Logo
Logo
×

সারাদেশ

খরায় সোনারগাঁয়ের লিচু ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত

Icon

আল আমিন তুষার, সোনারগাঁ থেকে

প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৪, ০৬:৩৬ পিএম

খরায় সোনারগাঁয়ের লিচু ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত

সোনারগাঁয়ে পর্তুগিজদের আমল অর্থাৎ ১৭০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে লিচুর চাষ শুরু করা হয়। লিচু চাষের জন্য আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও লিচু ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় সোনারগাঁয়ে এখন প্রায় তিন শতাধিক ছোট বড় লিচু বাগান সৃষ্টি হয়েছে। বাজারে এসেছে সোনারগাঁয়ের লিচু।

তবে এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় ও সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় সোনারগাঁয়ে লিচুর ফলন অনেকটা কম হয়েছে। তাছাড়া গুটি থাকার সময় শিলাবৃষ্টির কারণে লিচুর মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। ফলে সোনারগাঁয়ের লিচু ব্যবসায়ীদের এবার মাথায় হাত।

খরার কারণে ঝরে পড়েছে অধিকাংশ বাগানের লিচু। লিচুর সাইজও হয়েছে অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক ছোট। ধারণা করা হচ্ছে এ বছর বেশিরভাগ লিচু ব্যবসায়ীই লিচুর সঠিক দাম পাবেন না।

সোনারগাঁয়ে সাধারণত তিন প্রজাতির লিচুর ফলন হয়ে থাকে। এগুলো হলো- পাতি লিচু, কদমী লিচু ও বোম্বাই (চায়না-৩) লিচু।

বাংলাদেশের অনেক জেলায় লিচুর বাম্পার ফলন হলেও আবহাওয়ার বৈশিষ্ট্যের কারণে সোনারগাঁয়ের লিচু আগে পাকে। যে কারণে সোনারগাঁয়ের লিচু প্রতিবছরের মে মাসের প্রথমদিকেই বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে যায় লিচু চাষিরা।

সোনারগাঁয়ে সর্ব প্রথম পাতি জাতের লিচু পরে কদমী জাতের লিচু ও সর্বশেষ বোম্বাই জাতের লিচু পেকে থাকে। আকারে বড় ও সুস্বাদু হওয়ায় অনেকে এ অঞ্চলের লিচুকে ‘দিল্লীকা লাড্ডু’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তবে, এ বছর দিল্লীকা লাড্ডু খ্যাত লিচু আর সেই উপাধি পাচ্ছে না। কারণ আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় ও খরার কারণে লিচুর সাইজ অতি ছোট ও টক মিষ্টি হলুদ লাল রঙের রূপ ধারণ করেছে।

সোনারগাঁয়ে লিচু ব্যবসায়ীরা লিচু পাকার ১৫ দিনের মধ্যেই বাজারে বিক্রি করার জন্য সব লিচু বাগান থেকে সংগ্রহ করে থাকেন। এজন্য রশি, টুকরি, বাঁশের লাঠি সংগ্রহ ও অস্থায়ী টিনের ঘর নির্মাণ করতে হয়। যাতে করে লিচু একসঙ্গে আটিবাঁধা ও প্যাকেট করতে সুবিধা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার খাসনগর, চিলারবাগ, দৈলরবাগ, পানাম, নোয়াইল, দত্তপাড়া, বাগমুছা, অর্জুন্দী, হাতকোপা, দরপত, ছাপেরবন্ধ, গোয়ালদী, টিপরদী, হরিষপুর, ভট্টপুর, লোকশিল্প জাদুঘর, গোবিন্দ্রপুর, গাবতলী, হারিয়া, বৈদ্যেরবাজার, তাজপুর, সাদীপুর, ইছাপাড়া, দুলালপুর, বারদী, সেনপাড়া, বালুয়া দিঘীরপাড়সহ ৫০টি গ্রামে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে প্রায় দুই শতাধিক লিচু বাগান। এসব লিচু বাগানে প্রতিবছর পাতি লিচু, কদমী লিচু ও বোম্বাই (চায়না-৩) লিচুর ফলন হয়ে থাকে।

সোনারগাঁয়ে দুই শতাধিক লিচুর বাগান থাকলেও নতুন করে বাড়ির অঙিনায় ও কৃষি জমির পাশেও লিচুর চাষ শুরু করেছে লিচু চাষিরা। লিচু ব্যবসায়ীরা বিগত ৪ বছর যাবত সোনারগাঁয়ের পাতি লিচু হাজার প্রতি ৩ হাজার টাকায়, কদমী লিচু হাজার প্রতি ৬ হাজার টাকায় ও বোম্বাই লিচু হাজার প্রতি ৪ হাজার টাকায় বিক্রি করে আসছেন।

মঙ্গলবার সরেজমিন সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, লিচুচাষিরা তাদের লিচু বাগানে অব্যাহতভাবে পাহারা দিচ্ছেন। কাক, বাদুর, চামচিকা ও চোরের হাত থেকে লিচু রক্ষা করতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এ কাজে লিচু ব্যবসায়ীদের তাদের পরিবারের সদস্যরা ও শ্রমিকরা সহযোগিতা করছে। অনেকে লিচু গাছ থেকে লিচু ছিঁড়ে বাজারে বিক্রি করার জন্য টুকরি, বাঁশ, রশি ও বিভিন্ন সরঞ্জাম সংগ্রহ করছেন।

ইছাপাড়া গ্রামের লিচু ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান লিটন জানান, সোনারগাঁয়ে এবার লিচুর ফলন খুবই কম হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় লিচু অনেকটা ঝরে পড়েছে। তাছাড়া আকারে অনেকটা ছোট হয়েছে। তাই এবছর লিচু ব্যবসায়ীদের লাখ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হবে। আগামী ২-১ দিনের মধ্যে বিক্রি করার জন্য সোনারগাঁয়ের লিচু বাজারে তোলা হবে।

সোনারগাঁ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সোনারগাঁয়ে লিচু পাকার জন্য চাষিরা কোনো কেমিক্যাল প্রয়োগ করে না। তবে লিচু বড় হওয়ার ক্ষেত্রে হরমোন জাতীয় ওষুধ, লিচুর কালার নষ্ট না হওয়ার জন্য ছত্রাকনাশক ও পোকার উপদ্রব বন্ধ করার জন্য তারা কীটনাশক প্রয়োগ করে থাকেন। এসব কীটনাশক মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলার কথা নয়। তবে পরিমাণে বেশি প্রয়োগ করলে অবশ্যই তা ক্ষতিকর।

লেখক, সাহিত্যিক ও গবেষক শামসুদ্দোহা চৌধুরী জানান, সোনারগাঁয়ে পর্তুগিজদের আগমনের পর অর্থাৎ ১৭০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে প্রথম লিচুর চাষ শুরু হয়। পর্তুগিজরাই সোনারগাঁয়ে প্রথম লিচু চাষ শুরু করেন। প্রথমে ছোট পরিসরে এর চাষ শুরু হলেও এখন তা ব্যাপকভাবে রূপ নিয়েছে। লিচু ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় প্রতিনিয়ত জমির মালিকরা নতুন নতুন লিচুর গাছ রোপণ করছেন।

সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ জানান, সাধারণত সোনারগাঁয়ের লিচু আকারে বড় ও সুস্বাদু হয়ে থাকে। এটার স্বাদ ও গন্ধটাও অন্যরকম। তাই এখানে উৎপাদিত লিচুর বাজারে অনেক কদর রয়েছে। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায়, লিচু সাইজ ছোট হওয়ায় ও ফলন ভালো না হওয়ায় অনেক চাষিকে লোকসান গুনতে হতে পারে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম