Logo
Logo
×

সারাদেশ

ঈদ ঘিরে চাঙা জামদানি পল্লি

Icon

এ হাই মিলন, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)

প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২৪, ১১:১৪ পিএম

ঈদ ঘিরে চাঙা জামদানি পল্লি

জামদানির আঁতুরঘর হিসাবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা। এখানকার নোয়াপাড়া বিসিক শিল্প নগরীর জামদানি পল্লিতে এ পেশার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন প্রায় ৫ হাজার তাঁতি। গত কয়েক বছরে করোনাসহ বিভিন্ন কারণে জামদানি শিল্প কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এবারের ঈদকে সামনে রেখে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে এখানকার জামদানি শিল্প। ঈদের আগে এখন তাঁতিদের যেন দম ফেলার সুযোগ নেই। তবে এবার জামদানি পল্লিতে সরাসরি ক্রেতার কাছে বিক্রির চেয়ে অনলাইনে শাড়ি বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তাঁতিরা। 

ই-কমার্স ও সরাসরি শাড়ি কিনতে আসা ক্রেতাদের সমন্বয়ে এই ঈদে প্রায় ৫০ কোটি টাকার শাড়ি বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ব্যবসায়ীদের। রূপগঞ্জের জামদানি সারা দেশ থেকে পাইকাররা এসে নিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া প্রায় ১০ কোটি টাকার জামদামি মধ্যপ্রাচ্য, ভারত, ভুটান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে বলে জানান তাঁতিরা। 

প্রাচীনকালের মিহি মসলিন কাপড়ের উত্তরাধিকারী হিসাবে জামদানি শাড়ি বাঙালি নারীদের কাছে খুব সমাদৃত। বাঙালির সংস্কৃতির অন্যতম ঐতিহ্য জামদানি বিভিন্ন ডিজাইনের হয়ে থাকে। এর মধ্যে অন্যতম-পান্না হাজার, তেরছা, পানসি, ময়ূরপঙ্খি, বটপাতা, করলা, জাল, বুটিদার, জলপাড়, দুবলী, ডুরিয়া, বলিহার, কটিহার, কলকাপাড় ডিজাইন বেশ জনপ্রিয়।

সরেজমিন দেখা যায়, তাঁত বোনার খটখট শব্দে মুখরিত শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ঘেঁষা রূপগঞ্জের জামদানি পল্লি। জোরে জোরে বাজানো গানে মুখরিত কারিগররা। সামনেই ঈদুল ফিতর। জামদানি পল্লির প্রায় প্রত্যেকটি ঘরেই চলছে শাড়ি তৈরির কাজ। তাঁতিদের যেন দম ফেলার সুযোগ নেই। 

পল্লির ভেতরে অর্ধশতাধিক শোরুম রয়েছে। এখানে পাইকারি ও খুচরা ক্রেতারা নিজেদের পছন্দমতো বিভিন্ন নান্দনিক ডিজাইনের শাড়ি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এখন শাড়ির পাশাপাশি জামদানি দিয়ে পাঞ্জাবি, থ্রি-পিস, টু-পিস ও বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের পোশাক তৈরি করা হচ্ছে। ফলে জামদানির জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। তবে জামদানি পল্লিতে আসা ক্রেতারা পল্লির পরিবেশ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। রাস্তাঘাটের বেহাল দশা, ঘিঞ্জি পরিবেশ জামদানি পল্লির সৌন্দর্য অনেকটা ম্লান করেছে বলে দাবি এখানে আসা ক্রেতাদের। 

তাঁতিদের সঙ্গে কথা বললে তারা যুগান্তরের এ প্রতিনিধিকে বলেন, করোনার পর গত দুই-তিন বছর বেশকিছু প্রতিবন্ধকতার কারণে তারা কিছুটা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। তবে এ বছর তাদের জামদানি বিক্রি খুব ভালো হচ্ছে। সরাসরি পাইকারি ও খুচরা ক্রেতারা তাদের কাছ থেকে শাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। দামও ভালো পাচ্ছেন। পাশাপাশি তারা ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে জামদানি শাড়ি বিক্রির নতুন প্ল্যাটফরম হিসাবে ব্যবহার করছেন। অনলাইনে অর্ডার পাওয়া শাড়িগুলো বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পৌঁছে যাচ্ছে। একেকটি শাড়ি ২ হাজার থেকে শুরু করে ১ লাখ টাকারও বেশি দামে বিক্রি হয়ে থাকে। জামদানি পল্লিতে প্রায় অর্ধশত তাঁতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের তৈরি শাড়ি বিক্রি করছেন। 

পল্লির নোয়াপাড়া জামদানির মালিক কবির হোসেন জানান, এ বছর থেকে জামাদানির বাজার চাঙা হতে শুরু করেছে। তাদের বিক্রিও বেড়েছে অনেক। 

রূপসী জামদানির মালিক রমজান আলী বলেন, তার বাবা হোসেন ভূঁইয়া ২০ বছর ধরে জামদানির সঙ্গে সম্পৃক্ত। জামদানি পল্লিতে তার বাবার দোকান রয়েছে। তিনি সরকারি মুড়াপাড়া কলেজে অনার্সে লেখাপড়া করছেন। পাশাপাশি অনলাইনে একটি পেজ খুলে নিয়মিত জামদানি শাড়ির ছবি ও দাম আপলোড করতে থাকলেন। কয়েক মাসের মধ্যেই দোকানের পাশাপাশি অনলাইনেও শাড়ি বিক্রি হতে থাকল। ঈদ সামনে রেখে তার পেজে শাড়ি ভালো বিক্রি হচ্ছে। 

রূপগঞ্জের জামদানি পল্লি থেকে জামদানি কিনে অনলাইনে বিক্রি করেন কামরুন নাহার নামে এক কলেজ শিক্ষার্থী। তিনি যুগান্তরকে বলেন, আমি একটি প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করছি। পাশাপাশি অনলাইনে জামদানির ব্যবসা শুরু করি। ঈদ সামনে রেখে আমার অনলাইনে অনেক ইউনিক ডিজাইনের জামদানির কালেকশন উঠিয়েছি। 

তবে তাঁত কারিগরদের অভিযোগ, গত কয়েক বছর জামদানির বাজার মন্দার অজুহাতে তাঁতকল মালিকরা শ্রমিকদের মজুরি বাড়াননি। ফলে অনেক তাঁত কারিগর পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন। বেতন না বাড়ালে কারিগরের অভাবে এ পেশা বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। 

এ ব্যাপারে তাঁতকল মালিকদের দাবি, জামদানি বিক্রি বাড়লেও খরচ অনেক বেড়ে গেছে। সুতার দাম, রক্ষণাবেক্ষণ, পরিবহণ খরচসহ বিভিন্ন খরচ বাড়ার কারণে শাড়ি বিক্রি বেশি হলেও লাভ তেমন একটা হচ্ছে না। তারপরও যতটুকু পারা যাচ্ছে মজুরি বাড়ানো হচ্ছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম