বাবা ভ্যানচালক মা গৃহকর্মী, সামিয়া পেলেন জিপিএ-৫
শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২ মে ২০২৪, ১০:১৮ পিএম
অদম্য শিক্ষার্থী সামিয়া আক্তার ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছেন। সামিয়ার এ ফলাফল সবাইকে চমকে দিয়েছে। তিনি শিবচরের পাঁচ্চর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী।
এলাকাবাসী জানান, সামিয়ার বাবা আব্দুল লতিফ ভূঁইয়া পদ্মা নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত। নিজের পৈতৃক জমিজমা যেটুকু ছিল সবই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদীভাঙনের পর আব্দুল লতিফ ভূঁইয়া নিঃস্ব হয়ে যান। সেখান থেকে চলে আসেন পাঁচ্চর এলাকায়। এখানে এসে বাস করেন অন্যের বাড়িতে।
এরপর আব্দুল লতিফ ভূঁইয়া ঢাকার প্যানপ্যাসিফিক হসপিটালের এক চিকিৎসকের বাড়ির কেয়ারটেকার ছিলেন। কয়েক বছর আগে অন্যের কাছ থেকে ধার করে টাকা নিয়ে একটি ভ্যান ক্রয় করেন। বর্তমানে সে ভ্যানটি চালিয়ে সংসার চালান তিনি। স্ত্রী ও তার পাঁচ মেয়ে নিয়ে তার সংসার। বড় দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছোট তিন মেয়ে বর্তমানে লেখাপড়া করে।
সামিয়ার বড় বোন খাদিজা শিবচর সরকারি বরমগঞ্জ কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। ছোট বোন ফারিয়া পাঁচ্চর গোয়ালকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে।
প্রতিবেশীরা জানান, সামিয়ার মা রওশনারা অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেন আর বাবা ভ্যানচালক। তাদের যে উপার্জন তা দিয়েই চলে তাদের সংসার আর মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ।
অদম্য মেধাবী সামিয়া জানান, ‘আমি অভাবের সংসারে থেকে লেখাপড়া চালিয়ে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছি। আমার এ সাফল্যের জন্য আমার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামসুল হক স্যারসহ অন্য শিক্ষকদের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ।’
সামিয়ার মা রওশন আরা জানান, ‘আমি এখন মাঝেমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ি। তখন আর ঝিয়ের কাজ করতে যেতে পারি না। তখন সংসারের কাজও সামিয়াকেই করতে হয়। অভাব-অনটনের সংসার। আমার মেয়ে অনেক মেধাবী। সে চায় লেখাপড়া করে একজন পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা হতে। কিন্তু আমি ওর লেখাপড়া কীভাবে চালাব।’
সামিয়ার বাবা আব্দুল লতিফ ভূঁইয়া বলেন, ‘আগামীতে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা না পেলে আমার পক্ষে মেয়েকে কলেজে ভর্তি করা সম্ভব হবে না। আমার স্ত্রী অনেক অসুস্থ। আমি তার চিকিৎসাও চালাতে পারছি না। এরপর আবার তিন মেয়ের লেখাপড়ার খরচ বহন করা আমার পক্ষে খুবই কষ্টকর।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সামসুল হক জানান, ‘সামিয়া ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। বিভিন্ন শ্রেণির পরীক্ষায় সে মেধার পরিচয় দিয়েছে। এতো অভাব-অনটনের মধ্যেও ভালো রেজাল্ট করেছে সামিয়া। সে বিদ্যালয়ের মুখ উজ্জ্বল করেছে।’