ঈদের পর চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ
কারণ ছাড়াই বেড়েছে বেশিরভাগ ভোগ্যপণ্যের দাম
আহমেদ মুসা, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১১:১৭ পিএম
দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ঈদের পর কোনো কারণ ছাড়াই বেড়েছে বেশির ভাগ পণ্যের দাম। ভোজ্যতেল, চাল, পেঁয়াজ, ময়দা ও আটার দাম বাড়ানো হয়েছে। একইভাবে আলুর দামও। আলুর আড়তদাররা সিন্ডিকেট করে কেজিপ্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে। ভোজ্যতেলের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। কিছুটা বেড়েছে আমদানি করা আদার দামও। দেশি ও আমদানি করা রসুনের দামও কিছুটা বাড়তি দেখা গেছে। তবে ঈদের আগে মাছ ও মাংসের যে দাম ছিল, তা থেকে বড় কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। চাল, ডাল, আটা, ময়দা ও চিনি আগের মতোই উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে। ১৭৫ টাকার ব্রয়লার মুরগির বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৭০ টাকায়, যা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ৯০ টাকা বেশি।
ভোক্তারা জানান, ভোজ্যতেলে দাম বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে নতুন দাম কার্যকর করা হয়েছে। কিন্তু দাম কমালে তা কার্যকর করার উদ্যোগ থাকে না। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে মুরগির দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। রমজানের ঈদে সব ধরনের মুরগির চাহিদা থাকে। মুরগির চাহিদাকে পুঁজি করে ব্যবসায়ীরা শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে কোনো কারণ ছাড়াই মুরগির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
জানা যায়, কোনো কারণ ছাড়াই ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোজ্যতেলের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম চার টাকা বাড়ছে। প্রায় একই হারে বাড়ছে বোতলজাত পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দামও। তবে খোলা সয়াবিন তেলের দাম প্রতিলিটারে দুই টাকা কমানো হয়েছে। এ ছাড়া সুপার পাম তেলের নতুন দামও নির্ধারণ করা হয়েছে। এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের নতুন দাম ১৬৭ টাকা ও ৫ লিটারের বোতল ৮১৮ টাকা। আর প্রতিলিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম পড়বে ১৪৯ টাকা। আগে নির্ধারিত না থাকলেও খোলা পাম সুপার তেলের লিটারপ্রতি দাম বেঁধে দেওয়া হয়েছে ১৩৫ টাকা।
এদিকে আড়তদাররা সিন্ডিকেট করে আলুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। ঈদের এক সপ্তাহ আগে প্রতিকেজি আলুর দাম ছিল ৩২-৩৪ টাকা। ঈদের তিনদিন আগে দাম বাড়িয়ে করা হয় কেজিপ্রতি ৪২-৪৪ টাকা। এখন কেজিপ্রতি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকায়। আড়তদারদের অজুহাত, চাহিদা অনুযায়ী আলু সরবরাহ নেই। এ কারণে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন হিমাগার থেকে আলুর সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও অদৃশ্য কারণে বাড়ছে দাম। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ও রিয়াজউদ্দিন বাজারের আড়তদাররা সিন্ডিকেট করে বিক্রি কমিয়ে দিয়েছেন। বাজারে আলু কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সরকার নির্ধারিত দামে কোথাও আলু বিক্রি হচ্ছে না।
খাতুনগঞ্জের আলুর আড়তদার মো. বাবর জানান, আলুর চাহিদা যে হারে বেড়েছে সরবরাহ সেভাবে নেই। সরবরাহ কিছুটা কমেছে। এ কারণে কয়েক দিন ধরে দাম ঊর্ধ্বমুখী। তবে সরবরাহ বাড়লে আলুর দাম কমে আসবে। সিন্ডিকেট আলু বিক্রির সুযোগ নেই।
নগরীর চকবাজার, বহদ্দারহাট, রিয়াজউদ্দিন বাজার, কর্ণফুলী মার্কেটের কাঁচা বাজার ঘুরে দেখা যায়, ব্রয়লার মুরগির সরকার নির্ধারিত দাম কেজিপ্রতি ১৭৫ টাকা। কিন্তু বাজারে ব্রয়লার মুরগি কেজি ২৬০ থেকে ২৭০ টাকায়। সরকার নির্ধারিত দামে কোথাও মুরগি বিক্রি হচ্ছে না। বাজারে তিন ধরনের সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে সোনালি মুরগি কেজি ৩৪০ থেকে ৩৫০ টাকা, গত সপ্তাহে যা ছিল ৩১০ থেকে ৩৩০ টাকা। গরুর মাংসের কেজি ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা। সরকার নির্ধারিত দাম অনুযায়ী গরুর মাংস প্রতিকেজি বিক্রি হওয়ার কথা ৬৬৪ টাকায়।
এছাড়াও সরবরাহ সংকটের অজুহাতে বাজারে পেঁয়াজ ও রসুনের দাম বেড়েছে। মানভেদে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত। প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। এক সপ্তাহ আগে যে দেশি রসুন প্রতিকেজি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছিল। শুক্রবার তা ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বেড়েছে সব ধরনের চালের দামও।
বাজারদর : চট্টগ্রামে বেশির ভাগ সবজি ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে। বেগুন কেজি মানভেদে ৪০ থেকে ৬০ টাকা, কাঁচামরিচ ৭০ টাকা, টমেটো ৪০-৫০ টাকা, ঢেঁড়স কেজি ৬০-৭০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, হাইব্রিড শসা ৩০-৪০ টাকা, দেশি শসা ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতি পিস ৪০ থেকে ৫০ টাকা। তবে সজনের দাম এখনো ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি। প্রতিকেজি পাবদা মাছ ৩৫০-৩৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া তেলাপিয়া ও কই ৩০০ টাকা, শিং ৮০০-১০০০ টাকা কেজি, রুই কেজি ৪০০ টাকা, কাতল ৪০০-৪২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিংড়ি ৬০০-৯০০ টাকা কেজি, শোল ৫০০-৬০০ টাকা, বোয়াল ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।