Logo
Logo
×

সারাদেশ

চরাঞ্চলের কৃষকের ঘরে ৩ হাজার কোটি টাকার ফসল

মো. নাজমুল হুদা নাসিম

মো. নাজমুল হুদা নাসিম

প্রকাশ: ২৩ মে ২০২৪, ১০:৩৯ পিএম

চরাঞ্চলের কৃষকের ঘরে ৩ হাজার কোটি টাকার ফসল

বগুড়া সারিয়াকান্দির বিভিন্ন চরাঞ্চলের কৃষকের ঘরে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার ফসলে উঠেছে। এর অধিকাংশই এসেছে মরিচ, পেঁয়াজ, পাট, ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়া থেকে। এ ফসল চাষ করে অনেকে কৃষকের ভাগ্য ফিরেছে।

উপজেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের দেখে আরও কৃষক চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। তাদের কৃষি বিভাগ থেকে সবধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিস ও অন্যান্য সূত্র জানায়, এ উপজেলার ১২ ইউনিয়নের মধ্যে চারটি সম্পূর্ণ ও ছয়টি আংশিক যমুনা নদীগর্ভে। তাই এ উপজেলায় বিশাল আয়তনের চরাঞ্চল রয়েছে। আগে এসব চরাঞ্চল অনাবাদী থাকত। বর্তমানে কৃষকরা ডিজেল বা বিদ্যুৎচালিত শ্যালোমেশিনের মাধ্যমে চরাভূমিতে সেচ দিয়ে নানা ধরনের ফসল চাষাবাদ করছেন।

প্রতি বছর উজান থেকে বন্যার পানিতে বয়ে আসা বেলে দোআঁশ মাটিতে বেশ কিছু ফসলের ভালো ফলন হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরেই এ উপজেলার চরাঞ্চলে দেশি উফশি জাতের মরিচের চাষ হয়। দেশি উফশি জাতের মরিচের চেয়ে হাইব্রিড জাতের মরিচের লাভ সবচেয়ে বেশি। তাই কৃষকরা এখন হাইব্রিড মরিচ চাষের দিকে ঝুঁকছেন।

গত কয়েক বছর ধরেই কৃষকেরা চরাঞ্চলের পতিত জমিতে ব্যাপক হারে ভুট্টার আবাদ করেছেন। এখন যা তাদের ঘরে উঠেছে। এদিকে গত দুই বছর ধরে এ উপজেলায় হাইব্রিড জাতের মিষ্টি কুমড়া চাষে কৃষকেরা ব্যাপক সফল হয়েছেন।

এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে গ্রীষ্ম মৌসুমে বিশালাকার আয়তনের জমিতে পাট চাষ হয়। এখন চরাঞ্চলে এসব ফসল ছাড়াও নানা ধরনের ফসল চাষাবাদ হচ্ছে।

সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, এ বছর উপজেলায় তিন হাজার ৩১০ হেক্টর জমিতে নয় হাজার ২৬৮ টন মরিচ উৎপন্ন হয়েছে, যার বাজার মূল্য ২৭৮ কোটি টাকার বেশি। লক্ষ্যমাত্রার বেশি আট হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে ৮৫ হাজার ২০০ টন ভুট্টা উৎপন্ন হয়েছে; যার মূল্য ২৫৫ কোটি টাকার বেশি।

গত বছর উপজেলায় পাঁচ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে ১৪ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন পাট উৎপন্ন হয়েছে; যার মূল্য ৯৪২ কোটি টাকার বেশি। এ বছর এ উপজেলায় এক হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে ১৮ হাজার ৯৬০ টন পেঁয়াজ উৎপন্ন হয়েছে; যার মূল্য ৭৫৮ কোটি টাকার বেশি। উপজেলায় ১১০ হেক্টর জমিতে দুই হাজার ২০০ টন মিষ্টি কুমড়া উৎপন্ন হয়েছে; যার মূল্য সাড়ে চার কোটি টাকা।

এছাড়া এক হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে কাউন, ১১০ হেক্টর জমিতে চিনা (খেরাছি), ৮১০ হেক্টর জমিতে এক হাজার ২১৫ টন চিনাবাদাম, ১৪ হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে ধান, ৭১০ হেক্টর জমিতে গম, ৫৪০ হেক্টর জমিতে মাসকলাই, ৯১৫ হেক্টর জমিতে মসুর ডাল উৎপন্ন হয়েছে।

তাছাড়া মিষ্টি আলু, সরিষা, রসুন, খেসারি, ছোলা, মটর, অড়হর, মুগ, তিল, তিষি, সয়াবিন, সূর্যমুখি, কেশর, আলু, আখ, তরমুজ, বাঙ্গি, পেঁপে, কলাসহ নানা জাতের ফসল চরাঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে চাষ হয়েছে। এসব ফসলের ৭০ শতাংশই চরাঞ্চলে উৎপাদিত হয়।

উপজেলার কর্ণিবাড়ি ইউনিয়নের ইন্দুরমারা চরের শিপন মিয়া জানান, বন্যার মধ্যে তারা খুব কষ্টে থাকলেও বন্যা পরবর্তী নানা ধরনের ফসলে এখন তাদের বাড়ি ভরে গেছে। এসব ফসল বিক্রি করে তারা ব্যাপকভাবে লাভবান হচ্ছেন। আগে চরের মানুষরা না খেয়ে থাকলেও এখন থাকেন না। অনেকেই চরের ভেতরে দালান বাড়ি করেছেন।

সারিয়াকান্দি উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম জানান, তাদের পরামর্শে আধুনিক কৃষিযন্ত্র ব্যবহার করে এবং সঠিকমাত্রায় সার ও সেচ দিয়ে কৃষকরা নানা ধরনের উচ্চ ফলনশীল জাতের ফসল চাষ করে ভালো ফলন ঘরে তুলছেন। এ উপজেলার চরাঞ্চল এখন আর অভিশাপ নয়। আশীর্বাদে পরিণত হয়েছে। চরাঞ্চলের মানুষ বন্যার কয়েক মাস কষ্টে থাকলেও বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর জমিতে নানা ধরনের ফসল চাষ করে ব্যাপকভাবে লাভবান হচ্ছেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম