Logo
Logo
×

সারাদেশ

কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড (ইত্তেহাদ)

পটিয়া মাদ্রাসায় নিয়মবহির্ভূত শুরার মাধ্যমে মুহতামিম নিয়োগ অবৈধ

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২৪, ১১:২০ এএম

পটিয়া মাদ্রাসায় নিয়মবহির্ভূত শুরার মাধ্যমে মুহতামিম নিয়োগ অবৈধ

আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস (কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড) বাংলাদেশের কার্যনির্বাহী পরিষদের সভা।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পটিয়া মাদ্রাসায় নিয়মতান্ত্রিক মজলিসে শুরাবহির্ভূত ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপে শুরার নামে প্রহসন করে মুহতামিম নিয়োগকে অসাংবিধানিক, নিয়মবহির্ভূত বলে মন্তব্য করেছেন আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস (কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড) বাংলাদেশের জাতীয় নেতারা। 

এটিকে মহামান্য হাইকোর্টের আদেশের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন আখ্যায়িত করে তীব্র নিন্দা এবং প্রত্যাখ্যান করেছেন তারা।   

সোমবার চট্টগ্রামের জামিয়া দারুল মাআরিফ আল-ইসলামিয়ার লাইব্রেরি হল মিলনায়তনে বোর্ডের সভাপতি আল্লামা সুলতান যওক নদভীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় এ নিন্দা জানানো হয়। 

বৈঠকে নেতারা বলেন, আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস (কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড) জয়েন্ট স্টক কোম্পানিস অ্যান্ড ফার্মস বাংলাদেশ কর্তৃক নিবন্ধিত একটি স্বতন্ত্র সংগঠন এবং সরকার কর্তৃক গঠিত কওমি মাদ্রাসা বোর্ডসমূহের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘হাইয়াতুল উলিয়া’র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য-সংস্থা। জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়া আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিসের অধীনস্থ একটি মাদ্রাসা। ইত্তেহাদের সংবিধান অনুযায়ী ইত্তেহাদভুক্ত মাদ্রাসাগুলোর মজলিসে শুরা বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত হওয়া আবশ্যক। বিগত ১৪ ফেব্রুয়ারির শুরা বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত নয়, তাতে ইত্তেহাদের কোনো সমর্থন নেই। কাজেই শুরাবহির্ভূত কতিপয় ব্যক্তিবর্গের অনৈতিক হস্তক্ষেপে অনুষ্ঠিত শুরার কোনো নৈতিক ও আইনি ভিত্তি নেই এবং মুহতামিম নিয়োগসহ তাদের যাবতীয় কার্যকলাপ সর্বৈব অবৈধ।

নেতৃবৃন্দ বলেন, পটিয়া মাদ্রাসা একটি সুশৃঙ্খলার প্রবাদপ্রতীম মাদ্রাসা। এটি আঞ্জুমানে ইত্তেহাদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ইত্তেহাদের নিজস্ব সংবিধান রয়েছে, সংবিধান অনুযায়ী একটি স্থায়ী মজলিসে শুরা রয়েছে। পটিয়া মাদ্রাসার বিগত মুরব্বিরাই এ সংবিধান রচনা করে গেছেন এবং মজলিসে শুরার স্থায়ী রূপরেখা দিয়েছেন। সেই অনুযায়ী বিগত ৩ নভেম্বর ২০২৩ ইত্তেহাদের সংবিধান অনুযায়ী নিয়মতান্ত্রিক মজলিসে শুরার অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় পটিয়ার ডাকবাংলোয়, যেখানে জাতীয় সংসদের দুজন সদস্য ও পদস্থ প্রশাসনিক ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩ মহামান্য হাইকোর্ট এক আদেশে (পি. সি. ৩৬৯০২/২০২৩) উপর্যুক্ত মজলিসে শুরার সিদ্ধান্তের আলোকে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার নিদের্শনা প্রদান করেন। সুতরাং তার বিপরীতে শুরা আহ্বান, অংশগ্রহণ, সভাপতিত্ব, মুহতামিম-সদরে মুহতামিম নিয়োগ ও তাদের কার্যক্রম পরিচালনা মহামান্য হাইকোর্টের আদেশের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন ও আদালত অবমাননার শামিল।

আরও পড়ুন: জোর করে পটিয়া মাদ্রাসার মহাপরিচালকের পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগ

পটিয়া মাদ্রাসার মতো ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ছাত্রসন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে দখলদারিত্ব কায়েম করা হয়েছে অভিযোগ করে বোর্ডের নেতারা বলেন, এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে বোর্ড সমর্থন না দেওয়ায় কুচক্রী মহল ক্ষুব্ধ হয়ে আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিসের নামে ভুয়া কমিটি দাঁড় করার চেষ্টা চালাচ্ছে। 

এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার হুশিয়ারি দিয়ে তারা বলেন, ইত্তেহাদ প্রায় ৬০০ মাদ্রাসার একটি বোর্ড। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় বোর্ডপরীক্ষার উপযোগী ২৪০টি মাদ্রাসার ২১০ মাদ্রাসাই আল্লামা সুলতান যওক নদভী ও আল্লামা ওবাইদুল্লাহ হামজার অধীনে ২০২৪ সালের কেন্দ্রীয় পরীক্ষা দিচ্ছে, এতে সারা দেশে প্রায় ছয় হাজার শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছে। কাজেই যেনতেনভাবে বোর্ড গঠন করে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মাধ্যমে মাদ্রাসা দখল এবং শুরাবহির্ভূত ব্যক্তিবর্গের অনৈতিক হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। 

বোর্ডের মহাসচিব আল্লামা ওবাইদুল্লাহ হামজার স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় বক্তব্য রাখেন ইত্তেহাদের সিনিয়র সহসভাপতি ও ফেনী সিলোনিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা সাইফুদ্দীন কাসেমি, কক্সবাজার ধওনখালী মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা মুসলিম উদ্দিন, ফটিকছড়ি বায়তুল হুদা মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা এমদাদুল্লাহ নানপুরী, বেফাকুল মাদারিসের মহাপরিচালক মাওলানা ওবাইদুর রহমান খান নদভী, মিরসরাই জামালপুর মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা মকদুসুদুর রহমান, চকরিয়া বলাগুল মুবিন মাদ্রাসার মুহতামিম মুফতি এনামুল হক, মহেশখালী ঘোরবকাটা মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা আবদুল মুনঈম, রাঙ্গুনিয়া কোদালা মাদ্রাসার মুহামিম মাওলানা আবদুল কাদের, মহেশখালী ঝাপুয়া মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা দলিলুর রহমান, সেগুনবাগান তা’লিমুল কুরআন কমপ্লেক্সের পরিচালক হাফেজ তৈয়ব, হাফেজ মাওলানা সালাহুল ইসলাম, মাওলানা নুরুল আলম, মাওলানা মুহসিন শরীফ, মাওলানা সোহেল সালেহ, মাওলানা হারুন, মাওলানা আবুল বশর, মাওলানা হাসান মুরাদাবাদী, মুফতি ফয়জুল্লাহ, কাজি এরশাদুল্লাহ, মাওলানা হাফেজ রফিকুল ইসলাম ও মাওলানা ফুজাইল আবদুল জলিলসহ ইত্তেহাদভুক্ত বিভিন্ন মাদ্রাসার পরিচালক ও শীর্ষ ওলামায়ে কেরাম।

সভায় এক প্রস্তাবে পটিয়া মাদ্রাসার সমস্যা সমাধানে দেশের বিশিষ্ট ওলামায়ে কেরামের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সমন্বয় কমিটি গঠিত হয়। 

অন্যদিকে হিফজ শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রীয় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ তাহফিজুল কুরআন সংস্থার সভাপতি হিসেবে আল্লামা সুলতান যওক নদভীর নাম প্রস্তাব করা হলে তা সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়, একই সঙ্গে মাওলানা এমদাদুল্লাহ নানুপুরীকে নির্বাহী সভাপতি ও মাওলানা মুহাম্মদ মুসলিম উদ্দীনকে সিনিয়র সহসভাপতি মনোনীত করা হয়।

আরও পড়ুন: পটিয়া মাদ্রাসায় এসে অবরুদ্ধ হেফাজত আমির, দুইপক্ষের সংঘর্ষ

 
Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম