Logo
Logo
×

সারাদেশ

গাঁজা সেবনে নিষেধ করায় ছাত্রলীগের মারধর, দোকান লুট

Icon

রাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৪, ০১:০৮ এএম

গাঁজা সেবনে নিষেধ করায় ছাত্রলীগের মারধর, দোকান লুট

গাঁজা সেবনে নিষেধ করায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে আহত করেছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এ সময় গাঁজা সেবনকারী ছাত্রলীগের এক কর্মীও আহত হন।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল চারটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে এ ঘটনা ঘটে। এসময় ঘটনাস্থলে থাকা এক দোকান থেকে টাকা লুটেরও অভিযোগ উঠেছে।

এ ঘটনায় আহতদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আহত দুই শিক্ষার্থী হলেন, মেহেদী হাসান পুলক ও আবু অম্বর ফয়েজি অপু। পুলক বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও অপু চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

অন্যদিকে আহত ছাত্রলীগ কর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সৌরভ শেখ বন্ধন।

এ ঘটনায় জড়িত অন্য ছাত্রলীগ কর্মীরা হলেন- তাশরিফ আহমেদ, রাহাত হাসান খান সময়, আল ফারাবি, সিফাত সালাম, শামসুল আরিফিন খান সানি, আজিজুল হক আকাশ, তাসিন তানভীর, মৃদুল প্রমুখ। এ সময় তাদের সঙ্গে অন্তত ৪০ জন নেতাকর্মী মারধরে অংশ নেন। জড়িত ছাত্রলীগ নেতা কর্মীরা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বিকেল চারটার দিকে চারুকলা অনুষদের মুক্তমঞ্চের পিছনে গাজা সেবন করছিল বন্ধন ও তার দুই বন্ধু। এসময় সেখানে গাঁজা সেবন করতে নিষেধ করেন চারুকলার কয়েকজন শিক্ষার্থী। তখন তাদের সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীদের বাগবিতণ্ডা হয়। পরে চারুকলার শিক্ষার্থীরা আহত অপু এবং পুলককে জানান। তারা সেখানে আসলে দুপক্ষের মাঝে হাতাহাতি হয়। এসময় বন্ধনের মাথা ফেটে যায়।

এঘটনা বন্ধন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের জানালে, ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সেখানে উপস্থিত হয়ে অপুর মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে এবং অপুকে রড ও লাঠিশোঠা দিয়ে মারধর শুরু করে। পুলক পাশের একটি দোকানে আশ্রয় নিয়ে সেখানে গিয়ে তাকে মারধর করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

এসময় তারা দোকানদার রফিককে ধাক্কা দিয়ে দোকানের ক্যাশবক্স থেকে নগদ আনুমানিক ছয় হাজার টাকা ছিনতাই করে বলে অভিযোগ করেন ওই দোকানদার। পরে আহতদের চিকিৎসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

এ বিষয়ে আহত মেহেদি হাসান পুলক বলেন, ‘এক ছোট ভাই আমাকে ফোন দিয়ে বলে, অপু ভাইয়ের সাথে ক্যাম্পাসের ছোট ভাইয়েরা খারাপ ব্যবহার করছে ভাই একটু আসেন। আমি যাওয়ার পর ওরা আমার দিকে তেড়ে এসে আমাকে ধাক্কা মারে। এরপর ওরা সবাই মিলে আমাকে মারা শুরু করে।’

আহত আবু অম্বর ফয়েজি অপু বলেন, ‘আমার কয়েকটা ছোটভাই বন্ধনকে গাঁজা সেবন করতে নিষেধ করায় তাদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এক পর্যায়ে আমি সেখানে গিয়ে তাদেরকে শান্ত করার চেষ্টা করি। এসময় বন্ধন ও তার বন্ধুরা আমার ওপর চড়াও হয়। পরে সে আমাকে আটকে রেখে তার বন্ধুদের ফোন দেয়। তারা এসে অতর্কিতভাবে আমাদেরকে মারধর শুরু করে।’

এ বিষয়ে গাঁজা সেবনকারী ছাত্রলীগকর্মী সৌরভ শেখ বন্ধন বলেন, ‘আমি ও আমার বন্ধুরা চারুকলায় ঘুরতে গিয়েছিলাম। ওখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরে একজন শিক্ষার্থী এসে জিজ্ঞেসা করে তোরা কারা? আমরা আমাদের পরিচয় দেই। পরিচয় দেওয়ার পরেও তারা বলে তোরা এখানে কী করতে আসছিস? এরপরে তার সাথে কথা কাটাকাটি হয়। তারপর সেখানে অপু ভাই ও পুলক ভাই আসে। তারা আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। তারা বলে আমাদের বাসা কাজলায়, চারুকলায় তোরা আমাদের চিনিস না? এভাবে কথা বলতে বলতে তারা আমার জামা-কাপড় ছিড়ে ফেলে, সামনে থেকে মুখে চড়-থাপ্পর, ঘুসি মারে। পেছন থেকে একজন ধারালো অস্ত্র দিয়ে মেরে আমার মাথা ফাটিয়ে দেয়। আমার বন্ধুদের ফোন দিই তারা এসে আমাকে মেডিকেলে নিয়ে আসে।’

গাঁজা সেবনের বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘গাঁজা নয়, আমরা সিগারেট খাচ্ছিলাম।’

মারধরে জড়িত ছাত্রলীগ কর্মী রাহাত খান সময় বলেন, ‘আমি পুলক ভাইয়ের হাতে থাকা লাঠি কেড়ে নিয়েছিলাম যাতে সে আমাদেরকে আঘাত করতে না পারে। তবে সেই লাঠি দিয়ে আমি কাউকে মারধর করিনি।’

ছাত্রলীগ কর্মী শামসুল আরেফিন খান সানি বলেন, ‘আমি কাউকে মারধর করিনি। যারা মারধর করছিলো তাদেরকে ফিরিয়েছি।’

ছাত্রলীগ কর্মী আল ফারাবি ‘পরে কথা বলছি’ বলে ফোন কেটে দেন।

দোকান ভাঙচুর ও ছিনতাইয়ের বিষয়ে ভুক্তভোগী দোকানদার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মারমারির সময় তারা আমার দোকানে ভাঙচুর করে ক্যাশবক্সে থাকা প্রায় ৬ হাজার টাকা লুট করেছে। এসময় তারা আমার স্ত্রীকেও মারধর করে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, ‘চারুকলায় একটা ছোট সমস্যা হয়েছিল। পরে, আমি, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বসে এ সমস্যা সমাধান করে দিয়েছি। তবে মারধরে কেউ জড়িত থাকলে আমি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ‘গাঁজা খাওয়াকে কেন্দ্র করে ঝামেলাটা হয়েছে। যেহেতু এ ঘটনা চারুকলা অনুষদের বাউন্ডারির ভেতর ঘটেছে। শিক্ষার্থীরা ডিন মহোদয় বরাবর একটা আবেদন করবে। তারপর ডিন তদন্ত কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা নেবে।’

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম