
পৃথিবীতে ভালোবাসা দিয়ে জয় করা শাশ্বত বিষয়। ভালোবাসার মধ্যেই আছে অমোঘ শক্তি। এ অনন্য শক্তিতে ভর করে মানুষ এবং প্রকৃতির মধ্যে রচিত হয়ে আসছে মায়াময় বন্ধন। সাধারণ পশুপাখি এমনকি হিংস্র প্রাণীকেও মানুষ ভালোবেসে জয় করেছে। বন্যপাখিও ধরা দিয়েছে মানুষের ভালোবাসায়। এমনই এক দৃষ্টান্ত দীর্ঘ এক যুগ ধরে দেখা যায় মেহেরপুরের গাংনী শহরে।
উপজেলা বাজারের চা ব্যবসায়ী রফিকুল আলম বলেন, ভোরের সূর্য ওঠার আগেই শালিকের ঝাঁক এসে কিচিরমিচির শুরু করে। আমরা ওদের জন্য শুকনো চাল, ডাল, বিস্কুট, পাউরুটি ছিটিয়ে দিই। ওরা খাওয়ার প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে। পাখিরা বুঝে গেছে, ওরা নিরাপত্তার মধ্যে আছে।
বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, একযুগ ধরে তারা বুনো শালিক পাখিদের খাইয়ে আসছেন। করোনার সময়েও তারা নিজেদের আর্থিক টানাটানির মধ্যেও পাখিদের খাইয়েছেন। একদিনের জন্যও খাবার দেওয়া বন্ধ করেননি।
এখানে খাবার দেওয়ার সময় অনেক পাথচারী দাঁড়িয়ে যান মানুষ আর বুনোপাখির মিতালি দেখতে। পথচারীদের মনেও পাখিদের প্রতি ভালোবাসার জন্ম হয়। তবে ব্যবসায়ীরা জানান, ব্যস্ত এ শহরের মানুষ পাখিপ্রেমী হয়ে উঠলেও যাত্রীবাহী বাস ও মালবাহী লরির হর্ন পাখিদের মাঝে মাঝে আতঙ্কিত করে।
সরজমিন শুক্রবার ভোরে বাজারে গিয়ে দেখা যায়, মাসুদ রানা নামের এক যুবক পাশের এক দোকান থেকে আধাকেজি প্যাকেট চানাচুর কিনে ছিটিয়ে দিলেন। মুহূর্তেই বিভিন্ন বাড়ির কার্নিশ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ছাদের কর্নার ও বিদ্যুতের তারে বসে থাকা শালিক ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে এসে মহাভোজে শামিল হচ্ছে। পাশ দিয়েই যাতায়াত করছে নানা ধরনের যানবাহন। তবু শালিকের ঝাঁক নির্ভয়ে খাওয়ায় ব্যস্ত।
বাজারের আরেক চা দোকানি রমজান আলী বলেন, প্রথম দিকে সকালবেলা দুধ গরম করা পাত্রে লেগে থাকা পোড়া দুধের অংশ তুলে ও বিস্কুটের গুঁড়ো দোকানের সামনে ছিটিয়ে দিতাম। তখন অল্প কটি শালিক এসে খেয়ে যেত। কোনোদিন খাবার দিতে দেরি হলে কিচিরমিচির করে দৃষ্টি আকর্ষণ করত। তাতে শালিকগুলোর প্রতি এক ধরনের ভালোবাসার জন্ম হয়। এখন শত শত শালিক আসে। আশপাশের হোটেল রেস্তরাঁসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা পাখিদের খাবার দেন।
মেহেরপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, শালিক পরিবেশবান্ধব পাখি। ওরা ফসলের ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে থাকে। এ পাখিদের বাঁচিয়ে রাখলে ফসল উৎপাদনে অনেক সহায়ক হবে। শালিক পাখি পোষ মানে। কিছু শালিক কথাও বলতে পারে।