আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছেন- নৌকাডুবি থেকে বেঁচে যাওয়া রুবা
ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২৪, ১০:৫২ পিএম
‘আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছেন, আমি সাঁতার জানতাম বলে দুর্ঘটনার পর অন্ধকারে নদী সাঁতরিয়ে ভৈরব পাড়ে উঠেছি। আমার বান্ধবী আনিকা আক্তার (১৮) সাঁতার জানত না। এ কারণে সে পানিতে ডুবে গেছে। আজ তার মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সেদিনের দুর্ঘটনার কথা মনে হলে এখনো আমি আঁতকে উঠি। এই ভয় আমার সারা জীবন থাকবে।’
এ কথাগুলো বলছিলেন ভৈরবের মেঘনা নদীতে ট্রলারডুবির যাত্রী শিক্ষার্থী রুবা বেগম। রোববার ভৈরব মেঘনা ফেরিঘাটে একটি দোকানে বসে এই প্রতিনিধির সঙ্গে কথা হয় তার।
রুবা বলেন, আমার বাড়ি নেত্রকোনা এলাকায়। নরসিংদীর বেলাব উপজেলার দড়িকান্দি আমার নানা-নানির বাড়ি। নানার বাড়ি থেকে আমি নরসিংদী সরকারি কলেজে পড়াশোনা করে এবার এইসএসসি পাশ করেছি। নানার বাড়ির কাছেই আমার বান্ধবীর আনিকার বাড়ি। আনিকা আমার সঙ্গে পড়ত, তিনি এবার আমার সঙ্গে এইসএসসি পাশ করেন। কথা ছিল আমরা একসঙ্গে অনার্সে ভর্তি হব নরসিংদী সরকারি কলেজে।
তিনি বলেন, ঘটনার দিন শুক্রবার আমি আনিকাকে নিয়ে বিকাল সাড়ে ৪টায় ভৈরব মেঘনা পাড়ে ঘুরতে আসি। ইচ্ছা ছিল বাসায় গিয়ে ইফতার করব। মেঘনা পাড়ে এসে আমার বান্ধবীকে নিয়ে নৌকায় উঠি নদী ভ্রমণ করতে। এ সময় নৌকায় ১৫-১৭ জন যাত্রী ওঠেন। নদীতে ঘোরাঘুরির পর বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ট্রলারটি ভৈরব পাড়ে ফিরে আসতে থাকে।
রুবা বেগম বলেন, নদীর মাঝখানে ট্রলারটি আসার পর কয়েকজন যাত্রী মাঝিকে মোবাইলে ছবি তুলে দিতে অনুরোধ করে। এ সময় মাঝি তার হাতের বৈঠা ছেড়ে কয়েকজনের ছবি তুলছিলেন, আমি দেখছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে বিপরীতগামী একটি বালুবাহী বাল্কহেড ট্রলার সজোরে আমাদের ট্রলারকে ধাক্কা মারে। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ট্রলারটি উল্টে যায়। এ সময় আমি হতভম্ব হয়ে গিয়ে পানিতে পড়ে যাই। আমি সাঁতরাতে থাকি। আমার বান্ধবী আনিকা সাঁতার জানত না তা আমি জানতাম।
তিনি বলেন, এ সময় চিৎকার হইচইয়ে কিছু বুঝতে পারছিলাম না। আমার সঙ্গে কয়েকজন সাঁতরিয়ে পাড়ে উঠেন। আবার অন্য একটি ট্রলার ঘটনা দেখে ২-৩ জনকে পানি থেকে টেনে তাদের ট্রলারে তুলে দেখতে পায়। আল্লার নাম নিয়ে আমি নিজের জান বাঁচাতে নদীতে সাঁতরাতে থাকি। এ সময় পাড় দেখতে পাচ্ছিলাম না। অনেকক্ষণ সাঁতার কাটার পর আল্লাহর রহমতে প্রাণে বেঁচে যায়।
তিনি আরও বলেন, ঘটনার সময় আমার বান্ধবীর খোঁজ পানিতে নেওয়ার সুযোগ ছিল না। পাড়ে এসেই আমি আনিকার বাড়িতে খবর জানাই এবং দ্রুত বাসায় চলে আসি। রোববার খবর পেলাম বান্ধবী আনিকা আক্তারের লাশ উদ্ধার হয়েছে। তার মৃত্যুর ঘটনাসহ সেদিনের ঘটনাটির ভয় আমার এখনো কাটেনি। গত দুই রাত ধরে আমি ঘুমাইনি। একি হলো মনে হলে আমি আঁতকে উঠি। সারাজীবন ঘটনার কথাটি স্মরণ থাকবে।
রুবা বলেন, আল্লাহর রহমত থাকায় আমি বেঁচে গেছি।