ত্রাণ আর অনুদানে যৌনপল্লীবাসীর কষ্টের ঈদ

শামীম শেখ, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী)
প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:১৮ পিএম

রাত পোহালেই পবিত্র ঈদুল ফিতর। দেশের বৃহত্তম রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলাধীন দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর অসহায় নারীদের কাছে আনন্দের পরিবর্তে ঈদ এসেছে কষ্টের কারণ হয়ে।
অর্থকষ্টে তাদের বেশিরভাগই নিজেরা এবং সন্তানদের জন্য কিনতে পারেননি নতুন পোশাক। জুটছে না একটু ভালো খাবার। সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ আর অনুদানে চলছে তাদের ঈদ প্রস্তুতি।
যৌনপল্লীর বাসিন্দারা জানান, রোজার মাসে লোকজনের সমাগম কম। আয় রোজগার নেই বললেই চলে। পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি সামান্য অনুদান মিললেও হাসি নেই তাদের মুখে। অতি কষ্টে জীবন পার করছেন তারা। বেশিরভাগ যানবাহন পদ্মা সেতু দিয়ে পারাপার হয়। ফলে দৌলতদিয়া ঘাটে আগের মতো যাত্রীর সমাগম নেই। সেই সঙ্গে দৌলতদিয়া ঘাট পর্যন্ত ট্রেনের পরিমাণ কমে যাওয়ায় লোকজনের সংখ্যা কমে গেছে।
সরেজমিনে অল্পকালে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন যৌনকর্মী বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগে আমাদের আয়-রোজগার ছিল অনেক। আবার রেলগাড়ি কমিয়ে দেওয়ায় খদ্দেরও অনেক কমে গেছে। পুরো রোজার মাসে লোক নেই। অতি কষ্টে কাটছে আমাদের জীবন। ছেলেমেয়েদের পোশাক কিনে দেওয়ার সামর্থ্য নেই আমাদের অনেকের।
এদিকে গত ৬ এপ্রিল বেসরকারি সংগঠন উত্তরণ ফাউন্ডেশনের পক্ষ হতে যৌনপল্লীর ১ হাজার ৭শ নারীকে একটি করে শাড়ি এবং ঈদের দিন রান্না করে খাওয়ার জন্য ঈদ উপহার সামগ্রী প্রদান করে। এছাড়া পরদিন ৭ এপ্রিল সরকারিভাবে পল্লীর ৫শ নারীকে ভিজিএফের ২০ কেজি করে চাউল বিতরণ করেন রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান।
পল্লীর কয়েকটি সূত্র জানায়, এসব সহযোগিতা পল্লীর অসহায় নারীদের অনেক উপকারে আসবে। তবে এখানকার মাদকাসক্ত কোনো কোনো মহিলা এসব অনুদান হাতে পেয়ে বিক্রি করে দিয়ে মাদক সেবন করেছে।
সূত্র জানায়, অনুদানের সহায়তায় অসহায় নারীদের কোনো রকম খাবারের সংস্থান হলেও হাতে নগদ টাকা না থাকায় সন্তানদের জন্য অধিকাংশই তেমন কিছু কিনে দিতে পারেননি।
পল্লীর নারীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন অসহায় নারী-ঐক্য সংগঠনের সভানেত্রী ও উত্তরণ ফাউন্ডেশনের সদস্য ঝুমুর বেগম বলেন, রোজার মাসে যৌনপল্লীতে তেমন লোকজন আসে না। ফলে পল্লীর মেয়েদের আয়-রোজগারও তেমন থাকে না। এই মাসটা অনেকটা খেয়ে না খেয়েই তাদের কাটছে। তাদের অসহায়ত্বের কথা চিন্তা করে পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান তার উত্তরণ ফাউন্ডেশনের পক্ষ হতে এখানে ১ হাজার ৭শ অসহায় নারীর মাঝে নতুন শাড়ি ও ঈদ উপহার হিসাবে সেমাই, চিনি, তেল, ডাউল, চাউল, গুড়া দুধ দিয়েছেন। ডিসিও ৫শ জনকে চাল দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তবে হাতে নগদ টাকা না থাকায় অনেকে ছেলে-মেয়েদের নতুন পোশাক কিনতে পারেনি।
এ সম্পর্কে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র বলেন, যৌনপল্লীর বাসিন্দারাও দেশের নাগরিক। অন্য সাধারণ মানুষের মতো তাদেরও ঈদের আনন্দ উপভোগ করার অধিকার রয়েছে। এ বিবেচনায় সরকারের ত্রাণ তহবিল থেকে ডিসি স্যার নিজে উপস্থিত থেকে পল্লীর বাছাইকৃত ৫শ জন দুঃস্থ নারীকে ২০ কেজি করে চাউল বিতরণ করেন। আশা করি এই অনুদান তাদের কিছুটা হলেও উপকারে আসবে।