ছবি: যুগান্তর
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় ১৫ মিনিট ঝড় ও প্রবল বৃষ্টি হয়েছে। এ সময় ঝড়ের কবলে পড়ে দুই নারী ও বৃষ্টিতে জমে থাকা পানিতে ডুবে আড়াই বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শনিবার ভোর ৫টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ঝড়ে উপজেলার দুই ইউনিয়নের ২০টি গ্রাম লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। কাঁচা বাড়িঘরের টিনের চালা উড়ে গেছে। গাছ ভেঙে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শতাধিক পরিবার।
মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার পাড়িয়া ইউনিয়নের শালডাঙ্গা গ্রামের পইনুল ইসলামের স্ত্রী ফরিদা বেগম, একই গ্রামের দবিরুল ইসলামের স্ত্রী জাহেদা বেগম ও একই উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের লালাপুর নয়াপাড়ার নাজমুল ইসলামের ছেলে নাঈম।
পইনুল ইসলাম বলেন, সকালে ফজরের নামাজ পড়তে মসজিদে গিয়েছিলাম। সেখানে থাকা অবস্থায় ঝড় শুরু হয়। বাড়িতে ছুটে এসে স্ত্রীকে খুঁজে না পেয়ে ডাকাডাকি শুরু করি। পরে বারান্দায় পড়া টিন ও ছাউনি সরিয়ে দেখি নিচে চাপা পড়ে আছে। তাকে উদ্ধার করে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
একই গ্রামের দবিরুল ইসলামের স্ত্রী জাহেদা ঝড়ের সময় তাদের ঘরের বারান্দায় মারা যান। দবিরুল ইসলাম জানান, তার স্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। ঝড়ের সময় ভয়ে তিনি স্ট্রোক করেছেন বলে ধারণা করছেন তারা।
ঝড়ের পর উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের লালাপুর নয়াপাড়ায় বাড়ির পাশের গর্তে জমা বৃষ্টির পানিতে পড়ে নাইম মারা যায়। নাইমের বাবা নাজমুল ইসলাম জানান, খেলতে গিয়ে তার ছেলে গর্তে পড়ে যায়।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, পাড়িয়া ইউনিয়নের তিলকড়া, শালডাঙ্গা, বঙ্গভিটা, লোহাড়া, বামুনিয়াসহ ১২টি গ্রাম, বড়বাড়ী ইউনিয়নের বেলহাড়া, বেলবাড়ী, বটের হাট, হরিপুরসহ আটটি গ্রাম ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশির ভাগ কাঁচা বাড়ির টিনের চালা উড়ে গেছে। গাছ ভেঙে পড়েছে ঘরের ওপর।
বড়বাড়ী ইউনিয়নের আধারদীঘি বাজারে পাঁচটি দোকান ও দুটি হোটেলের ওপর গাছ ভেঙে পড়েছে। ঘরের টিন নষ্টসহ সার, কীটনাশক ও সিমেন্ট ব্যবসায়ীদের ৫ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে।
আধারদীঘি বাজারের ব্যবসায়ী হাসান আলী জানান, বাজারে শতবর্ষী কিছু আমগাছ ছিল। ১৫ মিনিটের ঝড়ে সেই গাছের বড় ডাল ভেঙে পড়েছে দোকানের ওপর। এতে দোকানগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
লোহাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফজলুর রহমান জানান, ঝড়ে তাদের স্কুলের হলরুমের টিনের ছাউনি মাঠে এসে পড়েছে। বৈদ্যুতিক খুঁটির ওপর বিদ্যালয়টির প্রবেশদ্বারে গাছ ভেঙে পড়েছে।
বড়বাড়ী ইউনিয়নের আধারদীঘি থেকে হরিণমারী যাওয়ার রাস্তায় গাছ ভেঙে পড়ে যান চলাচল বন্ধ আছে। কয়েকজনকে গাছ কেটে সরিয়ে রাস্তা স্বাভাবিক করতে দেখা গেছে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বালিয়াডাঙ্গী জোনাল অফিসের সহকারী মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম জানান, ঝড়ে ৪০টিরও বেশি বৈদ্যুতিক খুঁটি পড়ে গেছে। অনেক স্থানে বৈদ্যুতিক তারের ওপর গাছ ভেঙে পড়েছে। বালিয়াডাঙ্গী বাজারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। বাকি সব এলাকায় বিদ্যুৎ বন্ধ।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন সোহেল বলেন, ঝড়ে মরিচ, বোরো ধান, পটোলসহ বিভিন্ন ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে খোঁজ নিচ্ছেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফছানা কাওছার বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান এবং আমাদের লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণে কাজ করছেন।
ঠাকুরগাঁও-২ আসনের সংসদ-সদস্য অধ্যক্ষ মাজহারুল ইসলাম সুজন ঝড়ে তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন। এলাকাগুলো পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।