বয়স ৩২ বছর হলেও এখনো দেখতে শিশুর মতো আছর উদ্দিন
ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩ মে ২০২৪, ১১:৩৮ এএম
বয়স ৩২ বছর পার হলেও ভূরুঙ্গামারীর ৪০ ইঞ্চি উচ্চতার আছর উদ্দিন এখনো দেখতে হুবহু শিশুর মতোই। শুধু তাই নয়, শিশুসুলভ আচরণ নিয়ে সারাদিন খেলাধুলাও করছেন গ্রামের অন্য শিশুদের সঙ্গে।
উপজেলার পশ্চিম ছাট গোপালপুর গ্রামের চেয়ারম্যানপাড়ার মো. আজিম উদ্দিন ও আছিয়া বেগম দম্পতির ছেলে আছর উদ্দিন ওরফে ছমির। বর্তমানে তার দরিদ্র মা-বাবা দেখাশোনা করলেও আছর উদ্দিনের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন তার পরিবার। এদিকে জন্মগত ত্রুটির কারণে এমন রোগে আক্রান্ত এসব সন্তান উন্নত চিকিৎসায় ভালো হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানান চিকিৎসক।
সরেজমিন দেখা গেছে, বাড়ির বাইরে খেলাধুলায় মত্ত থাকা শিশুদের দেখে বোঝার উপায় নেই সেখানে রয়েছেন ৩২ বছর বয়সি আছর উদ্দিন নামে একজন মানুষ। এক মনেই খেলাধুলা করছেন শিশুদের সঙ্গে। আবার কখনো বাবার হাত ধরে যাচ্ছেন বাজার বা অন্য কোথাও। এ ছাড়া বাড়ির পাশের দোকানে যাচ্ছেন শিশুদের মতোই কিছু কিনে খাবে বলে। সে এখনো শিশুর মতো জীবনযাপন করলেও তার ছোট ভাই বিয়ে করে জন্ম দিয়েছেন সন্তান। এ দরিদ্র দম্পতির এক মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে আছর উদ্দিন দ্বিতীয় এবং ছেলের মধ্যে বড়। ১৯৯২ সালে ২৪ মে জন্ম হয় আছর উদ্দিনের।
আছর উদ্দিনের মা-বাবা জানান, জন্মের পর থেকেই আছর অস্বাভাবিক। বয়স হলেও শিশুর মতোই লালন-পালন করছেন তাকে। ছেলেকে সুস্থ করে তুলতে দেখিয়েছেন চিকিৎসকও। তারপরও শরীরে নানা সমস্যা নিয়ে শিশুই থেকে গেছেন আছর উদ্দিন। নিজেদের অবর্তমানে এই সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়েও চিন্তিত তারা।
মা আছিয়া বেগম বলেন, ‘যখন আমার ছেলের দুই বছর বয়স হয়, তখন বুঝতে পেরেছি আমার ছেলের শারীরিক সমস্যা আছে। পরে তাকে স্বাভাবিক করে তুলতে অনেক ডাক্তার-কবিরাজ দেখাইছি। ডাক্তার আমাকে বলছে— আপনার ছেলে স্বাভাবিক হবে না। তারপরও তাকে মাঝেমধ্যে ডাক্তার দেখাইছি। এখন তো তার বয়স অনেক হয়েছে। কিন্তু স্বাভাবিক হয়নি। এখন তার ঘাড়ে সমস্যা, পেটে সমস্যা, আরও অনেক শারীরিক সমস্যা।
তিনি আরও বলেন, ‘তার সঙ্গে সবসময় একজন থাকতে হয়। গোসল করাই দিতে হয়, খাওয়াই দিতে হয়। জামাকাপড়ও পড়াই দিতে হয়। সংসারে খুব কষ্ট আমাদের। তার পরও ছেলেকে এখনো আদরযত্নে রাখছি। মাঝেমধ্যে চিন্তা করি আমি মারা গেলে আমার ছেলেটাকে কে দেখবে— এ চিন্তায় কিছু ভালো লাগে না।’
প্রতিবেশী গাজিউর নামে একজন বলেন, আছর উদ্দিন ছমিরকে ছোটবেলা থেকেই প্রতিবন্ধীর মতো দেখছি। সব সময় ছোট বাচ্চাদের সঙ্গেই খেলাধুলা করে। তার আসলে শারীরিক বৃদ্ধির সংখ্যা নেই। ১৯৯২ সালে তার জন্ম। এখন তার বয়স ৩২ বছর হলেও ছোটদের সঙ্গেই মিশে সব সময়। বিয়ে-শাদি তো দূরের কথা, সে কোনো কাজ-কর্ম করতে পারছে না।
তিলাই ইউপি চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান বলেন, আছর উদ্দিনের প্রতিবন্ধী ভাতা করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ইউএনও ও ডিসি স্যার তার বিষয়ে আমার কাছ থেকে খোঁজখবর নিয়েছেন।
কুড়িগ্রামের সাবেক সিভিল সার্জন ডা. এসএম আমিনুল ইসলাম বলেন, মায়ের গর্ভাবস্থায় ত্রুটিজনিত কারণে এমন খর্বাকৃতির সন্তানের জন্ম হয়।
উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে আছর উদ্দিনকে কিছুটা হলেও সুস্থ করে তোলা সম্ভব বলে তিনি জানান।