের এক সময় পেশা ছিল মোটরসাইকেলে যাত্রী নিয়ে চলাচল করতেন। এরই আড়ালে একাধিক মাদক ব্যবসায়ী এবং চোরচক্রের সঙ্গে গড়ে তোলেন গভীর সখ্য।
দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে উপজেলার চৌমুহনী ইউনিয়নের আরিছপুর (বারইপাড়া) গ্রামে বসত ঘরের সামনে মার্কেট নির্মাণ করে এতে মুদি মালের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে বসেন। এখানে একটি ছোট্ট দোকান থাকলেও মূলত চোরাই পণ্য বেচা-কেনা এবং মাদকই তার মূল ব্যবসা।চোরাই পণ্য কেনা বেচার পাশাপাশি চড়া সুদেও বেশ টাকা লগ্নি করেন মানিক। এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে এই প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কয়েক বছর আগে উপজেলার চৌমুহনী ইউনিয়নের বেলাপুর গ্রামের পৈতৃক ভিটাতে ছোট্ট একটি ঘরে কোনো রকম দিনযাপন করতেন মানিক। হঠাৎ করে পার্শ্ববর্তী আরিছপুর (বারইপাড়া) গ্রামের শহীদ ঘটকের স্ত্রীকে বিয়ে করে সেখানে গড়ে তুলেন আলিশান বাড়ি। সেখানেই দ্বিতীয় স্ত্রী ছেলে-মেয়েকে নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন মানিক। বাড়ির চারদিকে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে মোবাইলে ওনি পুলিশ আসা-যাওয়া পর্যবেক্ষণ করেন। প্রতি দিনই তার ঘরে বসে মাদকের আসর।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, উপজেলার সীমান্তবর্তী চৌমুহনী ইউনিয়নের আরিছপুর বারইপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মানিক পেশাদার একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী এবং চোরাই মালামাল কেনা-বেচার সিন্ডিকেটের একজন সদস্য। ভারত থেকে ফেনসিডিল, গাঁজা ও ইয়াবা এনে পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করে মাত্র ২-৩ বছরের মাথায় তিনি এখন কোটিপতি। কিনেছেন জমি করেছেন বাড়ি। বাড়িতে তুলেছেন অট্টালিকা। তার নেতৃত্বে এলাকায় গড়ে তুলেন মাদক ব্যবসায়ী এবং চোরদের এক বিশাল সাম্রাজ্য।
এর আগে মানিককে একাধিকবার গ্রেফতার করে মাধবপুর থানা পুলিশ। ১১ জুন কাশিমনগর পুলিশ ফাঁড়ির এসআই ফজলুল হকের নেতৃত্বে পুলিশ মানিকের বসত ঘরে অভিযান চালিয়ে চোরাই কাট (ফালংক) উদ্ধার করে। তার স্বীকারোক্তিতেই বেরিয়ে আসে চৌমুহনী ইউনিয়নের কমলানগর গ্রামের নাসির মিয়ার পুত্র শান্ত ওরুফে কাইল্লা এবং দুলাল মিয়ার পুত্র জীবনের নাম। এরপর শান্ত এবং জীবনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে জীবনের দেওয়া তথ্যমতে কমলানগর গ্রামের মাসুকের ঘর থেকে চুরি হয়ে যাওয়া মালামাল শান্ত ওরুফে কাইল্লার ঘর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।
কমলানগর গ্রামের মাসুকের ঘরে চুরি হওয়ার বিষয়ে মাধবপুর থানায় মাসুকের স্ত্রী শারমিন বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাত চোরদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। মানিকের ঘর থেকে মালামাল উদ্ধার হওয়ার পরও ১২ জুন সকাল থেকে মানিক গ্রেফতার না হওয়া নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি হয়। পরে মাধবপুর থানার ওসি রাকিবুল ইসলাম খানের নির্দেশে বুধবার বিকালে কাশিমনগর পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই দেলোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশ মানিক মিয়াকে তার বাড়ি থেকে আটক করে।
মাধবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রাকিবুল ইসলাম খান পিপিএম মানিক গ্রেফতারের খবর নিশ্চিত করে জানান, জীবন এবং শান্তকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আর মানিক একজন মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে ৭টি মাদক মামলা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে চোরাই মালামাল কম দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।