যুবকের কবজি কাটল মাদক কারবারিরা, উলটো ৫০ হাজার টাকা নিল ডিবি
গাজীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৪, ১০:২০ পিএম
গাজীপুরে পুলিশকে মাদকের তথ্য দেওয়ায় স্থানীয় এক যুবককে কুপিয়ে হাতের কবজি কেটে দিয়েছে এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারিরা।
এ ঘটনায় থানায় মামলার পর গোয়েন্দা পুলিশের একজন পরিদর্শক মাদককারবারিদের পক্ষ নিয়ে ভুক্তভোগী ওই যুবককে উলটো ধরে নিয়ে মারধর ও ভয়ভীতি দেখান। পরে স্বর্ণালংকার বন্ধক দিয়ে ৫০ হাজার টাকা দিলে মুক্তি মেলে ওই যুবকের।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মাদকখ্যাত এলাকা লক্ষীপুরায় এ ঘটনা ঘটে। ডিবি পুলিশের এমন আচরণে ওই পরিবারটি আতঙ্কিত। ভুক্তভোগী ওই যুবকের নাম মিনহাজুল আবেদীন কনক (২৬)।
কনক যুগান্তরকে বলেন, এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারিরা তাকে বেশ কিছু দিন যাবত তাদের সঙ্গে মাদককারবারে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। তাতে রাজি না হওয়ায় তাকে হুমকি দিয়ে আসছিল তারা। বিষয়টি তিনি গাজীপুর সদর থানাকে জানান এবং পুলিশকে ওই মাদককারবারিদের আস্তানা চিনিয়ে দেন। এ ঘটনার জেরে গত ১ মে রাত সাড়ে ১০টার দিকে চিহ্নিত মাদককারবারি সজীব তার দলবল নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কনকের হাতের কবজি কেটে ফেলে। পরে গাজীপুর শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে ৩ মে তিনি সজীবকে প্রধান আসামি করে ১১ মাদককারবারির নামে জিএমপি সদর থানায় মামলা করেন।
পরদিন ৪ মে ওই মামলার আসামিদের গ্রেফতারের কথা বলে কনককে পুলিশ পরিদর্শক (ডিবি) উত্তর মো. মনিরুজ্জামান সোর্স শামীমের মাধ্যমে স্থানীয় তিন সড়ক নামক স্থানে ডেকে নেন। সেখানে অপেক্ষমাণ ডিবি পুলিশের গাড়িতে তুলে কনককে মামলা প্রত্যাহারের জন্য ভয়ভীতি দেখান। এসময় তাকে শারীরিক নির্যাতনও করা হয়।
একপর্যায়ে কনক ভয়ে গাড়িতেই প্রস্রাব-পায়খানা করে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে ডিবি পুলিশের সদস্যরা মাথায় পানি ঢেলে তাকে সুস্থ করেন। এরপর তাকে বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে এক লাখ টাকা দাবি করেন তারা। অন্যথায় তাকে ইয়াবার মামলায় চালান দেওয়ার ভয় দেখান।
এসময় সোর্স শামীম কনকের বাবা হারুন অর রশিদের মোবাইলে ফোন দিয়ে টাকা নিয়ে আসতে বলেন। তখন তিনি স্ত্রীর স্বর্ণালংকার বন্ধক রেখে ৫০ হাজার টাকা জোগাড় করে পরিদর্শক মনিরুজ্জামানের হাতে তুলে দিলে ওই দিনই রাত ১০টার দিকে নগরীর জামতলা এলাকায় নিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কনকের বাবা, মা ও স্ত্রীর সঙ্গে টাকার দাবি ও লেনদেনের একাধিক কল রেকর্ড যুগান্তরের কাছে রয়েছে।
মাদককারবারিদের হামলায় কনকের আহত হওয়ার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সদর থানার ওসি রাফিউল করিম বলেন, এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। প্রধান আসামি সজীবের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
ডিবি পুলিশ পরিদর্শক মনিরুজ্জামান প্রথমে ভিকটিম কনককে তুলে নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, কনক আহত হয়েছে বিষয়টি তিনি জানেন। তবে তাকে আটক বা টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি। তিনি বলেন, সোর্স শামীমের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। শামীম থানা পুলিশের সোর্স বলেও তিনি দাবি করেন।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ২৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জবেদ আলী জবে বলেন, সজীবরা পারিবারিকভাবেই মাদককারবারে জড়িত। তার বাবা ও মা’র নামে বিভিন্ন থানায় অন্তত ৫০টি মাদকের মামলা রয়েছে। সজীব দৈনিক ৩০-৪০ লাখ টাকার মাদক বেচাকেনা করে। এরা আমাদের সমাজটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে।