Logo
Logo
×

সারাদেশ

দুবছর আগে পরকীয়া প্রেমিককে হত্যা, বিচ্ছেদের পর যেভাবে প্রকাশ

Icon

গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২৪, ১০:৩৫ পিএম

দুবছর আগে পরকীয়া প্রেমিককে হত্যা, বিচ্ছেদের পর যেভাবে প্রকাশ

নাটোরের গুরুদাসপুরে পরকীয়া প্রেমের জেরে খুন হয়েছিলেন মাফিজুল ইসলাম (২৮) নামের এক যুবক। দীর্ঘ ২৩ মাস পর নিহত যুবকের লাশের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। একটি বালিকা মাদরাসার টয়লেটের মেঝেতে পুঁতে রাখা লাশটি আদালতের আদেশে উত্তোলন করেছে পুলিশ।

হত্যাকাণ্ডের পর গত বছর স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীর বিচ্ছেদ ঘটে। পরে যৌতুক মামলায় জেলে যান স্বামী। কারাগারেই বিষয়টি একজনকে জানান স্বামী। পরে ওই ব্যক্তি জেল থেকে ছাড়া পেয়ে মাফিজুলের মাকে জানান। পরে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি জানাজানি হয়।

এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে চারজনকে অভিযুক্ত করে গুরুদাসপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহতের মা মাহিনুর বেগম।

হত্যাকাণ্ডের শিকার মাফিজুল ইসলাম গুরুদাসপুর পৌর সদরের চাঁচকৈড় খলিফা পাড়া মহল্লার আজাদ প্রামাণিকের ছেলে। তিনি পেশায় রঙ মিস্ত্রি ছিলেন।

হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গৃহবধূ তানজিলা (৩৫) ও তার পিতা নৈশপ্রহরী তাহের খলিফা ওরফে তারা খলিফা (৬৫), সাবেক স্বামী আল-হাবিব (৩৯) ও আরেক পরকীয়া প্রেমিক আশরাফুলকে (৪৫) পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

এর মধ্যে পালানোর সময় আসামি আশরাফুলকে বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকা থেকে শনিবার সকালে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এ সময় তার কাছ থেকে দুটি পাসপোর্ট, দুটি মোবাইল ও একটি চেক বই জব্দ করা হয়। আশরাফুল পৌর সদরের খামারনাচকৈড় মহল্লার আব্দুস সামাদের ছেলে। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১৫ বছর আগে তানজিলা তার স্বামী আল-হাবিবকে সঙ্গে নিয়ে আপন ছোটভাই সবুজকে (১০) খুন করেছিলেন। ওই মামলায় আল-হাবিব জেলহাজতে থাকা অবস্থায় আশরাফুলের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে যান তানজিলা। স্থানীয় একটি বেকারিতে চাকরির সুবাদে মাফিজুলের সঙ্গে আবারো পরকীয়ার সম্পর্ক গড়েন তিনি।

মাফিজুলের সঙ্গে প্রেমের বিষয়টি জানাজানি হলে ক্ষিপ্ত হন আল-হাবিব ও শ্বশুর তাহের খলিফা ও পরকীয়া প্রেমিক আশরাফুল। আল-হাবিব জামিনে বেরিয়ে এলে ২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল তানজিলা পরকীয়া প্রেমিক মাফিজুলকে ফোনে তার পিতার বাড়িতে ডেকে নেন। একপর্যায়ে তানজিলা, তার স্বামী আল-হাবিব, পিতা তাহের খলিফা এবং প্রেমিক আশরাফুল মাফিজুলকে শ্বাসরোধ এবং বুকের ওপর শাবল দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেন। রাতেই উপজেলার চাঁচকৈড় বালিকা দাখিল মাদ্রাসার নির্মাণাধীন টয়লেটের মেঝের বালু খুঁড়ে সেখানে লাশ পুঁতে রাখা হয়।

এ ঘটনায় নিহত মাফিজুলের পরিবারের পক্ষ থেকে ২০২২ সালের ৭ মার্চ গুরুদাসপুর থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। 

যেভাবে রহস্য উদঘাটন হলো

পুলিশ বলছে, হত্যাকাণ্ডের পর গত বছর তানজিলার সঙ্গে স্বামী আল-হাবিবের বিচ্ছেদ ঘটে। একপর্যায়ে তানজিলার দায়ের করা যৌতুকের মামলায় আবারো জেলহাজতে যান আল-হাবিব। জেলহাজতে আল-হাবিব গুরুদাসপুরের এক ব্যক্তির কাছে মাফিজুলকে হত্যার ঘটনা প্রকাশ করেন। ওই ব্যক্তি জেল থেকে বেরিয়ে এসে ঘটনাটি মাফিজুলের মাকে জানান। পরে মাফিজুলের মা বাদী হয়ে শুক্রবার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলার পর আসামিদের গ্রেফতার করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিশ্চিত হয়। একপর্যায়ে আসামিদের সাহায্যে লাশের সন্ধান পাওয়া যায়। শুক্রবার রাত থেকেই চাঁচকৈড় বালিকা দাখিল মাদ্রাসায় পুলিশ পাহারা বসানো হয়। পরে আদালতের আদেশে রোববার বেলা ১১টার দিকে উত্তোলন করা হয়।

মামলার বাদী মাহিনুর বেগম বলেন- তানজিলা তার ছেলের সঙ্গে গুরুদাসপুরের মাহি বেকারিতে চাকরি করতেন; কিন্তু আসামি আশরাফুলের সঙ্গে আগে থেকেই তানজিলার পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এ কারণে পরিকল্পিতভাবে তার ছেলে মাফিজুলকে রাতের বেলা বাড়িতে ডেকে নিয়ে হত্যা করেছে আসামিরা। তিনি আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।

স্থানীয় কাউন্সিলর শেখ ফরিদ বলেন, মাফিজুলের সঙ্গে তানজিলার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠায় ক্ষিপ্ত ছিলেন পরকীয়া প্রেমিক আশরাফুলও। মূলত পরিকল্পিতভাবে মাফিজুলকে খুন করেছেন আসামিরা।

গুরুদাসপুর থানার ওসি মো. উজ্জ্বল হোসেন বলেন, যেখানে লাশটি পুঁতে রাখা হয়েছে সেখানে রাতভর পুলিশ পাহারা বসানো হয়।

সিংড়া-গুরুদাসপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, মামলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তারা আসামিদের গ্রেফতার করেছেন। পুলিশ হেফাজতে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আদালতের নির্দেশে রোববার লাশটি উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম