Logo
Logo
×

সারাদেশ

সিলেটে ৫ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি, সুরমা উপচে প্লাবিত নগরীও

Icon

সিলেট ব্যুরো

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৪, ১০:৩৮ পিএম

সিলেটে ৫ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি, সুরমা উপচে প্লাবিত নগরীও

সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি অনেকটা অপরিবর্তিত। কোথাও কিছুটা উন্নতি আবার কোথাও অবনতি ঘটছে। সাত উপজেলায় পানিবন্দি ৫ লক্ষাধিক মানুষ। বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে প্রধান তিনটি নদীর পানি। বৃহস্পতিবার রাতে নদী উপচে পানি ঢুকতে শুরু করে সিলেট মহানগরীসহ নদীতীরবর্তী জনপদে। মহানগরীর তালতলা, মেন্দিবাগ, মাছিমপুরসহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার তালতলা ও মেন্দিবাগ-মাছিমপুর বন্যার পানিতে ডুবে ছিল। নগরীর কালিঘাটের বেশকিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্যাকবলিত। শেখঘাটে রাইসমিলসহ আশপাশের এলাকা ডুবে আছে। কাজির বাজারের পশুর হাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে টইটম্বুর। তালতলাস্থ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স কার্যালয়েও পানি প্রবেশ করেছে। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, মহানগরীর পানি নিষ্কাশনের নালা ও খালগুলো সুরমায় গিয়ে পড়েছে। সেগুলো দিয়ে পানি নিষ্কাশিত না হয়ে উলটো নগরীতে পানি ঢুকছে, যেহেতু সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

জেলা প্রশাসন জানায়, সিলেটের ৭টি উপজেলার ৪২টি ইউনিয়নের ৫ লাখ ৩৩ হাজার ২০২ জন বন্যাকবলিত। তাদের জন্য ৫৪৭টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। মোট ৪ হাজার ৮০২ জন আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন। সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান জানান, বন্যাকবলিতদের উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তর অব্যাহত আছে। শুকনো ও রান্না করা খাবার এবং বিশুদ্ধ পানি বিতরণ কার্যক্রম চলমান আছে। ইউনিয়নভিত্তিক চিকিৎসক দল কাজ করছে। 

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ জানান, নতুন করে বৃষ্টি না হওয়ায় পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। বৃষ্টিপাত আর পাহাড়ি ঢল না হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর জানান, যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সাহায্যের জন্য কন্ট্রোল রুমের ০১৯৫৮২৮৪৮০০ নম্বরে ২৪ ঘণ্টা কল করা যাবে। 

জেলা প্রশাসনের তথ্যানুযায়ী, বন্যায় সবচেয়ে বেশি পানিবন্দি হয়েছে গোয়াইনঘাট উপজেলা। উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নই বন্যাকবলিত হয়েছে আর ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ২৩৫৬ জন মানুষ। জৈন্তাপুর উপজেলার ৩টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে ৬৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন। উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ৪৮টি। যার মধ্যে ৬৭৫ জন আশ্রয় নিয়েছেন। জকিগঞ্জ উপজেলায় ৮টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়েছেন লক্ষাধিক লোক এবং ৫৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে শতাধিক পরিবার।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়েছেন ৯৩ হাজার জন। উপজেলায় ৩৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ১৩৫ জন। কানাইঘাট উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে ৯টি প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়েছেন ৮০৬০০ জন আর ৩১টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ১৪৬৬ জন। বিয়ানীবাজার উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫টি বন্যা আক্রান্ত হয়েছে। এখানে পানিবন্দি হয়েছেন ৫৫০০ জন এবং আশ্রয় নিয়েছেন ৬০ জন। গোলাপগঞ্জ উপজেলার ১টি ইউনিয়নে বন্যাকবলিত হয়েছেন ৩৫০০ জন। যার মধ্যে ১৫টি পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন।

এদিকে, বিএনপির অভিযোগ নদ-নদী খনন না করায় এমন বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা বন্যাদুর্গতদের উদ্ধার ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে চলেছেন। খাবার ও টাকা বিতরণ করছেন। তিনি বলেন, যথাসময়ে নদ-নদী খনন হলে বন্যা এত ভয়াবহ রূপ নিত না। খাবার ও টাকা বিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী, অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ, জৈন্তাপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজ আহমদ, নিজপাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইন্তাজ আলী, দরবস্ত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাহারুল আলম বাহার, জেলা বিএনপির মৎস্য উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক জালাল খান, সহদপ্তর সম্পাদক মাহবুব আলম, সহপ্রচার সম্পাদক শাহীন আলম প্রমুখ। 

বাহুবলে পানিবন্দি কয়েক গ্রামের মানুষ: বাহুবল (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, বাহুবলে করাঙ্গী নদীর বাঁধ ভেঙে কয়েক গ্রামের মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। তলিয়ে গেছে বিভিন্ন ফসল। টানা দুদিনের বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে শুক্রবার ভোরে বিভিন্ন স্থানে করাঙ্গী নদীর বাঁধ ভেঙে পড়ে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনজুর আহসান বলেন, আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। বাঁধ রক্ষার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড দ্রুত কাজ করছে।

দোয়ারাবাজারের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত: দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, তিন দিনের টানা বৃষ্টিপাত ও ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শুক্রবার ভোর থেকে প্লাবিত হয়ে পড়েছে দোয়ারাবাজার উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। তলিয়ে গেছে হাওড়, মাঠঘাট, গোচারণ ভূমি, রবিশস্য ও ইরি-বোরো ফসলি জমি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম