Logo
Logo
×

সারাদেশ

৭০ বছর আগে হারানো পরিবারকে চট্টগ্রামে খুঁজে পেলেন মার্কিন নাগরিক

Icon

সন্দ্বীপ (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা

প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০২:৪৮ পিএম

৭০ বছর আগে হারানো পরিবারকে চট্টগ্রামে খুঁজে পেলেন মার্কিন নাগরিক

১৯৪৭ সালের হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার প্রকোপ থেকে বাঁচার তাগিদে রাতের অন্ধকারে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ওপার বাংলায় পাড়ি জমান চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার প্রিয়লাল মিত্র। সঙ্গে ছিল ৫ বছরের ছোট্ট শিশু নান্টু। 

প্রায় ৭০ বছর পর চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলায় এসে গত ২০ ফেব্রুয়ারি নাটকীয়ভাবে পরিবারের সদস্যদের খুঁজে পান নান্টু। এ যেন সিনেমার কাহিনিকেও হার মানায়।

নান্টুর ভালো নাম নারায়ণ মিত্র। থাকেন আমেরিকার নিউইয়র্কে। পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। ১৯৪৭ সালে তার বয়স পাঁচ বা ছয়। দেশভাগের সময় মাকে ছাড়াই বাবা প্রিয়লাল মিত্রের হাত ধরে নিজ জন্মস্থান সন্দ্বীপ ছেড়ে ভারত চলে যান নান্টু। পরে উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমান আমেরিকায়। 

বাবা মারা যান অনেক বছর আগে। বিভিন্ন সময় তিনি পরিবারকে খুঁজে বেড়িয়েছেন। অবশেষে বৃদ্ধ বয়সে এসে তিনি তার হারানো পরিবারের খোঁজ পেয়েছেন। সম্প্রতি ফেসবুকে একটা পোস্টের মাধ্যমে তিনি তার নিজের পরিবারকে ফিরে পেয়েছেন।

আপনজনদের খুঁজে পেয়ে দারুণ খুশি নারায়ণ মিত্র। তিনি বলেন, আমি প্রায়ই আমার শৈশবের স্মৃতি স্বপ্নে দেখতাম, আমাকে হাত বাড়িয়ে কে যেন ডাকছে। তখন আমি মনস্থির করি মৃত্যুর আগে একবারের জন্য হলেও সন্দ্বীপ যাব। কিন্তু কীভাবে যাব? কার কাছে যাব? সাহস পেতাম না।

নারায়ণ মিত্রের সঙ্গে বাংলাদেশে এসেছিলেন তার স্ত্রী শ্রাবণী মিত্র। তিনি জানান, মূলত আমেরিকায় বসবাসরত আতাউর বাবুলের উৎসাহেই তারা সন্দ্বীপে আসার সাহস পান। পরিকল্পনা ছিল সন্দ্বীপে এসে ঘণ্টাখানেক ঘোরাফেরা করে ফিরে যাবেন। 

এরই মধ্যে পরিচয় হয় যুগান্তরের সন্দ্বীপ উপজেলা সংবাদদাতা শামসুল আজম মুন্নার সঙ্গে। তিনি পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে সহায়তা করবেন বলে মনস্থির করেন। স্বজনদের খুঁজে বের করার জন্য মুন্নার সংকল্প শুনে নারায়ণ মিত্র শুধু গ্রামের নাম রহমতপুর এবং বাবার নামটা বলতে পারেন। 

পরে সংবাদিক মুন্না তাদের নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ভূমি কর্মকর্তার নিকট সাহায্য চান। কিন্তু টানা দুই ঘণ্টা অতীতের পুরনো দলিল দস্তাবেজ ঘেঁটেও পাওয়া যায়নি মিত্র পরিবারের সন্ধান। চোখেমুখে যখন অন্ধকার, তখনই আশার আলো জাগায় মুন্নার ফেসবুক স্ট্যাটাস। 

শওকত আলী ও দুবাই প্রবাসী আকতারের দেওয়া সূত্র ধরে মিত্র দম্পতিকে সঙ্গে নিয়েই এগোতে থাকেন মুন্না। একের পর এক তথ্যের জাল ভেদ করে রহমতপুরের ৩নং ওয়ার্ডস্থ মহাজনপাড়ায় মিত্র পরিবারের কয়েকজন সদস্যের সন্ধান পাওয়া যায়। ভাঙনের কবলে ভিটামাটি সমুদ্রগর্ভে বিলীন হওয়ার পর এখানে নীরবে জীবন কাটাচ্ছেন মিত্র পরিবারের বাকি সদস্যরা। 

দুই পক্ষের কথোপকথনে উভয়ই নিশ্চিত হন যে তারা একই পরিবারের সদস্য। জলবায়ু উদ্বাস্তু জীবনের দুঃখ-কষ্টের মাঝেও পরিবারের সদস্যকে খুঁজে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা অন্য সদস্যরা। 

ছলছল চোখে নারায়ণ মিত্র বলেন, 'আমার শৈশবের স্মৃতি আমাকে স্বপ্নে হাত বাড়িয়ে ডাকছিল, অবশেষে সন্দ্বীপে আসতে পেরেছি। এখনো এটা আমার কাছে স্বপ্নই মনে হচ্ছে। জীবন সায়াহ্নে সন্দ্বীপের মাটি ছুঁতে পেরেছি, এখন যেন মরেও শান্তি পাব। '

তিনি আরও বলেন, 'একজন আইটি প্রফেশনাল হিসাবে আমি চাই সন্দ্বীপের ছেলেমেয়েরা আইটিতে দক্ষ হয়ে উঠুক। আমি সন্দ্বীপের মানুষের জন্য কিছু করতে চাই।'

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম