Logo
Logo
×

সারাদেশ

সোনামসজিদ স্থলবন্দর

শুল্ক ফাঁকি দিতে পশুখাদ্য বলে খাবার গুড় আমদানি

Icon

রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৪, ১০:৩১ পিএম

শুল্ক ফাঁকি দিতে পশুখাদ্য বলে খাবার গুড় আমদানি

ফাইল ছবি

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে হঠাৎ ভারতীয় গুড় আমদানি বেড়ে গেছে। চলতি অর্থবছরে এ স্থলবন্দর দিয়ে গুড় এসেছে ১৩১ টন। তবে গুরুতর অভিযোগ হলো মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে মানুষের খাওয়ার গুড়কে কাগজেকলমে পশুখাদ্য দেখিয়ে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে। 

সংশ্লিষ্টরা এ অভিযোগ অস্বীকার করলেও গুড় আমদানি বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা অবাক কাস্টমস কর্মকর্তারাও। তারা বলছেন, এর আগের বছরগুলোয় এ স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে গুড় আমদানির রেকর্ড নেই। অন্যদিকে গত সপ্তাহে মিথ্যা ঘোষণায় আনা ফেব্রিক্সসহ বিভিন্ন শৌখিন পণ্য ধরা পড়ায় আমদানিকারক এক প্রতিষ্ঠানকে ৪৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। 

কবরস্থানে মিলল ২১ লাখ টাকা!

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে মানুষের খাওয়ার গুড়কে পশুখাদ্য চিটাগুড় হিসাবে দেখিয়ে আমদানি করে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার বিষয়ে গত বছরের শেষদিকে দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে এনবিআর চেয়ারম্যানকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। দুদক কোড জালিয়াতি করে শুল্ক ফাঁকি রোধে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছিল। 

ওই চিঠিতে বলা হয়েছিল, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স এসবি ট্রেডার্স ও মেসার্স ন্যাশনাল কনসালটেন্ট অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন যোগসাজশে মিথ্যা তথ্য ও ঘোষণা দিয়ে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। দুদক প্রাথমিক অনুসন্ধানেও এমন অভিযোগের সত্যতা পায়।

এদিকে সোনামসজিদ কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা ইব্রাহিম হোসেন দাবি করেছেন, ভারত থেকে প্রচুর পরিমাণে লিকুইড গুড় মানুষের খাওয়ারযোগ্য হিসাবে যথাযথ ঘোষণা দিয়ে আমদানি করা হয়। মিথ্যা ঘোষণায় আমদানির বিষয়টি তার জানা নেই। তবে এ ধরনের অভিযোগ ওঠার পর কাস্টমসের পক্ষ থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে গুড়ের নমুনা পাঠানো হয়েছিল। তারা জানিয়েছেন, এগুলো মানুষের খাওয়ার উপযোগী। কিন্তু আমদানিকারক চিটাগুড়ের শুল্ক দিয়েছেন বলে জানা গেছে। 

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে দেওয়া দুদকের ওই চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, গত বছরের ১৮ জানুয়ারি সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে ২ হাজার ৬১০ কার্টন গুড় আমদানি করে মেসার্স এসবি ট্রেডার্স। যার শুল্কায়ন মূল্য প্রতি টন ৩১০ ডলার। ওই বছরেরই ২১ জানুয়ারি আরেকটি বিল অব এন্ট্রির মাধ্যমে ২ হাজার ৭৬০ কার্টন গুড় আমদানি করে মেসার্স ন্যাশনাল কনসালটেন্ট অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন। যার শুল্কায়ন মূল্য টনপ্রতি ধরা হয় ২০০ ডলার। তবে যে কোডে শুল্কায়ন করে গুড় খালাস করা হয়, তা পশুখাদ্য চিটাগুড়ের কোড। 

উলে­খ্য, চিটাগুড় আমদানিতে টনপ্রতি শুল্ক দিতে হয় ২০০ মার্কিন ডলার। আর মানুষের খাওয়ার গুড় টনপ্রতি শুল্কের পরিমাণ ৪৫০ ডলার। এভাবেই কোড জালিয়াতি করে গুড় আমদানি করার ফলে টনপ্রতি ২৫০ ডলার বা ৩০ হাজার টাকা শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। এ গুড় আমদানির সঙ্গে একটি শক্তিশালী চক্র জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আমদানিকারক বলেছেন, গোদাগাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল ও তার এক ভাই বিভিন্ন আমদানিকারকের লাইন্সেস ব্যবহার করে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণে বিভিন্ন পণ্য আমদানি করছেন। তারা সোনামসজিদ ছাড়াও বেনাপোল বন্দরও ব্যবহার করেন এবং শুল্ক ফাঁকি দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নানা ধরনের পণ্য বিশেষ করে কোড জালিয়াতি করে এক পণ্যকে আরেক পণ্য দেখিয়ে আনছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার বেশি পণ্য এনে কম ঘোষণা দিয়েও তারা বিপুল রাজস্ব ফাঁকির সঙ্গে জড়িত। এমনকি ঢাকার ইসলামপুরের বিভিন্ন ব্যবসায়ীর নামেও তারা ফেব্রিকসসহ বিভিন্ন দামি বস্ত্রসামগ্রী আমদানি করেন। সোহেল-জুয়েল ভাইদের দাপটে অনেকটা অসহায় সাধারণ আমদানিকারকরা। এ চক্রের সঙ্গে শুল্ক বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তার রয়েছে অলিখিত গভীর সম্পর্ক। 

সোনামসজিদ আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রপের সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ বলেন, এ স্থলবন্দর দিয়ে অনেকেই নামে-বেনামে ব্যবসা করেন বলে জানি। হঠাৎ কেন গুড়ের আমদানি বেড়েছে বোঝা যাচ্ছে না।

এদিকে জানা যায়, কয়েকদিন আগে মিথ্যা ঘোষণায় অতিরিক্ত পণ্য আমদানির অভিযোগে পরিমা ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। রাজশাহী বিভাগীয় কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব হাসান ওই প্রতিষ্ঠানটিকে ৪৫ লাখ টাকা জরিমানা করেন। পণ্যগুলোর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট হিসাবে কাজ করেছে সানিট্রান্স ইন্টারন্যাশনাল। তবে অভিযোগ রয়েছে, গোদাগাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান ও তার ভাই জুয়েল মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত পণ্য আমদানি করে আসছেন। কিন্তু ওজন স্কেলে ধরা পড়ায় তারাই তড়িঘড়ি করে জরিমানা পরিশোধ করে ঘটনাটি ধামাচাপা দেন। চেয়ারম্যান সোহেলের প্রতিনিধি জুয়েল যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার দাবি, তারা এই চালানের সঙ্গে জড়িত নন।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম