রাষ্ট্রপতির ক্ষমাও পেলেন না রাজশাহীর সাবেক বোর্ড চেয়ারম্যান মোকবুল
রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৪৫ পিএম
বিধিবহির্ভূতভাবে ছয় কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের অভিযোগে বিভাগীয় দণ্ড পাওয়া রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহা. মোকবুল হোসেনের ক্ষমার আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। ফলে তার বেতন গ্রেডের নিম্নধাপে অবনমিতকরণ দণ্ড বহাল থাকল।
গত ৩১ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের শৃঙ্খলা বিষয়ক শাখার সচিব সোলেমান খান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বর্তমানে ওএসডি হয়ে থাকা বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহা. মোকবুল হোসেনের বিরুদ্ধে ২০২০ সালে ১৫ জানুয়ারি রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের ছয়জন কর্মকর্তাকে বিধিবহির্ভূতভাবে পদোন্নতির আদেশ প্রদান ও এ বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্তের জন্য নির্ধারিত তারিখে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে দায়িত্বে অবহেলা করেন। সরকারি কর্মচারী বিধি অনুযায়ী ‘অসদাচরণের অভিযোগে বিভাগীয় মামলা দায়ের ও একই বিধি মোতাবেক ২০২৩ সালের ২৭ জুলাই তাকে বেতন গ্রেডের নিম্নতর ধাপে অবনমিতকরণ’ দণ্ড প্রদান করা হয়।
এরপর তিনি ওই আদেশের বিরুদ্ধে দণ্ডাদেশ মার্জনা করার জন্য রাষ্ট্রপতি বরাবর আবেদন করেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতি পুনর্বিবেচনার আবেদন নামঞ্জুর করে পূর্বের দণ্ড বহাল রেখেছেন। ফলে ড. মোহা, মোকবুল হোসেনের ‘বেতন গ্রেডের নিম্নতর ধাপে অবনমিতকরণ’ লঘুদণ্ডের আদেশ বহাল রইল।
এর আগে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের এক তদন্তে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের ১৫ কর্মকর্তার পদোন্নতিতে অনিয়ম ধরা পড়ে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) বিভাগের আলাদা দুই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ২৩ থেকে ২৫ নভেম্বর পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে গিয়ে সরেজমিনে এ বিষয়ে তদন্ত করেন।
জানা গেছে, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে এ কমিটি দুদক ও মাউশিতে প্রতিবেদন জমা দেন। প্রতিবেদনে ওই ১৫ কর্মকর্তার পদোন্নতি স্থগিত এবং গ্রহণ করা অতিরিক্ত অর্থ ফেরত নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার পর পদোন্নতি স্থগিত এবং গ্রহণ করা অতিরিক্ত অর্থ ফেরত নেওয়ার সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ ও অধ্যাপক মো. মোকবুল হোসেনের আমলে দুদফায় শিক্ষা বোর্ডের ১৫ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিতে নানা অনিয়ম হয়। সিলেকশন কমিটিও নিয়ম না মেনে তাদের পদোন্নতির সুপারিশ করেছিলেন।
প্রথমে ২০১৭ সালে ৯ জন সপ্তম গ্রেড থেকে ষষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতি পান। এদের পদোন্নতি দিতে সিলেকশন কমিটি ২০১৭ সালের ২১ এপ্রিল বোর্ডের চেয়ারম্যানের কক্ষে ৪৮ জন কর্মকর্তার মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করে। কমিটির সভাপতি ছিলেন বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ।
৪৮ জনের মধ্যে কমিটি ৯ জনকে পদোন্নতির সুপারিশ করলে ২০১৭ সালের ৯ জুলাই তাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়। শুধু মৌখিক পরীক্ষার ভিত্তিতে ৯ জনের পদোন্নতির তালিকাটি করা হয়। ওই মেধাতালিকা থেকে ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান মোকবুল হোসেন আরও ৬ জনকে পঞ্চম গ্রেডে পদোন্নতি দেন। প্রথমে বিতর্কিত ওই মেধাতালিকার ১ থেকে ৯ নম্বর ক্রমিকের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়া হলেও দ্বিতীয় পদোন্নতির ক্ষেত্রে ক্রমিক অনুসরণ করা হয়নি। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চূড়ান্তভাবে দণ্ডপ্রাপ্ত হলেন অধ্যাপক মোকবুল হোসেন।