খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ পাবনায় শ্রম বৈষম্য দূর হয়নি
আখতারুজ্জামান আখতার, পাবনা
প্রকাশ: ০১ মে ২০২৪, ০৭:২৬ পিএম
সারা বিশ্বের মত বাংলাদেশেও শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আজকের দিনে (১ মে) ‘মে দিবস’ হিসেবে পালিত হচ্ছে। যথাযোগ্য মর্যাদায় পাবনাতেও পালিত হচ্ছে দিবসটি। কিন্তু খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ জেলা পাবনায় আজো শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের ন্যায্য দাবি প্রতিষ্ঠা হয়নি। নারী-পুরুষের শ্রম বৈষম্য দূর হয়নি।
মহান ভাষা আন্দোলন, ঐতিহাসিক ভুট্টা আন্দোলন এবং মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে সব আন্দোলন সংগ্রামে পাবনার মানুষের রয়েছে প্রশংসনীয় অবদান। স্বাধীনতার পর কৃষি, শিল্প, ব্যবসা বাণিজ্যসহ সব ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে পাবনার। এখন পাবনা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ এক জেলা। এসব সাফল্যের পেছনের কারিগর শ্রমজীবী মেহনতি মানুষ।
সূত্র মতে, পাবনার জনসংখ্যা প্রায় ৩৪ লাখ। এর মধ্যে কমপক্ষে ৫ লাখ শ্রমজীবী মানুষ। স্থানীয়ভাবে সবচেয়ে বেশী শ্রমবিনিয়োগ হয়ে থাকে কৃষি ক্ষেত্রে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্য মতে, পাবনায় ধান, পাট, পেঁয়াজ, সবজি এবং আম ও লিচুতে ব্যাপক সাফল্য রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে ২ লক্ষাধিক শ্রমিক কাজ করেন।
কৃষকদের নিয়ে কাজ করেন রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষক সিদ্দিকুর রহমান ময়েজ। তিনি বলেন, কৃষি শ্রমিকদের ন্যায্য কোন মজুরি নির্ধারিত হয়নি। স্থানীয়ভাবেই আলোচনা করে তাদের মজুরি নির্ধারিত হয়ে থাকে। এতে এই গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে একটা নৈরাজ্য এবং মজুরি বৈষম্য হয়ে থাকে। স্থান ভেদে পাবনায় কৃষি ক্ষেত্রে ৫শ থেকে সাড়ে ৬শ টাকা এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৭শ টাকা শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া হয়ে থাকে।
গ্যারকা বিলপাড়ের কৃষি শ্রমিক ছমির সেখ বলেন, আমরা কোনো ছুটি পাই না। কাজ করি সকাল থেকে সন্ধ্যার আগে পর্যন্ত। যা পাই তা এই দুর্মূল্যের বাজারে একেবারেই অপ্রতুল।
পাবনার ঈশ্বরদীর জয়নগর, সাহাপুর, দাশুরিয়া, টেবুনিয়া, পাবনা বিসিকসহ বিভিন্ন এলাকায় কয়েক শ ধানের চাতালে কাজ করেন লক্ষাধিক শ্রমিক। এদের মধ্যে নারী শ্রমিক বেশি। নারী শ্রমিকরা বেশি কাজ করলেও তারা পুরুষ শ্রমিকের চেয়ে কম মজুরি পান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জয়নগরের এক চাতাল মালিক বলেন, মেয়েদের মজুরি স্থানীয়ভাবে এভাবে একটু কম করেই দেওয়া হয়। ওরাও প্রতিবাদ করে না।
এসব ছাড়াও পাবনায় ২ শতাধিক ইটের ভাটা, বিভিন্ন কল কারখানায়, পরিবহনসহ নানা ক্ষেত্রে আরও ২ লক্ষাধিক শ্রমিক কাজ করেন। এক মাত্র কৃষি শ্রমিক বাদে শ্রমজীবীদের নিয়ে অর্ধ শতাধিক সংগঠন গঠিত হয়েছে। অনেক সংগঠন শ্রমজীবীদের নিয়ে স্বার্থের রাজনীতি করলেও শ্রমজীবী মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়নি। তারা শুধু ব্যবহৃত হয়েছে।
পাবনা সিএনজি মালিক-শ্রমিক সমিতির নামে মাসে কয়েক লক্ষ টাকা চাঁদা আদায় হলেও এসব সেক্টরে কাজ করা শ্রমিকদের কোনো কাজে আসে না।
অভিযোগ রয়েছে, বাঘাবাড়ি, নগরবাড়ি, কাজিরহাটসহ অনেক স্থানে নির্ধারিত শ্রমিক চাড়াও কিছু প্রভাবশালী বা নেতা বসে বসে টাকা নেন। কিন্তু শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি দেওয়ার ব্যাপারে তারা কোনো ভূমিকা রাখেন না।
জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, পাবনায় শ্রমিকদের নাম ভাঙিয়ে শুধু রাজনীতি হচ্ছে। কিন্তু তাদের ন্যায্য দাবি কখনোই কেউ পূরণ করেনি। শ্রমিকরা এখানে যুগ যুগ ধরে শুধু ব্যবহৃত হচ্ছে বড়দের স্বার্থের কাজে। মে দিবসে সত্যিকারের অঙ্গীকার হওয়া দরকার যাতে শ্রমজীবী মানুষ তাদের ন্যায় সঙ্গত মজুরি এবং সম্মান পান।