বনবিভাগের অনুমতি ছাড়াই সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে গাছ কাটার অভিযোগ
রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ১১ জুন ২০২৪, ০৮:৪৪ পিএম
রাজশাহী সিভিল সার্জনের সরকারি বাসভবনে কেটে ফেলা গাছ। ছবি: যুগান্তর
সরকারি বাসভবনের গাছ বনবিভাগের অনুমতি ছাড়াই কাটার অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে। এছাড়া তিনি আইন ভেঙে বাংলোর ভেতরে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে নতুন করে একটি পুকুর খনন করেছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা যায়, এ বাংলোয় সবমিলিয়ে এক কোটি টাকা খরচ করে চলছে উন্নয়নযজ্ঞ। এসব সংস্কার ও নির্মাণ কাজের সময়ই সোমবার বিরল প্রজাতির দুটি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে নিলাম ছাড়াই। এছাড়া গত কয়েকদিনে জমির শ্রেণি পরিবর্তন নিষিদ্ধ হলেও সরকারি বাংলোর ভেতরেই নতুন করে পুকুর কাটা হয়েছে। ঠিকাদারের মাধ্যমে রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-১ এসব কাজ করছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সিভিল সার্জনের বাংলোর ভেতরে ওয়াকওয়ে করতে ১৫ লাখ, প্রধান ফটক নির্মাণে ৫ লাখ, গ্যারেজ নির্মাণে ১৬ লাখ, ড্রেন নির্মাণে ১০ লাখ, সীমানা প্রাচীর করতে ২৯ লাখ ও মাটি ভরাট করতে ২৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। ড্রেন, সীমানা প্রাচীর, মাটি ভরাট ও একতলা একটি গ্যারেজ নির্মাণে এত টাকা বরাদ্দ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বাংলোর ভেতরে গ্যারেজ, প্রধান ফটক এবং সীমানা প্রাচীর থাকলেও নতুন করে এসব নির্মাণের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
সরেজমিন বাংলোর ভেতরে গিয়ে দেখা গেছে, উত্তর দিকের সীমানা প্রাচীরের পাশে একটি পুকুর কাটা হয়েছে নতুন করে। অথচ আইন অনুযায়ী, জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে পুকুর ভরাট কিংবা নতুন করে খনন নিষিদ্ধ। শ্রমিকরা জানান, নতুন করে খনন করা পুকরটির দৈর্ঘ্য ৭৫ মিটার। আর প্রস্থ ৪০ মিটার। এ পুকুরের পশ্চিম দিকে বিরল প্রজাতির দুটি বড় আকারের ‘জিলাপি’ গাছ কাটছেন ছয়জন শ্রমিক। তারা জানান, গাছ কাটার পর ডালপালা স্থানীয় একটি স’মিলে পাঠানো হচ্ছে। এই গাছের স্থানে হাঁটার রাস্তা হবে বলে শ্রমিকরা জানেন।
এসব কাজের তদারকির জন্য আছেন রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-১ এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী লিটন আহমেদ।
লিটন আহমেদ বলেন, অনেক দিন এই বাংলোর কোনো সংস্কারকাজ হয়নি। সিভিল সার্জনের অনুরোধে সংস্কার কাজ করা হচ্ছে। কয়েকজন ঠিকাদার কাজ করছেন। ১৫ দিন আগে কাজ শুরু হয়েছে। আরও একমাস কাজ চলবে।
গাছ কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এদিক দিয়ে ওয়াকওয়ে হবে। সেখানে সিভিল সার্জন হাঁটবেন। তাই গাছ কেটে জায়গাটি পরিষ্কার করা হবে। তিনি স্বীকার করেন, গাছ কাটার জন্য বনবিভাগের অনুমতি নেওয়া হয়নি।
স’মিলে গাছ পাঠানোর অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘এই গাছের কাঠ দিয়ে কোনো ফার্নিচার হবে না। লাকড়ি হিসেবেই বিক্রি করতে হবে। গাছ দুটি কাটতেই ছয়জন শ্রমিক লাগছে। তাদের পারিশ্রমিক দেওয়া হবে গাছ বিক্রির টাকা দিয়ে। গাছ সম্পূর্ণ কাটার পর নিলাম করে বিক্রি করা হবে বলে তিনি দাবি করেন।
আইন ভেঙে পুকুর খননের বিষয়ে জানতে চাইলে লিটন আহমেদ বলেন, ‘সব বাংলোয় একটা করে ছোট পুকুর থাকে। শুধু এখানেই ছিল না। সিভিল সার্জন স্যার অনুরোধ করলেন এই বলে যে, ওনার বাচ্চারা ঢাকায় থাকেন। রাজশাহী এলে সাঁতার কাটবে। তাই ছোট এ পুকুরটা করে দেওয়া হচ্ছে।’ তিনি স্বীকার করেন এখানে আগে পুকুর ছিল না। নতুন করে খনন করা হয়েছে।
তবে এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক বলেন, ‘ওটা ঠিক পুকুর না, ডোবা। আগে থেকেই ছিল, ভরাট হয়ে গিয়েছিল। সেটা সংস্কার করে নেওয়া হচ্ছে।’
গাছ কাটার বিষয়ে তিনি অবহিত নন দাবি করে সিভিল সার্জন বলেন, ‘গাছ তো কাটার কথা না। আমি গাছ কাটতে বলিনি। সরকারি গাছ কাটতে হলে বনবিভাগের অনুমতি নিতে হবে। সেটা নেওয়া হয়নি।’