সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ
শতবর্ষী পটিয়া মাদ্রাসার ইতিহাস-ঐতিহ্যকে কলঙ্কিত করা হয়েছে
চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০২৪, ১১:৪১ এএম
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে পটিয়া মাদ্রাসার ইতিহাস-ঐতিহ্য রক্ষা পরিষদের সংবাদ সম্মেলন।
চট্টগ্রামের পটিয়া জামেয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার বর্তমান শুরা কমিটিকে অবৈধ ও দুর্নীতিগ্রস্ত বলে আখ্যায়িত করেছে মাদ্রাসার ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণ পরিষদ।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের নেতারা বলেছেন, বর্তমানে মহাপরিচালক হিসেবে যাকে নিয়োগ করা হয়েছে, সেই আবু তাহের নদভী- আপাদমস্তক একজন দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি। এমন একজন ব্যক্তিকে মহাপরিচালক করে শতবর্ষী পটিয়া মাদ্রাসার ইতিহাস-ঐতিহ্যকে কলঙ্কিত করা হয়েছে। সন্ত্রাসীদের দখলদারিত্ব, এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি ও হামলা-ভাঙচুর এবং অবৈধ শুরার মাধ্যমে চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের মাদ্রাসায় পদায়ন করা হয়েছে।
এসব ঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, সাবেক কৃতি শিক্ষার্থী, শুভানুধ্যায়ী ও নিপীড়িত শিক্ষক-ছাত্রদের সমন্বয়ে গঠিত পটিয়া মাদ্রাসার ইতিহাস-ঐতিহ্য রক্ষা পরিষদ এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মাদ্রাসার সাবেক ছাত্র আমিনুর রশীদ।
সেগুনবাগান তালিমুল কুরআন মাদ্রাসা কমপ্লেক্সের পরিচালক হাফেজ মোহাম্মদ তৈয়বের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ফটিকছড়ি জামিয়া ইসলামিয়া বায়তুল হুদার মুহতামিম ও জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার মজলিসে শুরার সদস্য হজরত মাওলানা এমদাদুল্লাহ নানুপুরী, শোভনদন্ডী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল আলীম, জামিয়া দারুল মাআরিফ চট্টগ্রামের সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা নুরুল আমীন মাদানি, পটিয়া পৌরসভার সাবেক কমিশনার মোহাম্মদ ইবরাহীম, ছনহারা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার মাহবুবুল আলম, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মুহাম্মদ নাসিরুদ্দীন, মাওলানা আবদুল আজীজ, মাওলানা আমিনুর রশীদ পটিয়াবী, মাওলানা কুতুবুদ্দীন, মাওলানা হোসাইন আহমদ ও মাওলানা উজাইরুল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: পটিয়া মাদ্রাসায় নিয়মবহির্ভূত শুরার মাধ্যমে মুহতামিম নিয়োগ অবৈধ
সংবাদ সম্মেলনে পরিষদ নেতারা বলেন, আবু তাহের নদভী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে গরিব গ্রাহকদের শতকোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জায়গায় দুই ডজন মামলা বিচারাধীন। পটিয়া মাদ্রাসায় ছাত্রদের ফুসলিয়ে তিনি নজিরবিহীন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সংঘটিত করেছেন। আর তার অনুসারী মুরব্বিরা সেই ঘটনাকে অনুমোদন দিয়েছেন এবং অপরাধীদের রক্ষা করেছেন। এটা মাদ্রাসার সাধারণ শিক্ষক, শিক্ষার্থী কখনই মেনে নেবে না।
সংবাদ সম্মেলনে আরও দাবি করা হয়, যারা পটিয়া মাদ্রাসায় বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন, তারা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করছেন। মাদ্রাসার ভেতরে টর্চার সেল বানিয়ে রাস্তা থেকে ভিন্নমতের ছাত্র-শিক্ষককে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে মারধর করছেন। মাওলানা সোহরাব হোসেন আইমানের আঙুলের নখ তুলে নেওয়া হয়েছে। আরিফ নামের একজনকে পায়ে মাড়িয়ে তার কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। এরা নিজেদের ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থে শিক্ষার উদ্দেশ্যে আসা শিক্ষার্থীদের সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহার করছে।
আরও পড়ুন: পটিয়ায় আলেমকে নির্যাতন করে খুলে নেওয়া হলো নখ
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক নামধারী জুলুমবাজদের বয়কট করার জন্য দেশের সচেতন জনগণ ও অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন নেতৃবৃন্দ।
পটিয়া মাদ্রাসার বর্তমান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস একটি স্বতন্ত্র শিক্ষা বোর্ড। এর অন্তর্ভুক্ত ছয়শ মাদরাসা শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি থেকে একটি অংশ ইত্তেহাদের তহবিলে বছরের পর বছর দিয়ে প্রায় এক কোটি টাকার একটি তহবিল তৈরি করা হয়। ঐতিহ্য অনুযায়ী সেই তহবিল মহাসচিবের তত্ত্বাবধানে পটিয়া মাদ্রাসায় সংরক্ষিত একটি বিশেষ আলমারিতে রক্ষিত হয়। বর্তমান কর্তৃপক্ষ ছয়শ মাদ্রাসার হকের সেই টাকা আলমারি ভেঙে তসরুপ করেছে। আমরা সেই অর্থ পুনরুদ্ধার করে আইনানুগ ইত্তেহাদে ফেরত দেওয়ার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
আরও পড়ুন: আবু তাহের নদভীকে প্রধান আসামি করে মামলা নির্যাতিত আলেমের