Logo
Logo
×

সারাদেশ

ভাষাসৈনিক আবদুস সাত্তারের গৌরবময় অবদানের কিছুই জানে না তরুণ প্রজন্ম

Icon

আমানুল হক আমান, বাঘা (রাজশাহী)

প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:২০ এএম

ভাষাসৈনিক আবদুস সাত্তারের গৌরবময় অবদানের কিছুই জানে না তরুণ প্রজন্ম

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানীর ভাষাসৈনিক আবদুস সাত্তারের গৌরবময় অবদানের কিছুই জানে না তরুণ প্রজন্ম। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় তার ছিল সক্রিয় অবদান। তিনি ছিলেন ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্বে।

প্রবীণরা ভাষাসৈনিক আবদুস সাত্তারকে নিয়ে গৌরববোধ করলেও তরুণ প্রজন্ম তার কথা, ভাষা আন্দোলনে তার গৌরবময় অবদানের বিবরণ কিছুই জানে না। ফেব্রুয়ারি মাসে বিভিন্ন সংগঠন নানা আয়োজন করলেও কোনো সরকারি বা বেসরকারি সংগঠনের আয়োজিত কোনো অনুষ্ঠানে এ ভাষা সৈনিকের কথা উল্লেখ করতে তেমন একটা দেখা যায় না। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে তৎকালীন সময়ে সক্রীয় ও কার্যকর ভূমিকা রেখেছিলেন আবদুস সাত্তার। তার স্ত্রী মরহুম হামিদা বেগম সব সময় পাশে থেকে সহযোগিতা করেছেন।

জানা যায়, আবদুস সাত্তার ১৯২১ সালে রাজশাহী হেতেম খাঁন চৌধুরী পুকুর পাড়ে জন্ম গ্রহণ করেন। ছাত্রজীবনে সব পরীক্ষায় বৃত্তি লাভ করেন তিনি। কিন্তু পিতার জিয়াউর রহমানের জন্ম ভূমি ছিল বাঘা উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের ভারালীপাড়া গ্রামে। শৈশবে তিনি মাতৃহারা হন। শিুশুকালে আত্মীয়রা তাকে প্রথমে রাজশাহী সরকারি মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেন। কিন্তু আবদুস সাত্তারের ইংরেজিতে প্রচণ্ড ঝোঁক ছিল। তাই তিনি নিজেই রাজশাহী কলিজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন। এখান থেকে তিনি ১৯৩৮ সালে প্রথম বিভাগে মেট্রিক, ১৯৪০ সালে আইএ এবং ১৯৪৩ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। এর পর তিনি জলপাইগুড়ির জুয়ার্ডে চা বাগানের ম্যানেজার পদে চাকরি শুরু করেন। ছোট কাল থেকে ছিলেন তিনি প্রতিবাদী। এ সময় তিনি শ্রমিকদের নানা সমস্যার কথা মালিকের কাছে তুলে ধরনে। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পূর্বকালে মালিক পক্ষের লোকজন তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে, মর্মে বুঝতে পেরে ১৯৪৯ সালে চাকরি ছেড়ে রাজশাহীতে চলে আসেন। এর পর তিনি কিছুদিন ছিলেন বেকার। এরমধ্যে শুরু ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন। এই ভাষা আন্দোলনে তার ছিল সক্রীয় ভূমিকা। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভুমন মোহন পার্কে অন্যায়, অবিচার ও অনিয়মের প্রতিবাদ বিশাল জনসভায় সক্রিয় বক্তব্য রাখেন। পরে তিনি গ্রেফতার হন। জামিনে মুক্তি পেয়ে তিনি ১৯৫৩ সালে আড়ানী মনোমোহী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মধ্য দিয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। এর পর আড়ানীতে বসবাস শুরু করেন। তবে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে তার সক্রিয় ভূমিকা ছিল। তিনি ১৯৫৮ সালে আড়ানী ইউনিয়ন পরিষদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৬০ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। এর পর থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত সামাজিক শাসন বিরোধী বিভিন্ন আন্দোলনে তার ছিল অগ্রনী ভূমিকা। এরমধ্যে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। তখন তিনি বয়সের ভারে নিজ বাড়ি থেকে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন। বার্ধক্য জনিত কারনে তিনি ১৯৭২ সালের ২৩ অক্টোবর শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করেন। তার ১০ সন্তান রয়েছে। এরমধ্যে ৪ ছেলে ও ৬ মেয়ে রয়েছে। তার সন্তানরাও বর্তমানে বিভিন্ন সামাজিক কাজে লিপ্ত রয়েছেন।

তবে তার কর্মময় জীবনে শিক্ষকতার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সমগ্র রাজশাহীসহ সারা দেশে ছড়িয়ে আছে তার অসংখ্য গুণগ্রাহী ছাত্র-ছাত্রী।

ভাষা সৈনিক আবদুস সাত্তার সম্পর্কে কথা হয় তার বড় ছেলে সাবেক জনতা ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত এজিএম আলী আর্সলান অপু অনেকটা আক্ষেপের সুরে বলেন, গুণিজনদের কথা তাদের ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে আলোচনা, তাদের স্মরণ করা বা তাদের মূল্যায়ন করা না হলে আগামী প্রজন্মের কাছে হারিয়ে যাবে আমাদের অনেক গুণিজনের আত্মত্যাগের কথা। ভাষা সৈনিকসহ দেশের জন্য যাদের অবদান তাদের চেতনা ধরে রাখতে হলে সেসব গুণিজনদের কথা প্রতিনিয়ত নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে। প্রবীনরা আমার বাবাকে নিয়ে গর্ব করলেও নতুন প্রজন্মরা কিছুই জানে না।

স্থানীয় হোমিও চিৎসক মেজো ছেলে আলপ আর্সলান অনু বলেন, বাবার কবর এখনো সরকারিভাবে কোন বাধায় করা হয়নি। তাকে কোনো স্বীকৃতিও দেওয়া হয়নি। তার নামে কোনো সড়ক নামকরণ করা হয়নি। বাবাকে স্বীকৃতি দিয়ে স্থানীয়ভাবে কোনো একটি সড়কের নাম করণ করা হলেও মনে শান্তি পেতাম।

এ বিষয়ে ছোট মেয়ে রাজশাহী উকিল বারের সদস্য অ্যাডভোকেট শামীম উম্মুল ছালেহিন ইশারা বলেন, জাতীয় পর্যায়ে না হলেও জেলা পর্যায়ে ভাষা সৈনিককে আগামী প্রজন্মের কাছে বাঁচিয়ে রাখতে শিক্ষা ক্ষেত্রে ভাষা সৈনিকদের স্বরণ করা হলে আমরা গর্বিত হবো। এছাড়া ভাষার মাসে জেলায় যে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, সেখানে প্রতিটি ভাষা সৈনিকের ভূমিকা ছিল তা নিয়ে আলোচনায় স্মরণ করা উচিত।

এ বিষয়ে বাঘা শাহদৌলা সরকারি ডিগ্রি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন নবাব বলেন, ভাষা আন্দোলনে আবদুস সাত্তার স্যার তার গৌরবময় অবদানের কথা তরুণ প্রজন্ম জানে না। স্থানীয়ভাবে স্বরণ করার ব্যবস্থা করলে নতুনরা তা জানতে পারবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম