যে কারণে বাতিল হলো প্রতিমন্ত্রীর বড় ভাই দুর্জয়ের প্রার্থিতা
মো. মোরশেদ আলম, গাজীপুর
প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৪, ১০:২৯ পিএম
বারবার নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে শুনানি শেষে বাতিল হয় গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী জামিল হাসানের (দুর্জয়) প্রার্থিতা। বুধবার এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয় নির্বাচন কমিশন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সর্বপ্রথম গত ২১ এপ্রিল সর্বপ্রথম তিনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছিলেন। সে সময় বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী জড়ো করে শ্রীপুর উপজেলা পরিষদ চত্বরে শোডাউন ও মিছিল করেছিলেন। এছাড়া উপজেলা পরিষদের বাইরেও প্রার্থীর সমর্থনে নেতাকর্মীদের নিয়ে মিছিল করা হয়। সে সময় নির্বাচন কমিশন চেয়ারম্যান প্রার্থী জামিল হাসান দুর্জয়কে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়।
২৭ এপ্রিল নির্বাচনি এলাকার বাইরে গিয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে জরিমানা দিতে হয়েছিল প্রার্থীর এক কর্মীকে। বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে শ্রীপুর নির্বাচনি এলাকার পার্শ্ববর্তী গাজীপুর সদর নির্বাচনী এলাকার বাঘেরবাজারের সাবাহ গার্ডেনে এক মতবিনিময় সভা করেন তিনি। সে সময় বিষয়টি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার নজরে এলে তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নেন। জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট ইশতিয়াক মজনুন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে প্রার্থীর কর্মী আক্তার হোসেনকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। সে সময় সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে মাইটিভির স্থানীয় সাংবাদিক মাহবুব আলমসহ ৩ সাংবাদিককে হেনস্তা করার অভিযোগ উঠে।
এরপর ৭ মে মঙ্গলবার নির্বাচনি এলাকার গাজীপুর ইউনিয়নের নগরহাওলা গ্রামে নির্বাচনি সভায় ভোটারদের খাবার বিতরণ করার প্রস্তুতি নিয়ে এই প্রার্থীর কর্মীকে জরিমানা গুনতে হয়েছে। জরিমানার সময় মাজিস্ট্রেটের সঙ্গে অশোভন আচরণ ও হুমকি দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। সেদিন সেখানে নগরহাওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে প্রচুর ভোরটার ও নেতাকর্মী জড়ো করেন ওই প্রার্থী।
এ সময় সভাস্থলের পাশে ভোটারদের খাওয়ার জন্য প্রচুর খাবার রান্না করা হয়। এ খরব পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন শ্রীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাইখা সুলতানা। তিনি আইন অনুযায়ী প্রার্থীর কর্মী হারুন অর রশিদকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। একই সঙ্গে সভা বন্ধ করতে নির্দেশ দেন। তিনি নিজে উপস্থিত থেকে সভাস্থলের প্যান্ডেল খুলে ফেলেন।
এ সময় রান্না করা খাবার জব্দ করে সেগুলো স্থানীয় এতিমখানায় বিতরণ করে দেন। আইন প্রয়োগ করে ফেরার পথে তিনি খবর পান নির্দেশ না মেনে সভা চালানো হচ্ছে। পরে তিনি শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা শোভন রাংসাকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে পুনরায় উপস্থিত হন। সেই সময় তিনি আবারো প্রার্থীর এক কর্মীকে আইনের আওতায় জরিমানা করার প্রস্তুতি নেন।
এ সময় সেখানে প্রার্থী জামিল হাসান উপস্থিত হয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) হুমকি দেন। তিনি আইনের আওতায় আনতে যাওয়া তার কর্মীকে সেখান থেকে নিয়ে মিছিল করতে করতে চলে যান।
পরবর্তীতে গত ১০ মে তেলিহাটি ইউনিয়নের ছাতিরবাজারের ক্রিয়েটিভ স্কুল মাঠে আইন লঙ্ঘন করে প্রচুর লোকজন জড়ো করে নির্বাচনি সভা করেন এই প্রার্থী। এছাড়া তার নির্বাচনি প্রচারে জীবন্ত প্রাণী ব্যবহার করেন। এ ঘটনায় তাকে কারণ দর্শানের নোটিশ দেয় নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, চেয়ারম্যান প্রার্থী জামিল হাসানকে (দুর্জয়) এখন পর্যন্ত দুইবার কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। এছাড়া তার কর্মীদের দুই দফা জরিমানা করা হয়। কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাবে তিনি নির্বাচন কমিশনের কাছে এ ধরনের অপরাধের পুনরাবৃত্তি না করার অঙ্গীকার করেছেন।
উল্লেখ্য, জামিল হাসান (দুর্জয়) শ্রীপুর উপজেলা নির্বাচনে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। তিনি গাজীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলীর বড় ভাই। জামিল হাসান ওই নির্বাচনী আসনের টানা ৫ বারের সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী রহমত আলীর ছেলে। এছাড়া তিনি গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন। তিনি এর আগে ওই নিবাচনি আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। সর্বশেষ সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন; কিন্তু মনোনয়ন পান তার ছোট বোন রুমানা আলী। পরে বোনকে সমর্থন করে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান ও বোনের পক্ষে নির্বাচনি কাজে অংশ নেন।
শ্রীপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বর্তমান প্রার্থীরা হলেন- সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক মো. আ. জলিল ও মাওনা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য সাখাওয়াত হোসেন। এ উপজেলায় বর্তমান চেয়ারম্যান শামসুল আলম প্রধান প্রার্থী হয়েও পরে তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন।
এদিকে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী জামিল হাসান তার প্রার্থিতা ফিরে পেতে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তার নেতাকর্মীরা।