মাত্র কয়েক বছরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনে ফাটল
দাগনভূঞা (ফেনী) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৪ মে ২০২৪, ০৭:৫৯ পিএম
পলেস্তারা খসে খসে পড়ছে, ফেটে একাকার ভবনের বেইজমেন্ট পিলার, দোতলার বারান্দা ও সিঁড়ি। বর্ষায় ছাদ ছুঁইয়ে পড়ে বৃষ্টির পানি। ভবনজুড়ে দেখা দিয়েছে ছোট-বড় অনেক ফাটল। সরেজমিন দেখা যায় ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার ইয়াকুবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একমাত্র দ্বিতল ভবনের এ দৃশ্য।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মাত্র ১৩ বছরের ব্যবধানে অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভবনটি প্রায় ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের অর্থায়নে নির্মিত হয় বিদ্যালয়টির নিচতলা।
এর ১ বছর পর ২০১০-১১ অর্থবছরে নির্মাণ করা হয় দোতলা। নিম্নমানের কাজের অভিযোগ তুলে নির্মাণকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-অভিভাবক ও এলাকাবাসী প্রতিবাদ করলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অভিযোগ রয়েছে প্রভাবশালীদের দাপটে সংশ্লিষ্ট বিভাগের যথাযথ তদারকির অভাবে দায়সারাভাবেই ভবনটি নির্মাণ করেন আলাউদ্দিন ও কামাল উদ্দিন নামের দুই ঠিকাদার।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানিয়েছেন, গত বছর ১৪ ডিসেম্বর বিদ্যালয় চলাকালীন বিদ্যালয়ে ফাটল দেখা দেয়। একাধিক জায়গায় ফাটল থাকায় বিদ্যালয়টি প্রায় ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পাশেই রয়েছে জরাজীর্ণ একটি ছোট টিনশেড পরিত্যক্ত ঘর। মেরামত না করে টিনের ঘরে চাইলেও শ্রেণি কার্যক্রম চালানো অসম্ভব। তাই বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই চালিয়ে নিতে হবে শ্রেণি কার্যক্রম। উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ ভবন পরিদর্শন করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ থেকে ১ বান্ডিল ঢেউটিন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন।
তিনি জানিয়েছেন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিস কর্তৃপক্ষ বিদ্যালয় পরিদর্শনে করেছেন। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে এটি রিপোর্ট আকারে জানাব।
বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ সদস্য নজরুল ইসলাম কিরণ বলেন, আমরা আপাতত স্থানীয়ভাবে টিনশেড ঘরটি মেরামতের কথা ভাবছি; কিন্তু এতে তো সব শ্রেণির পাঠদান সম্ভব নয়।
বিদ্যালয়ের এক অভিভাবক জানান, বিদ্যালয়ের এ ভবনটি ব্যতীত কোনো ভবন নেই। অতএব এই ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ে আমি আমার ছেলেকে আর রাখব না। আমি তাকে অন্যত্র ভর্তি করিয়ে দেব।
বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকরা যুগান্তরকে জানান, আমরা খুবই আতঙ্কের মধ্যে আছি। উপরন্তু ২৫০ জন শিক্ষার্থীর পাঠদান ব্যাহতসহ জীবন ঝুঁকিতে রয়েছি। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে শ্রেণি কার্যক্রম চালাতে বাধ্য হচ্ছি।
জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের সহ-সভাপতি আলী মর্তুজা বলেন, আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দ্রুত সময়ে বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের দাবি করছি। একই সঙ্গে মাত্র ১০ বছরে কিভাবে একটি ভবন জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিবেদিতা চাকমা যুগান্তরকে জানান, বিদ্যালয়টি সংস্কার বা বিকল্প ব্যবস্থার জন্য শিগগিরই ব্যবস্থার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।