Logo
Logo
×

সারাদেশ

উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা শেষে বাবা-মায়ের বুকে ফিরলেন নাবিক রাজু

Icon

কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৪, ১০:৫৫ পিএম

উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা শেষে বাবা-মায়ের বুকে ফিরলেন নাবিক রাজু

জলদস্যুর কবল থেকে মুক্ত হওয়া জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর এবি (অ্যাবল সি ম্যান) হিসেবে কর্মরত নোয়াখালীর মোহাম্মদ আনারুল হক রাজু (২৯) দীর্ঘ ২ মাস অপেক্ষার পর নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা শেষে বাবা মায়ের বুকে ফিরেছেন।

মঙ্গলবার রাত ১১টায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের রামপুর গ্রামের আজিজুল হক মাস্টারের বাড়িতে পৌঁছেন তিনি।

এ সময় সন্তানকে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বাবা আজিজুল হক মাস্টার ও মা দৌলত আরা বেগম। রাজুকে পেয়ে স্বজনদের উচ্ছ্বাস বাড়ে কয়েকগুণ, অনেকের চোখেই তখন আনন্দ অশ্রু। রাজুকে একনজর দেখতে ছুটে আসেন আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা।

ছেলেকে ফিরে পেয়ে রাজুর মা দৌলত আরা বেগম কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, ছেলের জন্য গরুর গোশত, মুরগির গোশত, মাছ ও খাইসসারা (শিমের বিচির বিশেষ তরকারি) রেঁধেছেন। কত কষ্ট সহ্য করেছি, এক আল্লাহ জানে আর আমি জানি। আল্লাহর ওপর ভরসা ছিল। বড় বিপদ থেকে মুক্ত হয়ে আমার ছেলে আমার বুকে ফিরেছে। একবার ভেবেছিলাম কলিজার টুকরাকে ফেরত পাব না। আর কারও পরিবার যাতে এ পরিস্থিতিতে না পড়ে, সেই দোয়া করি।

রাজুর বাবা আজিজুল হক মাস্টার বলেন, রাজুর বাড়িতে এসে ঈদ করার কথা ছিল। ঈদের সময় আমরা ঈদ করতে পারি নাই। আজ আমাদের ঈদ। নামাজ পড়ে মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। ছেলে নতুন পাকা ঘর করছে। এবার ছেলেকে বিয়ে করাব। শিপিং কোম্পানি ও বর্তমান সরকারপ্রধান শেখ হাসিনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা ছিল বলেই এত দ্রুত সম্ভব হয়েছে।

বাবা মায়ের কাছে ফিরতে পেরে রাজুর চোখেও আনন্দ অশ্রু। তিনি বলেন, গত ১২ মার্চ আমাদের জাহাজটি জিম্মি করে সোমালিয়ান দস্যুরা। অস্ত্রের মুখে সেখানে থাকা ২৩ নাবিককে একটি কেবিনে আটকে রাখা হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় জাহাজের ইন্টারনেট সংযোগও। ছিনিয়ে নেওয়া হয় নাবিকদের কাছে থাকা মোবাইল, সঙ্গে থাকা ডলার। আমাদের সবসময় অস্ত্রের মুখে রেখেছে তারা। বিভীষিকাময় সময় পার করেছি সবাই। পরিবারের কাছে ফেরার স্বপ্ন ছিল। এত দ্রুত কোনো জাহাজ জিম্মি থেকে মুক্তি পায়নি। আমাদের কোম্পানি আন্তরিক ছিল বলেই আমরা বাড়িতে আসতে পেরেছি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনোয়ার হোসেন পাটোয়ারী বলেন, জিম্মি দশা থেকে মুক্ত হয়ে বাবা মায়ের বুকে ফিরতে পারা যে কী আনন্দ তা সবার উপলব্ধি হবে না। কেবল ২৩ জন নাবিকের ২৩টি পরিবার নয়। পুরো বাংলাদেশ তাদের দিকে তাকিয়ে ছিল। রাজুর পরিবারের সাথে আমার যোগাযোগ আছে। রাজুর ঘরে আজ আনন্দ। আমি পুরো পরিবারের সর্বাঙ্গীন উন্নতি কামনা করছি।

প্রসঙ্গত, কার্গো নিয়ে আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত যাওয়ার পথে গত ১২ মার্চ দুপুরে এমভি আবদুল্লাহ জাহাজকে জিম্মি করে সোমালিয়ান দস্যুরা। 

১৪ এপ্রিল বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ৩টা ৮ মিনিটের দিকে এমভি আবদুল্লাহ থেকে দস্যুরা নেমে যায়। এর আগে একই দিন বিকালে দস্যুরা তাদের দাবি অনুযায়ী মুক্তিপণ বুঝে নেয়। একটি বিশেষ উড়োজাহাজে মুক্তিপণ বাবদ ৩ ব্যাগ ডলার এমভি আবদুল্লাহর পাশে সাগরে ছুড়ে ফেলা হয়। স্পিডবোট দিয়ে দস্যুরা ব্যাগ ৩টি কুড়িয়ে নেয়।

দস্যুমুক্ত হয়ে ১৩ এপ্রিল দিবাগত রাতে সোমালিয়ার উপকূল থেকে আরব আমিরাতের পথে রওনা দেয় এমভি আবদুল্লাহ। ২১ এপ্রিল এমভি আবদুল্লাহ সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়াহ পৌঁছে। সেখানে কার্গো খালাস করে জাহাজটি একই দেশের মিনা সাকার থেকে কার্গো লোড করে দেশের উদ্দেশে রওনা দেয়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম