৩০ বছর ধরে বিনা টাকায় রোজাদারদের যে সেবা দিচ্ছেন মাহতাব
মো. মঞ্জুরুল আলম মাসুম, বাগাতিপাড়া (নাটোর)
প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০২৪, ০৯:১৫ পিএম
‘বাংলার মাটিতে এক কাঠা জমি থাকলে সরকারকে কর দিতে হবে। কিন্তু আমাকে কোনো পয়সা দিতে হবে না। আমার মিসওয়াক (দাঁতন) ফ্রি। সবাই ব্যবহার করতে পারেন।’
রমজান মাস এলেই এমন সুরে রোজাদারদের মধ্যে মিসওয়াক বিলি করেন নাটোরের বাগাতিপাড়ার মাহাতাব উদ্দিন। বয়স ৬০ বছর। তার বাড়ি উপজেলার চকমহাপুর গ্রামে। তিনি পেশায় একজন দিনমজুর। আগে কৃষি খামারে প্রহরীর চাকরি করতেন। সম্প্রতি বাগাতিপাড়ার তমালতলা বাজারে মিসওয়াক বিতরণের সময় দেখা হয় তার সঙ্গে।
সেই ছোটবেলা থেকে রমজান মাসে বাড়ির পাশের বাজারে গিয়ে বসে থাকতেন। বিকাল হলেই সবাই তাকে মিসওয়াক নিয়ে আসতে হুকুম করতেন। সেই থেকে মানবসেবার অদ্ভুত নেশায় পেয়ে বসে তাকে।
মাহাতাব উদ্দিন মনে করেন, কেউ হুকুম করার আগেই যদি তার মিসওয়াকটা হাতের কাছে এনে দেওয়া যেত, তাহলে লোকটি বোধ হয় আরও খুশি হবেন। সেই ভাবনা থেকেই শুরু। এরপর আড়াই যুগ ধরে রমজান মাসে মিসওয়াকের ব্যাগ নিয়ে ঘুরে বেড়ান নাটোর-রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন হাটে-বাজারে, মসজিদের সামনে। আর বিতরণ করেন বিনামূল্যে এসব মিসওয়াক। এতেই তার আনন্দ। মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনই তার লক্ষ্য।
তিনি জানান, সেহরি খাওয়ার পর থেকে সারা সকাল মিসওয়াক বানিয়ে দুপুরের পরই বেরিয়ে পড়েন বিতরণ করতে। এ কাজে তার স্ত্রী ও সন্তানরা তাকে সহযোগিতা করেন। মূলত তিনি নিম গাছের ডাল দিয়ে মিসওয়াক বানান। সংসার জীবনে তিনি তিন সন্তানের জনক। এক মেয়ে ও দুই ছেলে। মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন অনেক আগেই। দুই ছেলেও এখন সাবালক।
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বছির উদ্দিন জানান, প্রত্যেক বছরই তাকে রমজান মাসে মিসওয়াক বিলি করতে দেখা যায়। তবে কারো কাছ থেকে তিনি টাকা নেন না।