‘সন্তান জন্মের সময় যে আনন্দ পেয়েছি, আজ তার চেয়েও বেশি’
এম এ কাউসার, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৪, ১১:১০ পিএম
ছবি: যুগান্তর
সোমালিয়ান জলদসু্যর কবল থেকে মুক্তি পাওয়া এমভি আবদুল্লাহ'র চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান অবশেষে মায়ের বুকে ফিরেছেন। মঙ্গলবার সকাল থেকে তাকে বরণ করে নিতে নানা প্রস্তুতি নিয়েছেন স্বজনরা।
বাসায় দরজায় লাগানো হয় লাল ফিতা। সেই ফিতা কেটে বাসায় প্রবেশ করতেই ছোট মেয়ে খাদিজা আরবিয়াকে কোলে তুলে নেন আতিকুল্লাহ। জড়িয়ে ধরেন মা শাহনুর আক্তারকে। মা-ছেলে দুজনই এ সময় আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়েন। দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করেন। পরে তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন পরিবারের অন্য সদস্যরা।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নগরীর কোতোয়ালি থানাধীন নন্দনকানন এলাকার রথেরপুকুর পাড় বাসায় গিয়ে মিলনের এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
সুশীল সমাজের সঙ্গে বৈঠক, কী বার্তা দিলেন ডোনাল্ড লু
এদিকে ছেলের জন্য পছন্দের রান্না তৈরি করতে সকাল থেকে ব্যস্ত সময় পার করেছেন আতিকুল্লাহর মা। নিজের হাতে রান্না করেছেন ছেলের পছন্দের গরুর কালো ভুনা ও পুঁটি মাছ ফ্রাই। এছাড়া নাস্তাসহ হরেক রকম রান্না করেন পরিবারের সদস্যরা। মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে0 ফেরা আতিকুল্লাহকে দেখতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে এসেছেন আত্মীয়স্বজন।
বাসায় পৌঁছেছে আতিকুল্লাহ খান বলেন, ‘মাকে পেয়ে, সবাইকে পেয়ে অনেক আনন্দ লাগছে। আমি আমার পরিবারের প্রতি যতটুকু দুর্বল, তারাও আমার প্রতি অনেক বেশি দুর্বল। তাই খারাপ সময়গুলোতে দুশ্চিন্তায় থাকলেও তাদেরকে ভাল খবর দেওয়ার চষ্টো করেছি।
উত্কণ্ঠায় যখন ছিলাম বারবার মনে হয়েছে, পরিবারের সদস্যদের বুঝি আর দেখতে পাব না। আজকে তাদেরকে দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারছি না।'
তিনি বলেন, ‘পছন্দের খাবারগুলো রান্না করতে মাকে ফোন করে বলেছিলাম। মায়ের হাতের কালো ভুনা আমার খুব পছন্দের। পুঁটি মাছ ফ্রাই, চিংড়ি ফ্রাই ও সবজি ভালো লাগে। জাহাজে যাওয়ার সময়ও এসব খাবার রান্না করিয়ে নিয়ে যেতাম। আজ সেগুলোই মা রান্না করেছেন।'
আতিকুল্লাহ বলেন, ‘আমার তিন মেয়ের মধ্যে দুই মেয়ে কিছুটা বুঝে। কিন্তু ছোট মেয়ে খাদিজা আরবিয়ার আমাকে ছাড়া চলে না। আমারও একই অবস্থা। বন্দরে আসার পর তাদেরকে কখন কাছে পাব এই সময় যেন যাচ্ছিল না। এখন নিজেকে পরিপূর্ণ মনে হচ্ছে।'
আতিকুল্লাহর মা শাহনুর আক্তার বলেন, ‘সন্তানকে ফিরে পেয়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। আজকের আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। সে জন্ম হওয়ার সময় যে আনন্দ পেয়েছি, আজকে আমি তার চেয়েও বেশি খুশি। সন্তানকে আজ নতুন করে পেয়েছি। ওকে কখন কাছে পাব এই সময় যেন যাচ্ছিল না। এখন নিজের হাতে তার পছন্দের খাবারগুলো খাইয়ে দিতে পারলে শান্তি পাব। এজন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।'
সন্ধ্যা ৭টায় চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ তার বাসায় পৌঁছেছে। এ উপলক্ষ্যে পরিবারের সদস্যরা ‘ওয়েলকাম হোম' লেখা কেক, নানা প্রকার মিষ্টি, চটপটি, ফুসকা, পাস্তাসহ নানা রকম নাস্তা তৈরি করেন।
এর আগে দুপুর পেৌনে ১২টার দিকে ২৩ নাবিক কুতুবদিয়া বহির্নোঙরে অবস্থানরত এমভি আবদুল্লাহ থেকে ‘এমভি জাহান মনি ৩' নামের লাইটার জাহাজে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। বিকাল ৪টায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সংবর্ধনা দেওয়ার পর নাবিকরা প্রিয়জনদের সঙ্গে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন।