Logo
Logo
×

সারাদেশ

অবৈধ আবাসন ব্যবসার নামে প্রতারণা, আলোচিত মোস্তাফিজ গ্রেফতার

Icon

রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২৪, ১০:২৩ পিএম

অবৈধ আবাসন ব্যবসার নামে প্রতারণা, আলোচিত মোস্তাফিজ গ্রেফতার

অবৈধ আবাসন ব্যবসার নামে ‘ফুটপাত থেকে কোটিপতি’ বনে যাওয়া  প্রতারক গ্রিন প্লাজা রিয়েল এস্টেট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে মোস্তাফিজকে অবশেষে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার ভোরে রাজশাহী মহানগরী থেকে বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।

গ্রেফতার মোস্তাফিজ চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোটাহাট উপজেলার আব্দুর রাকিবের ছেলে।

প্রতারক মোস্তাফিজকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, মোস্তাফিজের বিরুদ্ধে অন্তত ডজনখানেক প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে একটি ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। সেই মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দুপুরে আইনগত প্রক্রিয়া শেষে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে সোমবার রাতে প্রতারক মোস্তাফিজের বিরুদ্ধে ১২ লাখ টাকা প্রতারণার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয়। জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার এজাজুল হক নামের এক ব্যক্তি এ মামলাটি দায়ের করেন।

এজাজুল হক অভিযোগ করেন, তার নিকট একটি ফ্ল্যাট বিক্রির চুক্তি করে ১২ লাখ টাকা নেন মোস্তাফিজ। কিন্তু তিনি ওই ফ্লাটটি না দিয়ে উল্টো এজাজকে ভয়ভীতি দেখিয়ে সমস্ত কাগজপত্র জোর করে কেড়ে নেন।

এদিকে পুলিশের একটি সূত্র জানায়, মোস্তাফিজের বিরুদ্ধে ৬৩ লাখ টাকা নিয়ে ফ্ল্যাট বিক্রির নামে প্রতারণার অভিযোগে আরও একটি অভিযোগ দেওয়া হয় বোয়ালিয়া মডেল থানায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক নারী সেই অভিযোগ দেন।

ওই নারীর অভিযোগ, রাজশাহী মহানগরীর ঘোড়ামারা এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনের একটি ফ্ল্যাট মোস্তাফিজ ৬৪ লাখ টাকা দাম ধরে তার নিকট বিক্রি করেন। এরই মধ্যে ওই নারী মোস্তাফিজকে ৬৩ লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন। কিন্তু এখন আরও ১১ লাখ টাকা বেশি দাবি করছেন মোস্তাফিজ। ওই টাকা না দিলে ওই নারীকে ফ্ল্যাটটি রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দিচ্ছেন তিনি।  ওই নারী এর আগে এক রাজশাহীর মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের কাছে অভিযোগ করেন। মেয়রের হস্তক্ষেপে তিনি ফ্ল্যাট বুঝে পেলেও তাকে রেজিস্ট্রি দেননি মোস্তাফিজ।

এছাড়া রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান কামরুল ইসলামের কাছে থেকে ফ্ল্যাট দেওয়ার নামে প্রতারক মোস্তাফিজ ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ ঘটনায় প্রফেসর কামরুল রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন) বরাবর গত ৭ মার্চ একটি লিখিত অভিযোগ করেন।

অভিযোগে তিনি বলেন, গত বছরের ১১ নভেম্বর মহানগরীর ঘোড়ামারা এলাকায় মোস্তাফিজের মালিকনাধীন ‘গ্রিন প্যালেস’ নামের একটি ভবনের ছয় তলায় একটি ফ্ল্যাট ৬০ লাখ টাকায় চুক্তি করেন। এর মধ্যে দুটি চেকে ২০ লাখ টাকা পরিশোধ করেন। এরপর আরও ৫ লাখ টাকা নগদ নেন মোস্তাফিজ। কিন্তু চুক্তির তিন মাস পরে ২৫ লাখ টাকা নিয়েও বেশি লাভে চুক্তি করা ফ্ল্যাটটি সাইফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেন। এরপর থেকে মোস্তাফিজ আর ফোন ধরেন না। টাকাও ফেরত দেন না।

এদিকে মোস্তাফিজকে গ্রেফতারের পর সন্তোষ প্রকাশ করে আবু হানিফ নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘পূর্ব পরিচিত হওয়ায় প্রতারক মোস্তাফিজকে প্রায় বছর খানেক আগে ভবন নির্মাণের জন্য একখণ্ড জমি দিয়েছিলাম। চুক্তি হয়েছিল ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে। কিন্তু মোস্তাফিজ আমার সঙ্গে বড় ধরনের প্রতারণা করেছেন। তখন সেই চুক্তি বাতিল করে অন্য একজন আবাসন ব্যবসায়ীকে জমিটি ভবন নির্মাণের জন্য দিলে তিনি আমাকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার জন্য আরও বড় ধরনের প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করেন।

ভুক্তভোগী আবু হানিফ আরও বলেন, আমার একটি ব্যাংক একাউন্টের ফাঁকা চেক কৌশলে নিয়ে সেখানে ২ কোটি ৩২ লাখ টাকার এমাউন্ট বসিয়ে মিথ্যা চেকের মামলায় আমাকে ফাঁসায়। এই মামলায় আমাকে আড়াই মাস জেল খাটতে হয়েছে। প্রকৃতির বিচার খুব নির্মম। জমি আমার। কিন্তু আমাকেই জেল খাটতে হয়েছে। অবশেষে সেই প্রতারক গ্রেফতার হয়েছে জেনে আমি অত্যন্ত খুশি হয়েছি। আমি এই প্রতারকের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মাত্র একযুগ আগেও রাজশাহীর একটি বেসরকারি কোম্পানির অফিস সহকারী (পিওন) পদে চাকরি করতেন মোস্তাফিজ। পড়াশোনার খরচ যোগাতে প্রয়াত এক ব্যাংক কর্মকর্তার বাড়িতে আশ্রয় নেন তিনি। ওই ব্যাংক কর্মকর্তাকে বাবা এবং তার স্ত্রীকে মা পাতিয়েছিলেন মোস্তাফিজ। তাদের নিকট থেকেও প্রতারণা করে ৯০ লাখ টাকা এবং ৩ কাঠার একটি প্লট আবাসন ব্যবসার নাম করে হাতিয়ে নেন। এরপর থেকে রাজশাহী মহানগরীতে মোস্তাফিজের উত্থান শুরু হয়। একের পর এক প্রতারণা করে মাত্র পাঁচ-সাত বছরের মাথায় ফুটপাতের প্রতারক মোস্তাফিজ হয়ে যান কয়েক কোটি টাকার মালিক।

এছাড়া চড়েন টয়োটা ব্যান্ডের বিলাসবহুল হ্যারিয়ার গাড়িতে। যাপন করেন আভিজাত্যপূর্ণ চাকচিক্যময় চোখ ধাঁধানো জীবন। বাগিয়ে নিয়েছিলেন রাজশাহী চেম্বার অব কমার্সের মতো প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের পদও। অবশেষে মঙ্গলবার ভোরে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন রাজশাহীর আলোচিত এই প্রতারক।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম