চট্টগ্রামে তীব্র গরমে জনজীবনে হাঁসফাঁস
এমএ কাউসার, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৩০ এএম
চট্টগ্রামে এক সপ্তাহ টানা তাপপ্রবাহে জনজীবনে হাঁসফাঁস অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। তীব্র গরমে ঘরের বাইরে যেমন স্বস্তি মিলছে না, তেমনই বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে ঘরেও টেকা যাচ্ছে না। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসে চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে গিয়ে ঠেকেছে। গত দুইদিন বিরাজ করছে মৃদু তাপপ্রবাহ। তবে বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি হওয়ায় এ তাপমাত্রা বেশি অনুভূত হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
এদিকে বৈশাখের খরতাপে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার প্রাণিকুল ওষ্ঠাগত। খাঁচার ভেতরে থাকা জলাধারে শরীর ও মুখ ডুবিয়ে গরম থেকে রেহাই পাওয়ার চেষ্টা করতে দেখা যায় প্রাণিগুলোকে।
চট্টগ্রামে খরতাপ আর ভ্যাপসা গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় বেড়েছে রোগীর চাপ। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে জ্বর, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত রোগীর ভর্তি বেড়েছে। শিশু ও মেডিসিন ওয়ার্ডে মেঝেতে রেখে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, তীব্র গরম ও সিজনাল ফ্লুর কারণে মানুষ বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। এ কারণে দিনের বেশির ভাগ সময় ঘরের ভেতরে অবস্থান করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, গরমে হাসপাতালে রোগীর ভর্তি বেড়েছে। শিশু এবং মেডিসিন ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বেশি। তবে পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে বেশ কয়েকটি পাওয়ার প্ল্যান্ট নানা কারণে বন্ধ রয়েছে। উৎপাদিত বিদ্যুৎ যোগ হচ্ছে জাতীয় গ্রিডে। সেখান থেকে চাহিদার কম বিদ্যুৎ পাওয়ায় অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ছে চট্টগ্রাম। বুধবার বিকাল ৩টায় চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১ হাজার ৪৪০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে বিদ্যুৎ পাওয়া গেছে ১ হাজার ১৮০ থেকে ১ হাজার ১৯০ মেগাওয়াট। বিদ্যুতের ঘাটতি ছিল ২৫০ থেকে ২৬০ মেগাওয়াট। এ ঘাটতি মেটাতে নগরীতে প্রতিদিন ১০-১৫ বার লোডশেডিং করা হয়। তবে উপজেলায় লোডশেডিংয়ের চিত্র ভয়াবহ। কোথাও কোথাও দিনে ৮-১০ ঘণ্টা লোডশেডিং করা হচ্ছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, চট্টগ্রামের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো নির্মাণ করতে এলাকার মানুষকে ভিটেবাড়ি ছাড়তে হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের। এরপরও কক্সবাজার-চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষ আশায় বুক বেঁধেছিল, বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো উৎপাদন শুরু করলে এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ মিলবে। কিন্তু পরিস্থিতি এখন উল্টো।
এদিকে তীব্র গরমে মানুষের মতো হাঁসফাঁস অবস্থা প্রাণিকুলেরও। সীমাহীন কষ্টে পড়েছে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার খাঁচাবন্দি পশুপাখি। চিড়িয়াখানার সাড়ে ৬ শতাধিক পশুপাখি গরম থেকে বাঁচতে দিনের বেশির ভাগ সময় পানিতে থাকছে।