ঋণের টাকা শোধ করতে প্রতিবেশী অটোচালককে হত্যা করে ট্রাক্টরচালক
নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২৪, ১০:৪১ পিএম
ঢাকায় গিয়েও ঋণের টাকা পরিশোধের উপায় না পেয়ে বাড়ি ফিরে অটোরিকশা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে পেশায় ট্রাক্টরচালক আলমগীর হোসেন। সে পরিকল্পনা থেকেই গত বুধবার রাতে প্রতিবেশী অটোরিকশাচালক মোশারফকে হত্যা করে অটো নিয়ে পালায়। অবশেষে পুলিশের জালে ধরা পড়ে দেয় ঘটনার স্বীকারোক্তি।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় হত্যাকারী আলমগীরসহ দুইজনকে গ্রেফতারের পর রোববার সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি জানান শেরপুরের পুলিশ সুপার মোনালিসা বেগম।
পুলিশ জানায়, জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার পিঠাপুনি গ্রামের সাফায়েত উল্লাহর ছেলে মোশারফ হোসেন একই উপজেলার কাকরকান্দি গ্রামে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়িতেই বসবাস করতেন। অন্যদিকে অভিযুক্ত আলমগীর কাকরকান্দি গ্রামের আব্দুল জুব্বারের ছেলে পেশায় ট্রাক্টরচালক। কিছুদিন আগে আলমগীর ঋণগ্রস্ত হয়ে ঢাকায় পাড়ি জমায়। সেখানেও সুবিধা করতে না পেরে বাড়ি ফিরে অটোরিকশা ছিনতাই করে তা বিক্রির টাকায় ঋণ পরিশোধের পরিকল্পনা করে।
বুধবার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ইফতার ও নামাজ শেষ করে বাড়ির কাজে নিজের অটোরিকশা নিয়ে কাকরকান্দি বাজারে যায় মোশারফ। এদিকে আগে থেকেই পরিকল্পনাকারী প্রতিবেশী আলমগীর মোশারফকে ভাড়ায় নিয়ে কালাকুমা বাজারে যায়। সেখানে যাওয়ার পর দুজন মিলে সিগারেট ও জুস পান করে। আলমগীর পরিকল্পনা অনুযায়ী মোশারফের জুসে আগেই নেশাজাতীয় দ্রব্য মিশিয়ে রাখায় মোশারফ অচেতন হয়ে যায়।
পরে তাকে পেছনের সিটে বসিয়ে আলমগীর নিজেই অটোরিকশা চালিয়ে ঘাকপাড়া-মণ্ডলিয়াপাড়া পাকা সড়কের কাছে নির্জনে অটোরিকশা থামায় এবং মোশারফের সঙ্গে থাকা গামছা গলায় পেঁচিয়ে তাকে হত্যা করে। পরে ওই মরদেহ ধানখেতে ফেলে রেখে অটোরিকশা নিয়ে প্রথমে ঝিনাইগাতির ফাকরাবাদ গ্রামে আত্মীয় বাড়ি লুকিয়ে রাখে। পরবর্তীতে ওই অটোরিকশার ৪টি ব্যাটারি খুলে আলমগীর তার খালু কালাকুমা গ্রামের অটোচালক নূর ইসলামের কাছে ৩০ হাজার ৮শ টাকায় বিক্রি করেন।
এদিকে বুধবার রাতে বাড়ি না ফেরায় মোশারফকে স্বজনেরা বৃহস্পতিবার সকালে খুঁজতে বের হয়। একপর্যায়ে ফেসবুকে ছবি পোস্ট করে সন্ধান চান। ততক্ষণে স্থানীয় লোকজন রাস্তার পাশের ধানখেতে অজ্ঞাতনামা মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশ এবং মোশারফের স্বজনদের খবর পাঠান। খবর পেয়ে স্বজনেরা মোশারফের মরদেহ শনাক্ত করে এবং পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করেন।
এ ঘটনায় ওই দিনই থানায় মামলা দায়ের করলে ঘটনার তদন্তে নামে পুলিশ। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে পরদিন শুক্রবার ঝিনাইগাতির আমতলী বাজারে পাশ থেকে ছিনতাই হওয়া অটোরিকশা উদ্ধার করে এবং পরে হত্যাকারী আলমগীরকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃত আলমগীরের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ব্যাটারি ক্রেতা নূর ইসলামকে গ্রেফতার ও হত্যায় ব্যবহৃত আলামত উদ্ধার করা হয়। অভিযুক্ত আলমগীর হত্যার কথা স্বীকার করে পুলিশের কাছে ও আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। রোববার বিকালে উভয়কে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।