২৩ নাবিকই দেশে ফিরবেন জাহাজে, কয়লা খালাস শুরু
চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৪৯ পিএম
জলদস্যুদের জিম্মিদশা থেকে মুক্ত বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দরের জেটিতে ভেড়ার পর পণ্য খালাস শুরু হয়েছে। সোমবার রাত ১২টা থেকে ওই জাহাজ থেকে কয়লা খালাস শুরু হয়। জাহাজে থাকা ৫৫ হাজার টন কয়লা খালাসে ৬-৭ দিন সময় লাগতে পারে।
এরপর জাহাজটি আমিরাতের অন্য একটি বন্দর থেকে পণ্যবোঝাই করে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা দেবে। জাহাজের ২৩ নাবিকের সবাই জাহাজেই দেশে ফিরবেন।
এর আগে দুই নাবিক ফ্লাইটে দেশে ফেরার কথা থাকলেও তারা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন। দেশে ফিরতে তাদের প্রায় এক মাস সময় লাগতে পারে।
জাহাজের মালিক প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মেহেরুল করিম এসব তথ্য জানিয়েছেন। বর্তমানে তিনি দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দরে রয়েছেন।
৩২ দিন সোমালিয়া জলদস্যুদের হাতে জিম্মি থাকার পর গত ১৪ এপ্রিল মুক্তি পায় এমভি আবদুল্লাহ ও এর ২৩ নাবিক। এরপর জাহাজটি পূর্বনির্ধারিত গন্তব্য দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। ৮ দিন পর গত রোববার এটি হামরিয়া বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছায়।
সোমবার বাংলাদেশ সময় রাত ১০টার দিকে জাহাজটিকে বহির্নোঙর থেকে জেটিতে বার্থিং দেওয়া হয়।
এমভি আবদুল্লাহ চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন। জেটিতে আসার পর নাবিকদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন কবির গ্রুপ, এসআর শিপিং ও আমিরাতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা।
জাহাজ থেকে নেমে নাবিকরা মালিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। জিম্মিদশা থেকে মুক্ত করে আনায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তারা।
এর আগে নাবিকদের মেডিকেল চেকআপ করা হয়। সবাই সুস্থ আছেন বলে জানান চিকিৎসকরা।
এসআর শিপিংয়ের সিইও মেহেরুল করিম মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক ভয়েস মেসেজে যুগান্তরকে জানান, আলহামদুলিল্লাহ, সব ঠিক আছে। কার্গো রিসিভাররা কার্গো দেখে গেছেন। কারও কোনো কমপ্লেইন নেই। সোমবার রাত ১২টা থেকে কার্গো (কয়লা) খালাস শুরু হয়েছে। সব নাবিকই সুস্থ আছেন। খালাস শেষে ২৩ নাবিকই জাহাজে করেই দেশে ফিরবেন বলে মনস্থির করেছেন।
আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে বাল্ক ক্যারিয়ার এমভি আবদুল্লাহ সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরে যাচ্ছিল। গত ১২ মার্চ সোমালিয়ার মোগাদিসু থেকে ৬০০ নটিক্যাল মাইল দূরে ভারত মহাসাগরে এটি জলদস্যুদের কবলে পড়ে। জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে জলদস্যুরা জোর করে অস্ত্রের মুখে সোমালিয়া উপকূলে নিয়ে যায়। গত ১৪ এপ্রিল সোমলি দস্যুরা জাহাজ ছেড়ে চলে যায়।
জাহাজটির মালিক প্রতিষ্ঠান আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নাবিকদের মুক্ত করার কথা বললেও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ৫৫ কোটি টাকা) মুক্তিপণ পাওয়ার পর দস্যুরা জাহাজটি ছেড়ে দিয়েছে।
এর আগে ২০১০ সালে একই প্রতিষ্ঠানের ‘জাহান মণি’ নামের অপর একটি জাহাজ সোমালি জলদস্যুরা জিম্মি করেছিল। ওই জাহাজে ২৫ নাবিক ও ক্যাপ্টেনের স্ত্রীসহ ২৬ জন ছিলেন। আলাপ-আলোচনাসহ নানামুখী তৎপরতার পর জিম্মি হওয়ার ১০০ দিনের মাথায় জাহাজটিকে তখন মুক্তি দিয়েছিল জলদস্যুরা।