কলেজছাত্র খুনের ঘটনা নিয়ে দুদল গ্রামবাসীর সংঘর্ষে শতাধিক আহত
নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৬:৫১ পিএম
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে কলেজছাত্র খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামবাসীর লোকজনের মধ্যে তিন ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে হয়েছে। এ সময় শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এতে পুলিশসহ উভয়পক্ষের অন্তত শতাধিক লোকজন আহত হয়েছেন। ভাঙচুর করা হয়েছে মার্কেটসহ বিভিন্ন দোকানপাট।
বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত নবীগঞ্জ শহরের নতুনবাজার এলাকায় টানা সংঘর্ষ চলে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের ১৪ জনকে আটক করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কলেজছাত্র রাইসুল হক তাহসিন খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে কুর্শি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খালেদুর রহমান খালেদের লোকজন ও আনমনু গ্রামের লোকজনের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। এ ঘটনার জের ধরে সন্ধ্যায় আনমনু গ্রামের লোকজন ইউপি চেয়ারম্যান খালেদুর রহমানের মালিকানাধীন মার্কেট রাজা কমপ্লেক্স ভাঙচুর করে।
খবর পেয়ে ইউপি চেয়ারম্যান খালেদের অনুসারী ও এনাতাবাদ গ্রামের লোকজন রাজা কমপ্লেক্সে জড়ো হন। পরে কুর্শি ইউনিয়নের এনাতাবাদ গ্রামের লোকজন ও আনমনু গ্রামের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে। দফায় দফায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে উভয়পক্ষ। ভাঙচুর করা হয় রাজা কমপ্লেক্সসহ ২০টি দোকানপাট। অগ্নিসংযোগ করা হয় একটি মোটরসাইকেলে।
শহর পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। দফায় দফায় টিয়ারশেল-রাবার বুলেট নিক্ষেপের পরও নবীগঞ্জ থানা পুলিশের নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যায় পরিস্থিতি। টানা ৩ ঘণ্টা চলে সংঘর্ষ।
পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুপম দাস অনুপ, সার্কেল এএসপি আবুল খায়ের, সহকারী কমিশনার ভূমি শাহীন দেলোয়ারসহ বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের শতাধিক লোকজন আহত হন।
আহতদের নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
কুর্শি ইউপি চেয়ারম্যান খালেদুর রহমান খালেদের অভিযোগ, গত মঙ্গলবার কলেজছাত্র তাহসিনকে হত্যার পূর্বে প্রথমে আমার মার্কেটে ভাংচুর ও মারধর করা হয়, পুলিশকে সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ দিতে চাইলে আনমনুর লোকজন আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়, পরে আনমনুর কিছু লোকজন ক্যামেরা ফুটেজের হার্ডড্রাইভ ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে, এ সময় স্থানীয় লোকজন এ ঘটনা প্রতিহত করে। পরে আমার মালিকানাধীন মার্কেট রাজা কমপ্লেক্স তারা ভাংচুর করে।
আনমনু গ্রামের কাউন্সিলর নানু মিয়া জানান, চেয়ারম্যান খালেদ আনমনু গ্রামকে জড়িয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন ও উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলেন; এ ঘটনার প্রতিবাদ করেন আনমনু গ্রামের লোকজন। এ নিয়ে পরে সংঘর্ষ হয়।
নবীগঞ্জ থানার ওসি মো. মাসুক আলী বলেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৪৫ রাউন্ড টিয়ারশেল ও ১৫ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করা হয়। এ ঘটনায় ওসি তদন্ত গোলাম মুর্শিদ, এসআই পরিমলসহ ৭ জন আহত হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে, শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় উভয়পক্ষের ১৪ জনকে আটক করা হয়েছে।