সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানকে গুলি, নেপথ্যে সাবেক মেম্বার!
নড়াইল ও লোহাগড়া প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১ মে ২০২৪, ১০:১২ পিএম
ছবি: যুগান্তর
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার মল্লিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা শিকদার মোস্তফা কামাল (৪৮) হত্যার ঘটনায় দুজনকে আটক করেছে পুলিশ।
এদিকে নিহতের পরিবারের দাবি, এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে রয়েছেন একই ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আকবর হোসেন লিপন ও তার ভাই শিপন।
তাদের সহযোগীদের দিয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন তারা। পুলিশ বলছে, এ হত্যার পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কি না, তা খুঁজে দেখা হচ্ছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, শুক্রবার রাতে সিকদার মোস্তফা কামাল পেৌরসভার কুন্দশী গ্রামের ছমির শিকদারের বাড়িতে একটি সালিশ বৈঠক করার উদ্দেশ্যে লোহাগড়া বাজার থেকে মোটর সাইকেলে রওয়ানা হন।
রাত ৮টার দিকে তিনি ছমির শিকদারের বাড়ির সামনে পৌঁছালে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা তাকে দুই রাউন্ড গুলি করে পালিয়ে যায়। তাকে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিত্সা শেষে উন্নত চিকিত্সার জন্য ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার পথে রাত সাড়ে ১০টার দিকে মারা যান তিনি।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এলাকার মানুষের মধ্যে শোকের ছায়া বিরাজ করছে। শনিবার বিকালে ঘটনাস্থল মলি্লকপুর ইউনিয়নের উত্তর মঙ্গলহাটা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সবার চোখেমুখে ভীতি আর আতঙ্কের ছাপ। কেউ কিছু বলতে চাইছেন না। নিহতের স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার চষ্টো করেও সম্ভব হয়নি। আধিপত্য নিয়ে বিরোধ ও পূর্বশত্রুতার জেরে খুন হয়েছেন শিকদার মোস্তফা কামাল এমনটাই দাবি স্বজনদের।
নিহতের বড় ভাবি রুনা লায়লা ওরফে দেলচি বেগম বলেন, ‘পূর্বশত্রুতার বিরোধে আকবর হোসেন লিপন মেম্বার (সাবেক ইউপি সদস্য) ও তার ভাই শিপনসহ তাদের সহযোগীরা আমার দেবরকে হত্যা করেছে। আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।'
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচনে মলি্লকপুর ইউনিয়ন থেকে শিকদার মোস্তফা কামাল ও আকবর হোসেন লিপন দুজনই নির্বাচন করে পরাজিত হন। তারা একই গ্রামের বাসিন্দা। দুজন পরাজিত হলেও লিপন মেম্বার মোস্তফার চেয়ে বেশি ভোট পান। তখন থেকে বিরোধ আরও জোরালো হয়। এর আগে মোস্তফা কামাল এই ইউনিয়নে দুবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।
উভয় পক্ষের মধ্যে চরম বিরোধের জেরে ২০২২ সালের ১১ ডিসেম্বর রাতে মঙ্গলহাটা গ্রামের মধ্যপাড়া থেকে বাড়ি ফেরার পথে ওত পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা হত্যার উদ্দেশ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে লিপন মেম্বারকে গুরুতর আহত করে।
এতে তার কবজি ও কনুইের মাঝ থেকে ডান হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় মোস্তফা কামাল প্রধান আসামি ছিলেন। প্রায় ৩৪ বছর আগে নিহত মোস্তফা কামালের বড় ভাই অধ্যাপক সিরাজুল হককেও কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
এদিকে শনিবার দুপুরে নড়াইল সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে বিকালে তাকে নিজ বাড়ি মঙ্গলহাটায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো হত্যা মামলা হয়নি। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ঘটনা তদনে্ত কাজ করছে পিবিআই।
এ বিষয়ে জানতে সাবেক ইউপি সদস্য আকবর হোসেন লিপনের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। ঘটনার পর থেকে তিনি ও তার লোকজন এলাকায় নেই।
এদিকে মোস্তফা কামালের মৃতু্যর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে শুক্রবার রাতেই নিহত চেয়ারম্যানের সমর্থকরা প্রতিপক্ষ লিপন সমর্থক ফয়সাল শেখ ও পলাশ মোল্যাকে শটগান দিয়ে গুলি করে আহত করে। তাদেরকে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে্লক্সে প্রাথমিক চিকিত্সা দিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।
নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহা. মেহেদী হাসান বলেন, হত্যাকারীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। ইতোমধ্যে দুজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। হত্যার পেছনের কারণ তদন্ত করছি আমরা।
লোহাগড়া থানার ওসি কাঞ্চন কুমার রায় বলেন, এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে চষ্টো চলছে।