Logo
Logo
×

সারাদেশ

ইতালির ভুয়া ভিসা দিয়ে কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা প্রতারকচক্র

Icon

টেকেরহাট (মাদারীপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২৪, ১০:৩৬ পিএম

ইতালির ভুয়া ভিসা দিয়ে কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা প্রতারকচক্র

দালাল বেলায়েত হাওলাদারের শ্বাশুড়ি আসমিনা বেগম টাকা গুণে নিচ্ছেন ছবি: যুগান্তর

পাসপোর্ট নিয়ে দেওয়া হয় ইতালির ভিসা, এমনকি বিমানের টিকিটও অগ্রিম কাটা হয়; কিন্তু ইমিগ্রেশনে গিয়ে তরুণরা জানতে পারেন সবই ভুয়া। দালালদের প্রলোভনে পড়ে লাখ লাখ টাকা খুইয়ে সর্বস্বান্ত হন মাদারীপুরের অনেক তরুণ। অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, লোভে পড়ে প্রতারিত হচ্ছেন মানুষ। আর সচেতনতার অভাবেই এমন ঘটনা পুনরাবৃত্তি হচ্ছে বলে দাবি প্রশাসনের।

ইভান খালাসী দেড় বছর আগেও ছিলেন সৌদি আরবে। মুঠোফোনে কথা হয় মাদারীপুরের রাজৈরের হরিদাসদি এলাকার বেলায়েত হাওলাদারের সাথে। পরে সৌদি থেকে দেশে আসেন ইভান। কোনো ঝামেলা ছাড়াই তাকে ইতালি পৌঁছে দেওয়া হবে- এমন শর্তে দালালদের হাতে তুলে দেন ১২ লাখ টাকা। এজন্য পাসপোর্টে দেওয়া হয় ইতালির ভিসা, একই সাথে টিকিটও কাটা হয় বিমানের; কিন্তু গত ৩ এপ্রিল ইতালির উদ্দেশে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গিয়ে জানতে পারেন প্রতারণার শিকার তিনি।

শুধু ইভান খালাসীই নয়, তার মতো একইভাবে প্রতারণার শিকার পাঠানকান্দির নাইম হাওলাদার, হরিদাসদির সফিকুল ইসলাম নয়ন, রায়হান হোসেনসহ অনেক তরুণ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ ঘটনার মূল অভিযুক্ত নোয়াখালীর কবিরহাট এলাকার আবুল বাশার সুমন। তার সহযোগী বেলায়েত হাওলাদার। প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা নিয়ে লাপাত্তা অভিযুক্তরা। 

অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, লোভে পড়েই বারবার প্রতারিত হচ্ছে তরুণরা। এ বিষয়ে জানতে বেলায়েতের বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে অভিযোগের কিছুই জানেন না বলে দাবি অভিযুক্ত বেলায়েতের বাবা মোতালেব হাওলাদারের। প্রশাসন জানায়, এমন ঘটনা থামাতে জনপ্রতিনিধিদের আন্তরিকতার পাশাপাশি প্রয়োজন পরিবারেরও সচেতনতা বৃদ্ধি।

টাকা লেনদেনের একটি ভিডিও এসেছে প্রতিবেদকের হাতে। সেই ভিডিওতে দেখা যায়, বেলায়েতের শাশুড়ি আসমিনা বেগম গুনে গুনে লাখ লাখ টাকা নিচ্ছেন। সেই টাকা বেলায়েতকে পাঠিয়ে দিয়েছেন বলে জানা গেছে। ইভান খালাসীর বাড়িতে বসেই লাখ লাখ টাকা লেনদেনের ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী ইভান খালাসী বলেন, আমাকে ইতালি পাঠাবে এই প্রলোভনে পড়ে আমি প্রতারিত হই। আগে বুঝতে পারিনি, তাহলে এই ফাঁদে পা দিতাম না। আমার কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা নিয়েছে বেলায়েত ও তার শাশুড়ি, আমি আমার টাকা ফেরত চাই, আর এই দালালচক্রের বিচার চাই।

আরেক ভুক্তভোগী রায়হান হোসেনের দুলাভাই মাদারীপুরের রাজৈরের বদরপাশার দারাদিয়া গ্রামের বাসিন্দা রেজাউল করিম বলেন, বেলায়েত ও সুমনের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে অনেক তরুণ সর্বস্বান্ত হয়েছে। কেউ সুদে টাকা এনে, কেউ ব্যাংক থেকে ঋণ এনে লাখ লাখ টাকা হাতে তুলে দিয়েছে এই প্রতারকদের। এখন ইতালিও নিতে পারছে না, টাকাও ফেরত দিচ্ছে না। এর একটা প্রতিকার দরকার। এই দালালদের বিচারও হওয়া দরকার। প্রশাসনের কাছে জোর দাবি, এই চক্রকে বিচারের মুখোমুখি করা হোক।

অভিযুক্ত বেলায়েত হাওলাদারের বাবা মোতালেব হাওলাদার বলেন, আমার ছেলের সাথে দুই বছর ধরে কোনো যোগাযোগ নেই। বেলায়েত কাকে কিভাবে কোথায় নিবে, সেটা আমি জানি না।

বেলায়েতের শাশুড়ি আসমিনা বেগম বলেন, আমার জামাই বেলায়েত টাকা নিতে বলেছে, আমি সেই টাকা ইভানদের বাড়িতে গিয়ে গ্রহণ করেছি। ইভান আমাদের আত্মীয় হয়। টাকা নিয়ে ইতালি নেওয়ার কথা ছিল। আমার জামাই অন্য এক লোকের মাধ্যমে কথা বলেছিল। সেই লোকই প্রতারণা করেছে। এ ঘটনায় ইভান আদালতে মামলা করেছে। এখন আমরা আদালতেই সবকিছু বুঝব।

মাদারীপুর আদালতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মামুন খান বলেন, লোভে পড়েই তরুণরা বারবার প্রতারণার শিকার হচ্ছে। পরে বিচারের আশায় আদালতে মামলা করেন। তরুণরা যদি দালালদের কাছে না যায় তাহলে এই প্রতারিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

মাদারীপুরের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলাম বলেন, এমন ঘটনায় মাদারীপুর আদালতে করা একাধিক মামলা তদন্ত করছে গোপালগঞ্জ জেলার পিবিআই কর্মকর্তারা। এছাড়া প্রত্যেকটি মামলা মাদারীপুর জেলা পুলিশ নিখুঁতভাবে তদন্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে। অনেকেই গ্রেফতারও হয়েছে। বেকার তরুণরা সচেতন হলে এই প্রতারকদের হাত থেকে রক্ষা পেতে পারে। সচেতনতার বাইরে বিকল্প কিছুই নেই।

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান বলেন, বেকার তরুণদের মধ্যে রাতারাতি বড়লোক হওয়ার একটি স্বপ্ন থেকেই বারবার প্রতারিত হচ্ছে তারা। অল্প টাকায় ইতালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের যাওয়ার প্রবণতায় একদিকে প্রাণহানি বাড়ছে, অন্যদিকে দালালদের মাধ্যমে প্রতারিত হয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন অনেকেই। এর থেকে বাঁচতে প্রয়োজন পরিবার ও এলাকার জনপ্রতিনিধিদের সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম