Logo
Logo
×

সারাদেশ

তিউনিসিয়া থেকে আড়াই মাস পর আসলো ৮ বাংলাদেশির লাশ, দাফন সম্পন্ন

Icon

টেকেরহাট (মাদারীপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৪, ০১:৩০ এএম

তিউনিসিয়া থেকে আড়াই মাস পর আসলো ৮ বাংলাদেশির লাশ, দাফন সম্পন্ন

তিউনিসিয়া থেকে আড়াই মাস পর দেশে এসেছে ৮ বাংলাদেশির লাশ। বৃহস্পতিবার দুপুরে তাদের কফিন ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছে। বিমান বন্দর থানায় মামলা থাকায় লাশগুলো ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়।

শুক্রবার সন্ধ্যায় ময়নাতদন্ত শেষে ৮টি লাশের কফিন স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

মাদারীপুর জেলার রাজৈর ও গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার নিজ নিজ বাড়িতে কফিন পৌঁছলে পরিবার, প্রতিবেশী ও স্বজনদের মাঝে শুরু হয় শোকের মাতম। এলাকার শত শত শোকাহত স্বজনরা নিহতদের এক জন্য দেখার জন্য তাদের বাড়িতে ভিড় জমায়।  পরে ধর্মীয় রীতি শেষে ৮জনের দাফন করা হয়।

বৃহস্পতিবার লাশ আসার খবরে রাজৈর ও মুকসুদপুরের গ্রামে গ্রামে শুরু হয় দাফনের প্রস্তুতি। কবর খোড়াসহ সব প্রস্তুতি নেয় পরিবারের স্বজনরা।

স্বজনরা জানান, চলতি বছর ১৪ জানুয়ারি মাদারীপুরের রাজৈর ও মুকসুদপুরের বেশ কয়েকজন যুবক ইতালির উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়। এক মাস পরে ১৪ ফেব্রুয়ারি দালালরা বিভিন্ন দেশের ৫২ যুবককে লিবিয়া থেকে ইতালির উদ্দেশ্যে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় তুলে দেয়। তিউনিসিয়ার উপকূলে ভূমধ্যসাগরে নৌকার ইঞ্জিন ফেটে আগুন ধরে যায়। ওই সময় ভূমধ্যসাগরে ডুবে যায় নৌকাটি। এতে ৯ যুবক নিহত হয়।

নিহতরা হলেন- রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়নের কোদালিয়া গ্রামের মিজানুর রহমান কাজীর ছেলে সজীব কাজী (১৯), খালিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের ইউসুফ আলী শেখের ছেলে মামুন শেখ (২২), একই ইউনিয়নের সেনদিয়ার গ্রামের সুনীল বৈরাগীর ছেলে সজল বৈরাগী (২২), কদমবাড়ির ইউনিয়নের উত্তরপাড়া গ্রামের পরিতোষ বিশ্বাসের ছেলে নয়ন বিশ্বাস (২৪), কবিরাজপুর ইউনিয়নের কেশরদিয়া গ্রামের কাওসার হোসেন (২২) এবং গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার রাঘদি ইউয়িনের বড়দিয়া গ্রামের দাদন মিয়ার ছেলে রিফাদ (২১), দিগনগর ইউনিয়নের ফতেহপট্টি এলাকার মো. রাসেল (২০) ও গয়লাকান্দি গ্রামের পান্নু শেখের ছেলে ইমরুল কায়েস আপন (২২)।

দুর্ঘটনায় আরও এক পাকিস্তানী যুবক মারা যান। তিউনিশিয়ার উপকুল থেকে ৪৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করে সে দেশের কোস্ট গার্ড। এদের মধ্যে ২৭ জন বাংলাদেশি, ৮ জন পাকিস্তানি, ৫ জন সিরিয়ার ও ৪ জন মিসরের।

দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশ দূতাবাস, লিবিয়ার একটি প্রতিনিধি দল তিউনিসিয়ার জারবা ও গ্যাবেস হাসপাতালের মর্গে অজ্ঞাত পরিচয়ে সংরক্ষিত সব মৃতদেহ পরিদর্শন করেন। এরপর বর্ণিত দুর্ঘটনায় জীবিত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশিদের সহায়তায় মৃত ৮ জন বাংলাদেশি নাগরিকের ছবি এবং প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করে বাংলাদেশে তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরিচয় নিশ্চিত করা হয়।

পরবর্তীতে দূতাবাস হতে নিহত বাংলাদেশিদের অনুকূলে ট্রাভেল পারমিট (আউটপাস) ইস্যু করে মৃতদেহগুলো দেশে প্রেরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ লক্ষ্যে দূতাবাস হতে তিউনিসিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় নগর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিরলসভাবে কাজ করে পর্যায়ক্রমে মৃতদেহ সমূহের সুরতহাল, মৃত্যু সনদ এবং মেডিকেল সার্টিফিকেট ইস্যুসহ অন্যান্য সকল দাপ্তরিক কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়।

দূতাবাসের দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর মৃত্যুবরণকারী ৮ জন বাাংলাদেশি নাগরিকের মৃতদেহ দেশে প্রেরণের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। সব কার্যক্রম সম্পন্নের পর ৩০ এপ্রিল মৃতদেহগুলো দেশে প্রেরণের জন্য তিউনিসিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করা হয়।

এ সময় তিউনিসিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের অনাবাসিক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল আবুল হাসনাত মুহাম্মাদ খায়রুল বাশার এবং দূতাবাসের মিনিস্টার (শ্রম) গাজী মো. আসাদুজ্জামান কবির উপস্থিত ছিলেন।

মৃতদেহগুলো সৌদি এয়ারলাইন্সের ৮০৮ ফ্লাইটে বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায় বলে ঢাকায় অবস্থানরত নিহত মামুনের বড় ভাই সজিব শেখ জানান।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম