বান্দরবানের রুমায় কেএনএফ সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর গোলাগুলিতে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের ৩ অস্ত্রধারীর মৃত্যু হয়েছে। এ সময় সেনাবাহিনীর সদস্যরা সন্ত্রাসীদের আস্তানা থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে। রোববার সকালে রুমা-রোয়াংছড়ি সীমান্তবর্তী ডেবাছড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

তবে গোলাগুলির কথা স্বীকার করলেও এখনো কোনো লাশ পুলিশ পায়নি বলে জানিয়েছেন বান্দরবানের পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন।

স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, জেলার রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী ডেবাছড়া এলাকায় পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফের) আস্তানায় অভিযান চালায় নিরাপত্তা বাহিনী। এ সময় কেএনএফের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর ব্যাপক গোলাগুলি হয়। থেমে থেমে কয়েক দফায় গোলাগুলির ঘটনায় কেএনএফের ৩ সশস্ত্র সদস্যের মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে দুজন ঘটনাস্থলে তাৎক্ষণিক এবং আরেকজন আহত অবস্থায় মারা গেছেন।

নিহতরা হলেন- রোয়াংছড়ি উপজেলার দুর্গম রনিনপাড়া সংলগ্ন ফিয়াংপিদৌং পাড়ার বাসিন্দার এডিথাং বম (২৪), রুয়ালসাং নুয়াম বম (২৩) এবং রুয়ালমিন লিয়ান বম (২০); তবে ঘটনাস্থল থেকে নিহতদের লাশ যৌথ বাহিনীর সদস্যরা রুমা সদরে নিয়ে আসছে বলে জানা গেছে। 

এদিকে গোলাগুলিতে তিনজনের মৃত্যুর পর কেএনএফের সশস্ত্র সংগঠনের অন্য সদস্যরা আস্তানা ছেড়ে পাহাড়ের গহীন অরণ্যে পালিয়ে যায়। এ সময় ঘটনাস্থল কেএনএফ আস্তানা থেকে ৩টি আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি, কেএনএফের পোশাক এবং সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যৌথ বাহিনীর দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, স্থানীয় সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কেএনএফ (কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট) যৌথ বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। কৌশলে অভিযানের জাল বিছিয়ে কেএনএফের অস্ত্রধারীদের রুমা-রোয়াংছড়ি সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে ঘিরে ফেলেছে। গোলাগুলিতে কেএনএফের ৩ জনের মৃত্যুর ঘটনাস্থল হলো রনিনপাড়া থেকে আট কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের খাদে ডেবাছড়া ঝিরিতে।

তবে গোলাগুলির বিষয়টি নিশ্চিত করে বান্দরবানের পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন জানান, রুমা-রোয়াংছড়ি সীমান্তবর্তী এলাকায় যৌথ বাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলির খবর পেয়েছি। গুলিতে কয়েকজন হতাহতের কথা শোনা গেলে এখনো পর্যন্ত কোনো লাশ পুলিশ পায়নি। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশের টিম ফিরে এলে বিস্তারিত জানানো যাবে।

এ প্রসঙ্গে রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আতিকুর রহমান জানান, যৌথ অভিযানে কেএনএফের ৩ সদস্য নিহত হয়েছে। ঘটনাস্থল রোয়াংছড়ি-রুমা সীমান্তবর্তী ডেবাছড়া ঝিরি। অভিযানে রুমা সেনা জোনের সদস্যরা অংশ নিয়েছে। অভিযান থেকে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা ফিরলে বিস্তারিত জানানো সম্ভব হবে।

প্রসঙ্গত, গত ৭ মে রুমা উপজেলার দুর্গম দার্জিলিংপাড়ায় সেনাবাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলিতে কেএনএফের ১ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসীর মৃত্যু হয়। এর আগে গত ২৮ এপ্রিল রুমা উপজেলার রেমাক্রী প্রাংসা ইউনিয়নের জঙ্গলে সেনাবাহিনীর সঙ্গে কেএনএফের গোলাগুলিতে ২ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসীর মৃত্যু হয়েছিল। তার আগে গত ২২ এপ্রিল রুমা উপজেলার দুর্গম মুনলাইপাড়ায় সেনাবাহিনী সঙ্গে গোলাগুলিতে কেএনএফের ১ জন সশস্ত্র সদস্যের মারা যায়। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে কেএনএফ সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণে অস্ত্র-গোলাবারুদ ও সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

এদিকে গত ২ ও ৩ মে রুমা-থানচিতে ব্যাংক ডাকাতি, হামলা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৪টি অস্ত্র লুট, ব্যাংকের অর্থ ও ব্যাংক ম্যানেজার অপহরণের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৯টি মামলা হয়েছে। তারমধ্যে থানচিতে ৪টি ও রুমায় ৫টি মামলায় ৮৬ জনকে কেএনএফের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করে আদালতের নির্দেশে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে ২৫ জন নারীও রয়েছেন।