লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে প্রায় চারশত গ্রাহকের কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও এমপিএল রিসোর্স ইনস্টিটিউট। ওই এলাকার গৃহকর্মী, রিকশাচালক ও মেঘনার জেলে-সহ দরিদ্র গ্রাহকের কাছ থেকে এ টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে।
টাকা ফেরত পাওয়ার দাবিতে সোমবার দুপুরে উত্তর চরবংশী ইউপির খাসেরহাট বাজারের পাশে প্রবাসী আতিক উল্লাহর ভবনে তালা দিয়েছেন ক্ষুদ্ধ গ্রাহকরা।
খবর পেয়ে রায়পুর থানার ওসি ইয়াসিন ফারুখ মজুমদার তাৎক্ষণিক চরবংশী ইউপির হাজিমারা ফাড়ির এসআই সাখাওয়াত ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে গ্রাহকদের শান্ত করেন।
অভিযুক্ত এমপিএল রিসোর্স ইনস্টিটিউটের প্রধান কার্যালয় রাজধানীর মতিঝিল এলাকায়, যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর-(০১৮০৫৬ ও কোড নম্বর-১৬৮)। এক মাস আগে রায়পুরের উত্তর চরবংশী ইউপিতে অস্থায়ী কার্যালয় খুলেছে প্রতিষ্ঠানটি।
উত্তর চরবংশী ইউপির গ্রাহকরা জানান, প্রতি বই বাবদ ২০, ২৫ ও ৩০ হাজার টাকা সঞ্চয় রাখলে ১ থেকে ৪ লাখ টাকা ঋণ দেবে বলে আশ্বাস দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ওই প্রতারক কোম্পানি।
জেলে বাবুল মাঝি বলেন, সোমবার আমাদের ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। দুপুর ২টায় অফিসে এসে দেখি অফিসে কেউ নেই। তালা ঝুলছে। সঞ্চয় দেওয়ার নামে সবার কাছ থেকে ১৫, ২০, ৩০, ৩৫ হাজার টাকা করে নিয়ে যায়। অনেক কষ্ট করে নদীতে মাছ ধরে সংসার চালাই। ভাবলাম, সমিতিতে টাকা রেখে ঋণ নিয়ে একটা দোকান দিয়ে বসব। এখন আমাদের টাকা নিয়ে সমিতির লোকজন পালিয়েছে। আমাদের টাকা ফেরত চাই এবং প্রতারকদের বিচার চাই।
গৃহকর্মী নাজমা বেগম বলেন, জুন মাসের শেষে আমার স্বামী বিদেশ যাবেন। এজন্য ৩৫ হাজার টাকা জমা দিয়ে ৪ লাখ টাকা ঋণ নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছি। এখন অফিসে এসে দেখি তারা আমার ৩৫০০০ টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। এখন মানুষের কাছ থেকে ধার নেওয়া ৩৫ হাজার টাকা পরিশোধ করবো কিভাবে? স্বামী বিদেশ যাবে কিভাবে?
বাবুল মাঝি, নাজমার মতো আরও অনেকের সাথেই প্রতারণা করেছে এমপিএল রিসোর্স ইনস্টিটিউট। ওই ঋণ দানকারী সংস্থার বিরুদ্ধে থানায় মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ভুক্তোভোগী গ্রাহকরা।
ভবনের মালিক সৌদি প্রবাসী আতিকের ভাই সৌরভ বলেন, কোম্পানির কর্মকর্তা হাবিবুর রহমানের সঙ্গে ৮ হাজার টাকা মাসিক চুক্তিতে ভাড়া দিই। তারা গত এক মাস আগে বাসা ভাড়া নেয়। কিন্তু এভাবে তালা দিয়ে পালিয়ে যাবেন তা জানা ছিল না। রায়পুর থানা পুলিশ আমাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে গেছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত কোম্পানির উপজেলা ম্যানেজার হাবিবুর রহমানের ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেনি।
রায়পুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম জানান, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।
রায়পুর থানার ওসি ইয়াসিন ফারুখ মজুমদার বলেন, ঘটনা জানতে পেরে তাৎক্ষণিক দুইজন এসআইকে ঘটনাস্থল পাঠিয়ে উত্তেজিত গ্রাহকদের শান্ত করা হয়। গ্রাহকরা যদি মামলা করেন, তাহলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরান খান বলেন, এ বিষয়ে কেউ কিছুই জানাননি। খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।