বগুড়ার বয়স্ক ভাতার কার্ড নিয়ে নারী ইউপি সদস্যের প্রতারণা!

বগুড়া ব্যুরো :
প্রকাশ: ০৯ জুন ২০২৪, ০৮:০২ পিএম

ভুলু মোল্লা। ছবি : যুগান্তর
বগুড়ার গাবতলীতে শতবর্ষী ভুলু মোল্লাকে মৃত দেখিয়ে বয়স্ক ভাতা থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগ উঠেছে বালিয়াদীঘি ইউনিয়নের ১নং সংরক্ষিত আসনের মেম্বার (সদস্য) শ্যামলী আকতারের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় শুধু বঞ্চিত পরিবারে নয়; পুরো গ্রামের মানুষের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগে জানা গেছে, ভুলু মোল্লা বগুড়ার গাবতলী উপজেলার কলাকোপা উত্তরপাড়া গ্রামের মৃত পিয়ার মোল্লার ছেলে। তিনি গত ২০১১ সালের জুলাই মাসে বয়স্ক ভাতার কার্ড পান। চলতি মার্চ পর্যন্ত ভাতা পেলেও এপ্রিলে মোবাইল ফোনে ম্যাসেজ আসেনি। এ ব্যাপারে পরিবার থেকে বালিয়াদীঘি ইউনিয়নের ১,২,৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত সদস্য শ্যামলী আকতারকে জানালে তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বাস দেন। কিন্তু তিনি এ ব্যাপারে কোনো সহযোগিতা করেননি।
বিষয়টি নিয়ে গাবতলী উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে গেলে সেখান থেকে জানানো হয়, এ কার্ডধারী ভুলু মোল্লা মারা গেছেন। আর কার্ডটি আনসার নামে একজনের নামে বরাদ্দ হয়েছে।
ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইউনুস আলী ফকির ও সচিবের সাথে কথা বললে তারা জানান, এ বিষয়ে তাদের কিছু কার নেই।
গ্রামবাসীরা দাবি করেছেন, সংরক্ষিত ইউপি সদস্য শ্যামলী আকতার ইচ্ছাকৃত জীবিত ভুলু মোল্লাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ডটি অন্য একজনের নামে করে দিয়েছেন। বিনিময়ে ১০ হাজার টাকা উৎকোচ নেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে ইউপি সদস্য শ্যামলী আকতার জানান, নতুন করে বয়স্ক ভাতার কার্ডের নিবন্ধন শুরু হলে তিনি জানতে পারেন ভুলু মোল্লা মারা গেছেন। তাই তিনি ভুলুর কার্ড গ্রামের আনসারের নামে করে দিয়েছেন। পরে জানতে পারেন, ভুলু মোল্লা জীবিত।
ওই ইউপি সদস্য দাবি করেন, তিনি টাকার বিনিময়ে নয়; নিজের অর্থ খরচ করে জনগণের সেবা করে থাকেন। তাই তিনি ওই সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
গতকাল (শনিবার) বিকালে বালিয়াদীঘি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইউনুস আলী ফকির জানান, ওই নারী মেম্বার ভুলে কাজটি করেছেন। সবাই তাকে ক্ষমা করেছেন। আর ওই বৃদ্ধকে জীবিত দেখিয়ে তাকে কার্ডটি ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
গাবতলী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নাইম হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, নির্দিষ্ট সময় পরপর ইউনিয়ন পরিষদে ভাতাভোগীদের হালনাগাদ তথ্য সকল চাওয়া হয়। চেয়ারম্যান ও সদস্যরা যাচাই-বাছাই করে মৃত্যু সনদ বা প্রত্যয়নপত্র দেন। এছাড়া তারা নতুনদের তালিকা পাঠান। সে অনুসারে মৃতদের কার্ড বাতিল করে নতুনদের মধ্যে থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়।
তিনি অভিযোগ করেন, কিছু অসৎ জনপ্রতিনিধি অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে জীবিতকে মৃত দেখিয়ে অন্যকে তালিকাভুক্ত করিয়ে থাকেন। এর দায় সমাজসেবা কার্যালয়ের নয়।
বগুড়ার গাবতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাজ জাহান বন্যা বলেন, তিনি মৌখিকভাবে বৃদ্ধ ভুলু মোল্লাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড অন্যজনকে দেওয়ার কথা শুনেছেন। এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।