বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণ বন্ধ, ছাত্রলীগ নেতা সুমনের সঙ্গে ছিল সন্ত্রাসী ৩ গ্রুপ
রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ৩০ মে ২০২৪, ০৮:০৪ পিএম
১০ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার ম্যুরাল নির্মাণ কাজ বন্ধের নেতৃত্বে ছিলেন রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া পশ্চিম শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুমন হোসেন। রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রাঙ্গণে নির্মাণাধীন ম্যুরালের কাজ বন্ধের সময় ছাত্রলীগ নেতা সুমন হোসেনের সঙ্গে শালবাগান, সপুরা ও বিহারী কলোনির তিনটি সন্ত্রাসী গ্রুপ গিয়েছিল। বিভিন্ন সংস্থা ও পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে এ তথ্য উঠে এসেছে।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) বোয়ালিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হুমায়ুন কবীর বলেন, আমরা প্রাথমিক তদন্ত করেছি। সন্ত্রাসীদের বিষয়ে তথ্য পেয়েছি; কিন্তু মামলা দায়ের না হওয়া পর্যন্ত কারো নাম প্রকাশ করা যাবে না।
তিনি আরও জানান, চাঁদার দাবিতে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়ার সঙ্গে এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি।
পাউবোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, চাঁদা দাবির সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা সুমন হোসেনের নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মোস্তাক, রফিক ও ১৫নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি মাহবুবুল হক জনিসহ সন্ত্রাসীরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। জানা গেছে, পাউবো থেকে ইতিমধ্যে সিসিটিভি ফুটেজ পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছে সরবরাহ করা হয়েছে; কিন্তু উচ্চ আদালতের স্বপ্রণোদিত রুল ও আদেশের সাত দিনের মধ্যে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের কথা বলা হলেও ইতোমধ্যে তিন দিন অতিক্রান্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো সন্ত্রাসী গ্রেফতার হয়নি। উপরন্তু বিভিন্ন প্রভাবশালী মহল থেকে সন্ত্রাসীদের পক্ষে অভিযোগ তুলে নিতে চাপ আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশও উচ্চ আদালতের আদেশ দ্রুত সময়ে পরিপালনে অনীহা দেখাচ্ছে।
অভিযোগে জানা গেছে, গত ২৬ মে দুপুরে ছাত্রলীগ নেতা সুমন হোসেনের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী নগরীর সপুরাস্থ পাউবোর বিভাগীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণে যায় যেখানে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার ম্যুরাল নির্মাণ করা হচ্ছে। সন্ত্রাসীরা প্রথমে নির্মাণ কাজে বাধা প্রধান করে ও শ্রমিকদের মারধর করে তাড়িয়ে দেয়। দাবিকৃত ১০ লাখ টাকা চাঁদা না পেলে পাউবো কার্যালয় আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি প্রদান করেন। নির্মাণ ঠিকাদার খন্দকার কনস্ট্রাকশানের প্রতিনিধিকেও ভয়ভীতি দেখানো হয়।
তবে গত ২৮ মে বিচারপতি মো. সেলিম ও বিচারপতি শাহেদ নুর উদ্দিনের হাইকোর্ট বেঞ্চ জনস্বার্থে স্বপ্রণোদিত হয়ে সাত দিনের মধ্যে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের নির্দেশ দিলে সন্ত্রাসীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে।
রাজশাহী পাউবো সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে পাউবো প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার ম্যুরাল নির্মাণ শুরু হয় মে মাসের মাঝামাঝি। ঠিকাদার খন্দকার কনস্ট্রাকশনের মালিক খন্দকার হাসান কবির কাজটি পান। তিনি চিকিৎসার জন্য বিদেশে থাকায় তার প্রতিনিধি কাজটি তদারক করছেন।
সূত্রমতে, কাজটি শুরু হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে তিনটি সন্ত্রাসী গ্রুপ পাউবো কার্যালয়ে ঢুকে ঈদকে সামনে রেখে তাদের জন্য ১০ লাখ টাকা দিতে হবে বলে প্রথমদিন হুমকি দিয়ে যায়। নির্ধারিত সময়ে টাকা না পাওয়ায় গত ২৬ মে তারা দলবেঁধে পাউবোতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন। টাকা না পেলে তারা ম্যুরাল গুঁড়িয়ে দেবে বলেও হুমকি দিয়ে যায়।
জানা যায়, ঘটনার দিন রাতেই পাউবো কর্মকর্তা সুকেশ কুমার রায় আরএমপির বোয়ালিয়া মডেল থানায় একটি অভিযোগ দিয়ে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করেন; কিন্তু পুলিশ এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তবে উচ্চ আদালতের রুল জারির পর ছাত্রলীগ নেতা সুমন হোসেনসহ সন্ত্রাসীরা ফোন বন্ধ করে গা-ঢাকা দেন।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্রলীগ নেতা সুমন হোসেনের বাড়ি রাজশাহীর বাইরে। সম্প্রতি তাকে বোয়ালিয়া পশ্চিম শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। সুমন আগে রাজশাহী স্টেডিয়ামে হাউজির লাইনম্যান হিসেবে কাজ করতেন। মোস্তাক আগে যুবদল করতেন। বছর খানেক আগে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতার শেল্টারে যায়।
এদিকে ম্যুরাল নির্মাণ বন্ধের ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, ওইদিন সন্ত্রাসী দলে ছিলেন ১৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৌরভ সেখ, ১৫নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শাহিন হোসেন কালু, ১৫নং ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি মাহবুবুল হক জনি ও ছোট জনিসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ নেতারা।
অভিযোগ রয়েছে- এসব সন্ত্রাসীদের অধিকাংশই রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের দুইজন ওয়ার্ড কাউন্সিলরের পৃষ্ঠপোষকতায় নগরীর শালবাগান, সপুরা, বিহারি কলোনি, রেলওয়ে, পাউবো ও পাসপোর্ট অফিসসহ বিভিন্ন দপ্তরে চাঁদাবাজি করে। এসব সন্ত্রাসীর প্রত্যেকের নামে হাফ ডজন করে সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।