Logo
Logo
×

সারাদেশ

দৌলতপুরে উপবৃত্তিধারী দরিদ্র শিক্ষার্থী থেকে বেতন আদায়

Icon

দৌলতপুর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৫৫ পিএম

দৌলতপুরে উপবৃত্তিধারী দরিদ্র শিক্ষার্থী থেকে বেতন আদায়

দৌলতপুর উপজেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের উপবৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হরহামেশা বেতন আদায় করছেন খলসী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. লুৎফর রহমান। এতে দরিদ্র ও মেধারী শিক্ষার্থীরা পড়ছে বিপাকে। অথচ উপবৃত্তি পাওয়া দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বেতন উপবৃত্তি থেকে কেটে রাখা হয়। 

সরেজমিন দেখা যায়, স্কুল বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীরা স্কুলের বেতন পরিশোধ করতে ভিড় করছে অফিস কক্ষে। কারও কারও হাতে দেখা যায় বেতনের রসিদ। উপজেলার খলসী আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের উপবৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের থেকে গত জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসসহ তিন মাসের বেতন আদায় করা হচ্ছে। স্কুলের উপবৃত্তিধারী শিক্ষার্থীর প্রায় সবাই দরিদ্র দিনমজুর ও কৃষক পরিবারের সন্তান। যাদের অধিকাংশের নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। দীর্ঘদিন ধরে উপবৃত্তিধারী দরিদ্র শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন আদায় করায় বাড়ছে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী রত্না আক্তার জানায়, সে উপবৃত্তি পায় প্রতি মাসে ১৫০ টাকা করে। স্কুলের তিন মাসের বেতন ৮৬০ টাকা। তার বাবা একজন দিনমজুর। তারা চার বোন। বাবাই একমাত্র উপার্জনক্ষম। তার বাবার সামান্য আয়ে সংসার চালানোই কষ্টসাধ্য। স্কুলের বেতন দিতে না পারলে পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে ওই শিক্ষার্থী। একই শ্রেণির শিক্ষার্থী সাবিত্রী, সুমনা, নিপা, রাজিনা ও সুচি জানায়, ‘আমরা উপবৃত্তির কিছু টাকা পাই। যা পাই তার দ্বিগুণ স্কুলে বেতন দিতে হয়। টাকা দিতে না পারলে প্রধান শিক্ষক চাপ দেন। বাধ্য হয়ে টাকা দিতে হয়। অথচ আমাদের নাকি বেতন মাফ।’

মানিক নামে একজন অভিভাবক বলেন, পড়ালেখার জন্য সরকার উপবৃত্তির টাকা দেয়। আবার ওই শিক্ষার্থীর স্কুলের বেতন সরকার দিয়ে দেয়। এরপরও স্কুল কর্তৃপক্ষ বেতন আদায় করে বিপুল পরিমাণ টাকা অবৈধভাবে হাতিয়ে নিচ্ছে। বিদ্যালয়ের শ্রেণি শিক্ষকদের থেকে জানা যায়, ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতি মাসে ২০০ টাকা, সপ্তম শ্রেণির জন্য প্রতি মাসে ২২০ টাকা, অষ্টম শ্রেণির জন্য প্রতি মাসে ২৬০ টাকা এবং নবম ও দশম শ্রেণির জন্য প্রতি মাসে ২৮০ টাকা বেতন ধরা আছে। স্কুলে উপবৃত্তি শিক্ষার্থী রয়েছে ৮৫ জন। জেলা শিক্ষা কার্যালয় সূত্র জানায়, দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার খরচ জোগান দিতে সরকার প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকে উপবৃত্তি দেয়। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বছরে দুই কিস্তিতে উপবৃত্তির টাকা দেওয়া হয়। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাসে ২০০ টাকা, অষ্টম শ্রেণিতে ২৫০ টাকা, নবম ও দশম শ্রেণিতে ৩০০ টাকা করে উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। উপবৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে কোনো মাসিক বেতন আদায় করা যাবে না বলে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। উপবৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকে বিদ্যালয়ে দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা বলেন, খলসী আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অধিকাংশ শিক্ষার্থী দরিদ্র ও শ্রমজীবীদের সন্তান। তাদের পক্ষে বিদ্যালয়ের এত টাকা পরিশোধ করা কষ্টসাধ্য। প্রধান শিক্ষক টাকা আদায়ের জন্য বিভিন্ন সময় চাপ দেন। টাকা না দিলে বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করা যাবে না এমন কথাও তিনি শিক্ষার্থীদের বলে থাকেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. লুৎফর রহমান বলেন, সবাই বেতন দিতে চায় না। 

একজন শিক্ষার্থীকে দেখিয়ে তিনি বলেন, ৮৬০ টাকার মধ্যে ওই ছাত্রী ৫০০ টাকা দিছে। উপবৃত্তিধারীদের কাছ থেকে বেতন নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস জানে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ইমদাদুল বলেন, উপবৃত্তিধারী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন নেওয়া যাবে না। কেউ নিয়ে থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম