শ্রেণিকক্ষে ‘ভূত আতঙ্ক’, ১৫ ছাত্রী অসুস্থ
নগরকান্দা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৪, ০৭:৩১ পিএম
ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলা সদরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আক্রামুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে অজ্ঞাত কারণে (ভূত আতঙ্কে) অন্তত ১৫ ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এদের উদ্ধার করে নগরকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও এলাকাজুড়ে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।
রোববার দুপুরে বিদ্যালয়ের ক্লাশে এক ছাত্রী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে, মুহূর্তের মধ্যে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। বিদ্যালয়ে আসা শিক্ষার্থীরা একের পর এক অসুস্থ হতে শুরু করে। তবে কেন অসুস্থ হচ্ছে, কেনইবা অস্বাভাবিক আচরণ করছে তার সঠিক কারণ বলতে পারেনি শিক্ষার্থীরা।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যেয়ে দেখা যায়, একে একে অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থী মুহূর্তেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। কেউ কান্না করছে, কেউ আবার চিৎকার দিয়ে দৌড়ে পালাচ্ছে, আবার কেউ কেউ জ্ঞান হারিয়ে শ্রেণিকক্ষের মেঝেতেই লুটিয়ে পড়েছে। বাস্তবে দেখলে যে কেউ মনে করবে কোনো আধ্যাত্মিক শক্তির প্রভাবে হচ্ছে সবকিছু।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দিচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা। তারা বলছে- বিদ্যালয়ে আকস্মিকভাবে কোনো অলৌকিক শক্তির প্রভাব পড়েছে। কেউ কেউ বলেছে, তারা সাদা কাপড় পড়া ভূত দেখেছে, কারো হাত ধরে টেনেছে, কাউকে ধাক্কা দিয়েছে; যার ফলে অসুস্থতার পরপরই কেউ কেউ উলটাপালটা কথাবার্তাও বলছে। এ সময় শিক্ষার্থীদের অস্বাভাবিক আচরণ ও শারীরিক অস্বস্তি এবং ছোটাছুটি শুরু হয়।
এদিকে এ ঘটনায় অসুস্থ হওয়া শিক্ষার্থীদের স্বজনরা বিদ্যালয়ে এবং হাসপাতালে গিয়ে ভিড় করছেন। কেউ কেউ সন্তানের এমন অসুস্থতা দেখে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এ ঘটনায় অসুস্থ শিক্ষার্থীরা অনেকেই চিকিৎসা নিয়েছে হাসপাতালে, বাকিদের অভিভাবকদের মাধ্যমে নিজ নিজ বাড়িতে পাঠান বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জয়দেব কুমার সাহা বলেন, কিছু একটা দেখে আতঙ্কিত হতে পারে। এমন অজ্ঞাত কারণে অসুস্থতার ঘটনা অনেক সময় ঘটে, তবে এটি কোনো ধরনের অলৌকিক বিষয় নয়। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে এ সমস্যার একটি সুন্দর ব্যাখ্যা আছে। এটির বাংলা আক্ষরিক নাম গণমনস্তাত্ত্বিক অসুস্থতা বা ‘ম্যাস হিস্টিরিয়া’। শিশুরা গণমনস্তাত্ত্বিক রোগে আক্রান্ত হতে পারে, অর্থাৎ একজনকে দেখে আরেকজনের ভয় হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই (কিশোর—কিশোরী) বয়সের মধ্যে এমন প্রভাব বেশি দেখা যায়, আবার এ সমস্যা অন্য যে কারও হতে পারে। এমন সময়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ওই সব কিশোর—কিশোরীদের কাউন্সেলিং করা। তাদের এটা বুঝাতে হবে তারা যা দেখছে বা ভাবছে, সেটি সম্পূর্ণ অবাস্তব একটি বিষয়। এ ধরনের ঘটনায় আতঙ্কিত না হয়ে শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে বুঝিয়ে শান্ত রাখাটাই উত্তম।
নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাফী বিন কবির, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (নগরকান্দা সার্কেল) আসাদুজ্জামান শাকিল, নগরকান্দা থানার ওসি আমিনুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বলে জানা গেছে।
নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাফী বিন কবির বলেন, এ বিষয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।