চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে কারসাজি, কেজিতে ১০ টাকা বাড়ল চিনির দাম
আহমেদ মুসা, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:৩৬ পিএম
কোনো কারণ ছাড়াই দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে চিনির দাম বেড়েছে। খুচরা বাজারে কেজিতে দাম বেড়েছে ১০ টাকার বেশি। আর পাইকারি বাজারে প্রতি মনে দাম বেড়েছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত।
চট্টগ্রামে চিনি এখন সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে চিনির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৫২ টাকায়। অথচ ২ দিন আগেও চিনির কেজি ছিল ১৪০ থেকে ১৪২ টাকা। চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় আরও অতিরিক্ত দামে চিনি বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে।
শুল্ক ছাড় ও বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর কঠোর হুঁশিয়ারির পরও দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ভোগ্যপণ্যের দামে কোনো প্রভাব নেই। ঠিক আগের মতোই অতিরিক্ত দামে ভোগ্যপণ্য বিক্রি হচ্ছে।
এমনকি শুল্ক ছাড়ের পর উলটো চিনির দাম একদফা বেড়েছে। চিনির দাম কমাতে ৩ মাসের ব্যবধানে দুই দফায় কমানো হয়েছে আমদানি শুল্ক। এরপরও কমেনি দাম।
সর্বশেষ ৮ ফেব্রুয়ারি আমদানি শুল্ক কমানোর পর দাম বেড়েছে। আসন্ন রমজান ও গ্রীষ্মকালীন মৌসুমে চিনির বাড়তি চাহিদাকে পুঁজি করে দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা।
সবজির দাম কিছুটা কমলেও মাংসের দাম আগের মতোই রয়েছে।
ভোক্তাদের অভিযোগ, সরকার কোনো পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ালে ব্যবসায়ীয়রা মিনিটের মধ্যে দাম বাড়িয়ে দেন। আর শুল্ক কমালে, কিংবা ছাড় দিলে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম কমান না। সরকার নির্ধারিত দাম কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকে। নির্ধারিত দাম বাজারে কার্যকর হয়েছে কিনা, তা যাচাই-বাছাই করারও যেন কেউ নেই।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের চিনি ব্যবসায়ীরা জানান, বৃহস্পতিবার চিনির দাম কেজিতে ২০ টাকা বাড়িয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি)। এর কয়েক ঘণ্টা পরই এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সরকার। জনগণের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে চিনির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত বদলানো হয় বলে জানানো হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রতি কেজি সরকারি মিলের চিনির সর্বোচ্চ খুচরা দাম কেজিতে ২০ টাকা বাড়িয়ে ১৬০ টাকা নির্ধারণ করে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি)। একই হারে বাড়ানো হয়েছে মিলগেট রেটও। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) বিজ্ঞপ্তি জারির সঙ্গে সঙ্গে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের চিনির ব্যবসায়ীরাও চিনির দাম বাড়িয়ে দেন।
কিন্তু ৬ ঘণ্টা পর সেই বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করা হলেও ব্যবসায়ীরা চিনি আগের দামে বিক্রি করছেন না। সরকার দাম বাড়িয়েছে অজুহাতে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছেন।
পাইকারি বাজারে মনপ্রতি (৩৭.৩২ কেজি) বুধবার ছিল ৫ হাজার ১০০ টাকার মতো। বৃহস্পতিবার রাত থেকে প্রতি মনে ২০০ টাকার বেশি বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি চিনিতে দাম বেড়েছে ৪ টাকার বেশি। খুচরা বাজারে চিনির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৫২ টাকায়। অথচ ২ দিন আগেই চিনির কেজি ছিল ১৪০ থেকে ১৪২ টাকায়।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় আরও অতিরিক্ত দামে চিনি বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এছাড়া বেশকিছু ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। প্রতি কেজি ছোলার ডাল ১০০ থেকে ১১০ টাকা, অ্যাংকর ডাল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, ডাবলি ৭৫ টাকা, মোটা দানার মসুর ১০৫ থেকে ১১০ টাকা, চিকন মসুর ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা, মোটা দানার মুগ ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা, চিকন মুগ ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা ও খেসারি ১০৫ থেকে ১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য পণ্যের মধ্যে খোলা আটা ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, প্যাকেট আটা ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা, খোলা ময়দা ৬৫ থেকে ৭০ টাকা এবং প্যাকেট ময়দা ৭৫ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
খাতুনগঞ্জের চিনি ব্যবসায়ী কামরুল হাসান জানান, আমদানিকারকরা চিনির দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এতে পুরো চট্টগ্রামে চিনির বাজারে প্রভাব পড়ছে। উত্তপ্ত হচ্ছে চিনির বাজার। আমদানিকারকদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে না। চিনির বাজার আমদানিকারকদের হাতে জিম্মি।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসেন যুগান্তরকে বলেন, চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে চিনির দাম নির্ধারিত হচ্ছে না। চিনির দাম নিয়ন্ত্রণ করছে সিন্ডিকেট। এ কারণে দাম বাড়ছে। এছাড়া দেশে হাতেগোনা কয়েকটি গ্রুপ চিনির পরিশোধন ও বিপণনের সঙ্গে জড়িত। সরকার চাইলে এসব কোম্পানিকে নজরদারির মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সে সবের কিছুই হচ্ছে না।